এসআইআর (ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন)-বিরোধী আমরণ অনশন কর্মসূচির মঞ্চ। চলছে বুধবার থেকে। উদ্যোক্তা রাজ্যসভার সাংসদ তৃণমূলের মমতা ঠাকুরের ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’। উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে সে কর্মসূচিতে শামিল হয়েছেন মতুয়া ভক্তেরা। গত তিন দিনে মমতা ঠাকুর বা স্থানীয় তৃণমূলের কোনও নেতা-নেত্রীকে দেখা যায়নি মঞ্চে। তবে শুক্রবার দেখা গেল সিপিএমের রাজ্য নেতা সুজন চক্রবর্তী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারকে। মঞ্চে সিপিএম-কংগ্রেস নেতাদের এই উপস্থিতি তথা মতুয়াদের ‘পাশে থাকার বার্তা’ রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধিতায় নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত করছে বলে পর্যবেক্ষকদের অনুমান।
মমতা ঠাকুর এ দিন ফোনে বলেন, “অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের কর্মসূচি। কাউকে নিষেধ করতে পারি না। সিপিএম-কংগ্রেস এসেছে, তাদের স্বাগত।” তবে সূত্রের খবর, এসআইআরের প্রেক্ষিতে মতুয়ারা এখন যে সমস্যায় পড়েছেন, সেই পরিস্থিতিতে অ-বিজেপি দলগুলির কাছে ‘স্বাগত-বার্তা’ গিয়েছিল সঙ্ঘের তরফেই। এক সময়ে বামেরা মতুয়াদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলতেন। ইদানীং কংগ্রেস নেতা-নেত্রীদের ঠাকুরবাড়িতে আনাগোনা বেড়েছে। এসআইআর-আবহে এ বার তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ মতুয়া শিবিরে দেখা গেল তাঁদের। শুভঙ্কর বলেন, “মতুয়া সমাজের দাবির প্রতি আমরা সংবেদনশীল। এই লড়াই তাঁদের অস্তিত্বের।” সুজনের কথায়, “রাজনীতির জন্য নয়, মতুয়া সমাজের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে পাশে দাঁড়াতে এসেছি।”
ঠাকুরবাড়িতে এ দিন দুপুরে পৌঁছন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেস (গ্রামীণ) সভাপতি ইন্দ্রাণী দত্ত চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা অনশন মঞ্চে গিয়ে অনশনকারীদের পাশে বসেন। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সুকেশচন্দ্র চৌধুরী কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে অনুরোধ জানান, রাহুল গান্ধী যেন অনশন মঞ্চে আসেন। কংগ্রেস যদি আগামী দিনে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে, রাহুল গান্ধীকে ঠাকুরবাড়িতে আনা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন শুভঙ্কর। অমিতাভ বলেন, ‘‘দেশভাগ এবং বাংলাদেশের মুক্তির পরে, কংগ্রেস শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিয়েছিল। ধর্ম বা কাগজের নামে কংগ্রেস মানুষকে ভয় দেখায়নি।’’ ইন্দ্রাণী বলেন, ‘‘ভোটার তালিকা থেকে যদি এক জনও মতুয়া বা উদ্বাস্তুর নাম বাদ যায়, দিল্লি গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ঘেরাও করব।”
বিকেল নাগাদ অনশন মঞ্চে পৌঁছন সিপিএম নেতা সুজন। বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের নাম না করে তিনি বলেন, “যাঁদের ভোটে জয়ী হলেন, তাঁদের রোহিঙ্গা বলে অপমান করেছিলেন। প্রমাণ দিতে না পারলে প্রকাশ্যে ওঠ-বোস করে ভুল স্বীকার করুন।” সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের পক্ষ থেকে একটি বার্তা মতুয়া মহাসঙ্ঘের হাতে তুলে দেওয়া হয় এ দিন।
তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আর একটি ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের টিপ্পনী, ‘‘ওঁদের চালও নেই, চুলোও নেই। কী বলছেন, তার গুরুত্বও নেই।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)