E-Paper

দুই যুবকের তৎপরতায় দামোদর থেকে রক্ষা মহিলার

নদীপথের মাঝে পড়ল সেতু। সেতু থেকে লোকজন দড়ি ফেলে মহিলাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে বিফল হলেন। মহিলা দড়ি ধরতে পারলেন না। শেষমেশ জলে ঝাঁপিয়েই দুই যুবক মহিলার প্রাণরক্ষা করলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:১১
(বাঁ দিকে) সৌমেন মালিক এবং রাকেশ সামন্ত (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) সৌমেন মালিক এবং রাকেশ সামন্ত (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

দামোদরের প্রবল স্রোতে ভেসে যাচ্ছেন এক মহিলা। তাঁকে উদ্ধারের জন্য পার ধরে প্রায় চার কিলোমিটার মোটরবাইক নিয়ে ধাওয়া করলেন দুই যুবক। উদ্দেশ্য, সুবিধাজনক জায়গায় জলে ঝাঁপানোর। কিন্তু তেমন জায়গা মেলেনি। নদীপথের মাঝে পড়ল সেতু। সেতু থেকে লোকজন দড়ি ফেলে মহিলাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে বিফল হলেন। মহিলা দড়ি ধরতে পারলেন না। শেষমেশ জলে ঝাঁপিয়েই দুই যুবক মহিলার প্রাণরক্ষা করলেন।

প্লাবনের জল নেমে রাস্তাঘাট জাগছে ঠিকই। কিন্তু দামোদর এখনও ভরা। বানভাসি সেই হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের চকগাড়া গ্রামের নমিতা চক্রবর্তী নামে ওই মহিলাকে উদ্ধারের পরে দুই যুবকের মধ্যে রাকেশ সামন্ত বলেন, “উদ্ধারের কাজ খুব কঠিন ছিল। কিন্তু সেটা যে করতে পেরেছি, তার জন্য আমি খুশি।” মহিলা বর্তমানে উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতালের সুপার কৌশিক সাউ বলেন, “মহিলার অবস্থা স্থিতিশীল। দীর্ঘক্ষণ ভেসে থাকার ফলে প্রচণ্ড ‘শক’ পেয়েছেন। তবে বিপন্মুক্ত।”

এ দিন বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে, দামোদরের ধারে আকনা গ্রামের একটি আশ্রমে পুজো দিতে যান নমিতা। তার আগে দামোদরে স্নান করতে গিয়ে ঘাটে পা পিছলে তিনি ভেসে যান। কয়েক জন এই দৃশ্য দেখে চিৎকার করে ওঠেন। ওই আশ্রমের কাছে আড্ডা মারছিলেন রাকেশ। চিৎকার শুনে তিনি ঘাটের কাছে গিয়ে ঘটনা বুঝতে পেরেই মোটরবাইকে উঠে পার ধরে এগোতে থাকেন। পাশে পেয়ে যান সৌমেন মালিক নামে মোটরবাইকে সওয়ার এক বন্ধুকেও।

জয়নগর সেতুর কাছে ভাসতে ভাসতে ওই মহিলা পৌঁছলে দুই যুবকও সেখানে যান। এ দিকে, খবর পেয়ে পুলিশ, ব্লক অফিসের কর্মীরা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা সেতুতে জড়ো হন। মহিলাকে বাঁচানোর জন্য তাঁদের চেষ্টা ব্যর্থ হতেই রাজেশ এবং সৌমেন জলে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতারে মহিলার কাছে পৌঁছন। তাঁর হাত ধরে ফেলেন। কিন্তু স্রোতের টানে মহিলার হাত ছেড়ে যায়। সেই সময় সেতু থেকে লোকজন রবারের টিউব ছুড়ে দেন। বিশ্বজিৎ মালিক নামে আর এক যুবকও সেখানে পৌঁছে যান। টিউবে ভেসে তাঁরা মহিলার হাত ধরে ফেলে পারের দিকে নিয়ে আসেন। মহিলা তখন প্রায় অচৈতন্য। পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের সহায়তায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

রাকেশ বলেন, “প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও ঘাটে শাড়ি রাখা দেখে বুঝতে পারি, যিনি ভেসে যাচ্ছেন তিনি মহিলা। ভেবেছিলাম, সুবিধাজনক জায়গায় বাইক ছেড়ে জলে ঝাঁপ দেব। কিন্তু সেতুর আগে তেমন জায়গা পেলাম না।”

নমিতার স্বামী তপন চক্রবর্তী ঘটনার সময়ে বাড়িতে ছিলেন না। জামাই পলাশ হালদার বলেন, “দুই যুবকের জন্য আমার শাশুড়ির পুনর্জন্ম হল।” উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত দাস বলেন, “পুলিশ এবং ব্লক প্রশাসনও তৎপর ছিল। তবুও যাঁরা ওই মহিলাকে উদ্ধার করেছেন, তাঁদের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

udaynarayanpur drowning

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy