ফাইল চিত্র।
রাত তখন পৌনে আটটা। রবিবার রাতে এক পরিচিতের ফোন ঢুকল মোবাইলে। ও প্রান্তে কাতর আবেদন— ‘‘দাদা, বড় বিপদে পড়ে ফোন করছি। একটা অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুব দরকার! জোগাড় করতে পারছি না।’’
ও প্রান্তের মানুষটির স্ত্রী ও মা দিন দুয়েক হল কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন, সে খবর আগেই পেয়েছি। এ দিন জানলাম, তাঁর স্ত্রীয়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। ‘‘অক্সিমিটার দেখাচ্ছে ৯০। অক্সিজেন দরকার এক্ষুণি!’’
কোভিড আক্রান্ত বয়স্ক মা-কে বাড়িতে একা ফেলে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছেন না তিনিয় অতএব, চিকিৎসকের পরামর্শ মাফিক বাড়িতেই অক্সিজেন দিতে চান। কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচ্ছেন না। ফোনে বললেন, ‘‘‘একে-ওকে ফোন করেও জোগাড় করা গেল না অক্সিজেন সিলিন্ডার। আর দু’-এক জায়গায় পাওয়া গেলেও করোনা আক্রান্তের বাড়ি আসবেন কে!’’
ফোনটা আসার পরে আমিও লেগে পড়লাম অক্সিজেনের খোঁজে। ফোন ঘোরালাম বেশ কয়েক জায়গায়। কিন্তু কেউ বললেন, ‘‘দোকান বন্ধ, এখন পাব না।’’, কেউ বললেন, ‘‘পেলেও কোভিড আক্রান্তের বাড়ি দিয়ে আসা যাবে না।’’ কেউ আবার এক পা এগিয়ে পরামর্শ দিলেন, ‘‘সোজা সরকারি হাসপাতালে চলে যেতে বলুন।’’ কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা হল না। এ দিকে, পরিচিতও ফোন করে চলেছেন, ‘‘কিছু ব্যবস্থা হল দাদা?’’ আমি ‘না’ শব্দটা বলতে গিয়ে বার বার থমকে যাচ্ছি। বলছি, ‘‘আর একটু দেখে জানাচ্ছি।’’
একা গোটা রাত এ ভাবেই কাটল। কিন্তু অক্সিজেন জোগাড় হল না। ফোনে একের পর এক নম্বর ডায়াল করে চলেছি। সব জায়গা থেকে এক উত্তর, ‘‘হবে না।’’ রাত কীভাবে কাটবে, বুঝতে পারছি না। গভীর রাতে কিছুটা স্বস্তি। জানলাম, চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেয়ে শ্বাসকষ্ট কমেছে কিছুটা। কিন্তু অক্সিজেন তো বাড়িতে রাখতেই হবে।
সকাল হতেই আবার খোঁজ শুরু করলাম। শহরের বিভিন্ন ওষুধের দোকান থেকে সিলিন্ডার সরবরাহ করার ঘর— কোত্থাও বাদ দিইনি। সরকারি হাসপাতাল বা বেসরকারি নার্সিংহোম বাদে কোথাও অক্সিজেন মিলছে না কৃষ্ণনগরে। খুব পরিচিত হলে যা-ও অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে রাজি হচ্ছেন কেউ কেউ, কিন্তু কোভিডের নাম শুনলেই এড়িয়ে যাচ্ছেন।
অক্সিজেনের একটা সিলিন্ডার জোগাড় হল অবশেষে সোমবার। কিন্তু ওই কোভিড হয়েছে শুনে ওই বাড়িতে তা পৌঁছে দিতে রাজি হলেন না কেউ। অগত্যা আমার ঘরে এনেই রেখেছি। এক জন আসার কথা পৌঁছে দেওয়ার জন্য, দেখা যাক কী হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy