Advertisement
E-Paper

‘চালাকি করলেই শেষ’! পুলিশের গাড়িতে বোমা ছোড়া ডাকাতদের গল্প শোনালেন কালনার প্রৌঢ়

বুধবার রাতে কালনার হিজুলি গ্রামের বাসিন্দা সুভাষের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটেছে। বছর পঞ্চান্নের সুভাষ জানান, ঘরে ঢুকে শুধু মাথায় বন্দুক ঠেকানোই নয়, বাড়ির এক শিশুর গলাতেও ধারালো কাটারি ধরে ভয় দেখিয়েছিল ডাকাতেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:১৪
নাকা তল্লাশির সময় ধরা পড়ে দুই ডাকাত।

নাকা তল্লাশির সময় ধরা পড়ে দুই ডাকাত। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রতিবেশী দম্পতিকে ধরে এনে বাড়ির দরজা খুলিয়েছিল ডাকাতেরা। গৃহকর্তা বাড়ির দরজা খুলতেই ঘরে ঢুকে তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে হুমকি দেয় এক দুষ্কৃতী, ‘‘কেউ চালাকি করলে এখানেই শেষ করে দেব!’’ চার ডাকাতের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখে তত ক্ষণে ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ির অন্যেরা। সেই সুযোগেই বাড়ির আলমারি ভেঙে লুটপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। নগদ-সোনাদানা মিলিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার জিনিস নিয়ে ডাকাতদলটি বাইকে করে চম্পট দিয়েছিল বলে জানান পূর্ব বর্ধমানের কালনার বাসিন্দা সুভাষ ধর। পালাতে গিয়ে ওই ডাকাতদলটিই হুগলির মগরায় পুলিশের গাড়িতে বোমা ছুড়েছে বলে অভিযোগ।

বুধবার রাতে কালনার হিজুলি গ্রামের বাসিন্দা সুভাষের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটেছে। বছর পঞ্চান্নের সুভাষ জানান, ঘরে ঢুকে শুধু মাথায় বন্দুক ঠেকানোই নয়, বাড়ির এক শিশুর গলাতেও ধারালো কাটারি ধরে ভয় দেখিয়েছিল ডাকাতেরা। সুভাষের কথায়, ‘‘আমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল ওরা (ডাকাতেরা)। এতে বাড়ির সকলে ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাই আর কেউ ওদের বাধা দেয়নি। বাড়ির মেয়েদের গলার চেন, কানের দুল সব কেড়ে নিয়েছে। আলমারি ভেঙে টাকা লুট করেছে। শুধু আমার বাড়ি নয়, আমার দাদা, ভাইয়ের বাড়িতেও লুটপাট চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। আমরা আতঙ্কিত।’’

ওই ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে দুই দুষ্কৃতী। ধৃতদের নাম কৃষ্ণপদ মণ্ডল এবং অলোক বিশ্বাস। কৃষ্ণপদের বাড়ি নদিয়ার চাকদহে। আর অলোক থাকে ওই জেলারই গাংনাপুরে। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সূত্রে খবর, ডাকাতির খবর পাওয়া মাত্রই দুষ্কৃতী দলটিকে ধরতে তৎপর হয়েছিল কালনা থানার পুলিশ। পাশের হুগলি জেলা পুলিশকেও সতর্ক করা হয়েছিল। এর পরেই হুগলির মগরায় ধরা পড়ে দুই ডাকাত। হুগলি গ্রামীণ পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। দু’জনকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করিয়েছে পুলিশ।

পূর্ব বর্ধমান ও হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাকাতির পর কালনার দিক থেকে এসটিকেকে রোড ধরে দু’টি বাইক করে চম্পট দিয়েছিল চার দুষ্কৃতী। এর পরেই পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ হুগলির গ্রামীণ পুলিশকে বিষয়টি জানায়। খবর যায় হুগলির বলাগড় থানায়। ঘটনাচক্রে, সেই সময় বলাগড় থানায় ছিলেন হুগলি গ্রামীণের ডিএসপি (অপরাধ) অভিজিৎ সিংহ মহাপাত্র। সঙ্গে সঙ্গে এলাকার সব থানাকে সতর্ক করা হয়। শুরু হয় নাকা তল্লাশি। বলাগড়ে নাকা চলছে দেখে করোলা মোড় দিয়ে পান্ডুয়ার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল ডাকাতদলটি। বলাগড়-পান্ডুয়া সীমানাতেও নাকা থাকায় সেখান থেকে বাইক ঘুরিয়ে আবার এসটিকেকে রোড ধরে মগরার দিকে এগোতে থাকে তারা। সেই সময় দু’টি নম্বর-প্লেটহীন বাইককে কল্যাণী ব্রিজের দিকে যেতে দেখেই সন্দেহ হয় মগরা থানার পুলিশকর্মীদের। এর পরেই বাইক দু’টির পিছু ধাওয়া করে পুলিশের আরটি ভ্যান। পুলিশের তাড়া খেয়ে ত্রিবেণী কালীতলা ব্রিজের রেলিংয়ে বাইক নিয়ে ধাক্কা মারে ডাকাতেরা। তত ক্ষণে পুলিশের গাড়িও পিছনে চলে আসে। আর তখনই পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ডাকাতেরা বোমা ছোড়ে। তাতে পুলিশের গাড়ির উইন্ড স্ক্রিন ভেঙে যায়। দু’জন পুলিশকর্মী জখমও হন। সেই সুযোগে দুই ডাকাত পালাতে সক্ষম হলেও, ধরা পড়ে যায় দু’জন। এক দুষ্কৃতীকে জাপটে ধরে পাকড়াও করেছিলেন মগরা থানার এক সাব-ইনস্পেক্টর। ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে ওই দুষ্কৃতীকে নিয়ে ব্রিজের নীচেও পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবু ওই দুষ্কৃতীকে পালাতে দেননি। তার কিছু ক্ষণ পরেই আর এক দুষ্কৃতী ধরা পড়ে। তাঁদের কাছ থেকে একটি ওয়ান শটার উদ্ধার হয়েছে।

ডিএসপি অভিজিৎ বলেন, ‘‘আদালতে হাজির করানো হয়েছে ধৃতদের। রিমান্ডে নিয়ে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।’’ কালনার এসডিপিও রাকেশ চৌধুরী বলেন, ‘‘এই ঘটনার উপর নজর রাখছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে হুগলি যেতে পারে বিশেষ তদন্তকারী দল।’’

Robbery
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy