তিহাড় জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ধীরে ধীরে বীরভূমের রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল। এ বার তাঁর উপরে মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞা বিধানসভা এলাকার দায়িত্বও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুব্রত বরাবর মমতার ‘আশীর্বাদধন্য’ নেতা। অনুব্রতকে ‘কেষ্ট’ বলে ডাকেন তৃণমূলের সর্ব্বোচ্চ নেত্রী। সেই কেষ্টর হাতেই তিনি তুলে দিয়েছেন বড়ঞার দায়িত্ব। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত এই দায়িত্বে থাকবেন কেষ্ট।
২০২১ সালে প্রথম বার বড়ঞা বিধানসভায় জিতেছিল তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থী অমিয়কুমার দাসকে ২,৭০০ ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী জীবনকৃষ্ণ সাহা।
সেই জীবনকৃষ্ণ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ১৩ মাস কারাবন্দি ছিলেন। জামিন পেয়ে জনপ্রতিনিধির ‘স্বাভাবিক’ কাজকর্ম শুরু করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতিতে বড়ঞার রাজনৈতিক জমিতে বিজেপি থাবা বসিয়েছে বলেই জেনেছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রমাণস্বরূপ লোকসভা ভোটের ফলাফলকে ‘মাপকাঠি’ হিসাবে দেখছেন তাঁরা। লোকসভা ভোটের নিরিখে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের দুই ওজনদার প্রার্থী কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী এবং তৃণমূলের ইউসুফ পাঠান ময়দানে থাকলেও বড়ঞা বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী চিকিৎসক নির্মলচন্দ্র সাহা ৫৫৮ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। সেই অল্প ভোটে পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি নজরে আসতেই কেষ্টকে বড়ঞার দায়িত্বে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন মমতা। বিধানসভা নির্বাচনে যাতে বড়ঞা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের কোনও উৎকণ্ঠা না থাকে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতেই অনুব্রতকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে তেমনই খবর।
আরও পড়ুন:
শুধু লোকসভা নির্বাচনে পিছিয়ে পড়া নয়, বড়ঞা বিধানসভা নিয়ে তৃণমূলের সর্ব্বোচ্চ নেত্রীর দুর্ভাবনার আরও কারণ রয়েছে বলেই জানাচ্ছেন মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের এক নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে জেলে ছিলেন। বিধানসভা ভোটে বিজেপি বা অন্য বিরোধী দল এই বিষয়টিকেই সামনে রেখে প্রচার করবে। সেই প্রচারের মোকাবিলা করতে হবে পাল্টা প্রচার এবং জোরালো সংগঠন দিয়ে। তাই মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের নেতারা থাকা সত্ত্বেও বড়ঞায় অনুব্রতকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’
কেষ্টকে তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে দায়িত্বে পাঠানোর কথা জানানো হয়েছে বিধায়ক জীবনকৃষ্ণকেও। দায়িত্ব পাওয়ার পরেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে কথাও বলেছেন অনুব্রত। বড়ঞার বিধায়ক বলেন, ‘‘কেষ্টদার মতো দক্ষ নেতাকে দিদি আমার বিধানসভার দায়িত্বে পাঠিয়েছেন। আমি দলের নির্দেশ মেনেই কাজ করব। কেষ্টদার সঙ্গে আমার পরিচয় দীর্ঘ দিনের। তাই কাজ করতে সুবিধাই হবে।’’
মুর্শিদাবাদ তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তফসিলি সংরক্ষিত বড়ঞা আসনের জন্য যখন উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছিল না তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাক, তখন জীবনকৃষ্ণের নাম তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে সুপারিশ করেছিলেন অনুব্রতই। কারণ, রাজনৈতিক ভাবে জীবনকৃষ্ণ মুর্শিদাবাদ তথা বড়ঞার তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হলেও কর্মসূত্রে তাঁর যোগ রয়েছে বীরভূম জেলার সঙ্গে। ২০১২ সাল থেকে বীরভূমের নানুর বিধানসভা এলাকার দেবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যুক্ত জীবনকৃষ্ণ। সেই সুবাদেই বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রতের সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ যোগাযোগ।
একদা অনুব্রতের ঘনিষ্ঠদের মধ্যেই বিবেচিত হতেন জীবনকৃষ্ণ। তবে অনুব্রতের জেলযাত্রা থেকে সেই যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত জীবনকৃষ্ণকে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল গ্রেফতার করে সিবিআই। ২০২৪ সালের ১৪ মে তিনি জামিন পান। তার পরেই বড়ঞা কেন্দ্র এবং বিধানসভায় গিয়ে ‘স্বাভাবিক’ কাজকর্ম শুরু করেছেন তিনি। মমতা বড়ঞা বিধানসভা এলাকার দায়িত্ব কেষ্টকে দেওয়ার পরেই আবার জীবনকৃষ্ণর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে অনুব্রতের।