Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
flood

Tomato: বন্যার ধাক্কায় সেঞ্চুরি টোম্যাটোর

পশ্চিমবঙ্গে আনাজের দাম নিয়ন্ত্রক টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে জানালেন, দক্ষিণে বন্যার ধাক্কায় টান পড়েছে আনাজ সরবরাহে। ফলে ভুগতে হচ্ছে বাংলাকেও।

‘রান্নাঘরে ১৪৪ ধারা!’

‘রান্নাঘরে ১৪৪ ধারা!’ ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২১ ০৬:০৮
Share: Save:

এ কি টোম্যাটো, না পেট্রোল? প্রশ্নটা ঘুরছে গোটা দক্ষিণ ভারতে। এমনকি বঙ্গেও। খলনায়কের ভূমিকায় অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক ও তামিলনাড়ুর সাম্প্রতিক বন্যা। নষ্ট হয়েছে প্রচুর ফসল। তার জেরে চেন্নাই, বেঙ্গালুরুর মতো দক্ষিণী শহরের খুচরো বাজারে টোম্যাটোর দাম ১১০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে ঘোরাফেরা করছে। কলকাতা ও শহরতলির কিছু এলাকা, এমনকি লাগোয়া জেলাতেও টোম্যাটোর দাম লাফিয়ে বাড়ছে। দাম চড়ছে ক্যাপসিকামেরও।

উত্তর ২৪ পরগনার বাগুইআটি এলাকার এক বাসিন্দা জানালেন, আজ তিনি টোম্যাটো কিনেছেন ১০০ টাকা কেজি দরে। দিন কয়েক আগেও এখানে টোম্যাটোর খুচরো দর ছিল ৮০ টাকা কেজি, তারও আগে ৫০। কোন্নগরের এক বাসিন্দা দু’দিন আগে সেখানে ১৫০ টাকা কেজিতে টোম্যাটো কিনেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের বাজারে টোম্যাটোর খুচরো দাম একটু কম, ৭৫ টাকা কেজি।

পশ্চিমবঙ্গে আনাজের দাম নিয়ন্ত্রক টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে জানালেন, দক্ষিণে বন্যার ধাক্কায় টান পড়েছে আনাজ সরবরাহে। ফলে ভুগতে হচ্ছে বাংলাকেও। তিনি বলেন, ‘‘টোম্যাটো প্রধানত আসে বেঙ্গালুরু থেকে। দক্ষিণ ভারতে ব্যাপক বন্যা। তার ফলে টোম্যাটো শুধু নয়, দক্ষিণ ভারতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, বিনস— সবই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাজ্যে বাঁধাকপি-ফুলকপি ওঠা শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে তার সঙ্কটটা আমরা অনুভব করছি না। কিন্তু টোম্যাটো তো আমাদের নেই। (কলকাতার) পাইকারি বাজারে টোম্যাটোর দাম যাচ্ছে প্রতি কেজি ৬০-৬২ টাকা। খুচরোতে কলকাতার বাজারগুলি ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে টোম্যাটো বিক্রি করছে।’’

বন্যার জন্য বেঙ্গালুরু থেকে পশ্চিমবঙ্গে ক্যাপসিকাম আসাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কলকাতায় এ দিন পাইকারি বাজারে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে ক্যাপসিকাম। খুচরো দাম ১০০ টাকা। কমলবাবু অবশ্য জানান, বাংলার ক্যাপসিকাম ওঠা শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে এই দাম দু’এক দিনের মধ্যে কমে যাবে। তবে খুচরো বাজারের কোথাও ১৫০ টাকা কেজিতে টোম্যাটো বা ৪০-৫০ টাকা কেজিতে ফুলকপি বিক্রি করা হলে অন্যায় ভাবেই ওই দাম নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। পেঁয়াজের দাম আপাতত আয়ত্তের মধ্যেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। পাইকারি দর ২২-২৮ টাকা কেজি। খুচরো ৩০-৩৫ টাকা।

কর্নাটকের কোলার, চিকবল্লাপুর, বেঙ্গালুরু গ্রামীণ ইত্যাদি জেলার পাশাপাশি তামিলনাড়ু থেকে মূলত টোম্যাটো আসে বেঙ্গালুরুতে। অন্ধ্রের টোম্যাটোর ভাণ্ডার চিত্তুর এবং অনন্তপুর। চেন্নাই টোম্যাটো পায় মূলত অন্ধ্র এবং কর্নাটক থেকে। কিন্তু এই সব এলাকাই এখন জলের তলায়। ফলে টোম্যাটো দিয়ে সম্বর বা রসম বানাতে গিয়ে আক্ষরিক অর্থেই হাত পুড়ছে দক্ষিণ ভারতের জনতার। চলতি মাসের গোড়ায় চেন্নাইয়ে যেখানে খুচরো বাজারে টোম্যাটোর কেজি ছিল ৪০ টাকা, তা এখন ১৪০ টাকায় পৌঁছেছে। বেঙ্গালুরুতে টোম্যাটো বিকোচ্ছে ১০০-১১০ টাকা কেজি দরে। অন্ধ্রে তা ১০০ টাকা কেজি। ফলে টোম্যাটো পেতে মহারাষ্ট্রের শোলাপুর এখন বড় ভরসা দক্ষিণের। কর্নাটকের বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে হওয়া টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি নষ্ট হয়েছে ফসল। যশবন্তপুরের বাজারে আসা আলুর প্রায় অর্ধেক এবং পেঁয়াজের প্রায় ৮০ শতাংশই খারাপ বেরোচ্ছে।

আনাজের দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মজুতদারিকেও দায়ী করছেন নাগরিকদের একাংশ। এর সঙ্গে ডিজ়েলের দাম বৃদ্ধিতে চাষ ও পরিবহণের খরচও বেড়েছে। তা নিয়েই আজ নরেন্দ্র মোদী সরকারকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা। তিনি বলেন, ‘‘মোদীজি যা পরিস্থিতি তৈরি করেছেন, তাতে রান্নাঘরের টোম্যাটো আর পেঁয়াজে ১৪৪ ধারা বসেছে। ক্যাপসিকাম ১০০-১২০ টাকা কেজি, এমনকি পেঁয়াজও ৪০ টাকা কেজি! বেড়ে চলা ডিজ়েলের দাম ও চাষের সামগ্রীর উপরে বসানো জিএসটি-র জেরে চাষের খরচও বেড়েছে। সরকার হিসেব করে দেখুক, সাধারণ মানুষের হাতে মাসের শেষে কত টাকা থাকছে।’’ খেরার বক্তব্য, বিনামূল্যের রেশন এই মাসের শেষেই বন্ধ হয়ে যাবে। কোভিড-পরবর্তী সময়ে কী ভাবে এগোনো হবে, সে ব্যাপারে কোনও প্রস্তুতিই নেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

flood Tomatoes Price rise
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE