যথেচ্ছ বালি তোলার অভিযোগ উঠল আরামবাগের হরিণখোলায় মুণ্ডেশ্বরী নদীর রামমোহন সেতুর কাছে। বালি তোলা হচ্ছে পার ঘেঁসেও। ‘সরকারি ছাড়পত্রে’ এই বালি তোলার কাজে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দু’পাড়ের বন্যাপ্লাবিত তিনটি পঞ্চায়েত এলাকার খান দশেক গ্রামের বাসিন্দারা।
প্রায় প্রতি বছর বানভাসি হওয়া ঘোলতাজপুরের শেখ সাহেব, রাগপুরের রামপদ খাঁড়ার অভিযোগ, নদীর পারের কাছে বালি কাটা হচ্ছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব না মেনে সেতু থেকে তিনশো মিটারের মধ্যে বালি উঠছে। এমনকি গত বন্যায় যে জায়গাগুলি ভেঙেছে, সেগুলি সংস্কার না করে সেই সব জায়গাতেও বালি কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এর ফলে আগামী বর্ষায় ফের গ্রাম বানভাসি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এলাকাবাসীর দাবি, আগে ভাঙা পাড় বাঁধা হোক। এছাড়া কোথাও বালি কাটলে গ্রাম ও সেতুর ক্ষতি হবে কি না তা চিহ্নিত করে দিক সেচ দফতর।
সেতু ও নদীর পার সংলগ্ন এলাকা থেকে বালি তোলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পঞ্চায়েতগুলিও। হরিণখোলা ২ পঞ্চায়েত প্রধান জুলেখা বেগম বলেন, ‘‘সরকারি কাজ বলে শুনেছি। কিন্তু সেই সংক্রান্ত কাগজ আমাদের দেওয়া হয়নি। আইন মেনে কাজ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।’’
পুরশুড়ার শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আজিম মল্লিক বলেন, ‘‘পার সংস্কার না করে সেই ভাঙা জায়গা থেকেই বালি তোলা নিয়ে আপত্তি করেছি সেচ দফতরের কাছে। কোথায় কোথায় বালি তোলা হবে, তা চিহ্নিত করা হয়েছে কি না জানতে চেয়েও উত্তর পাইনি।’’
বালি তোলার বরাত পাওয়া সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষে অবশ্য জানানো হয়েছে, “সরকারি ভাবে চিহ্নিত করা জায়গাতেই বালি তোলা হচ্ছে। বালি তুলতে নদীর আড়াআড়ি সংযোগকারী রাস্তার জন্য অনুমোদন নেওয়া আছে।”
বালি কাটায় কোনও অসঙ্গতি নেই জানিয়ে মুণ্ডেশ্বরী নদী তদারকির দায়িত্বে থাকা সেচ দফতরের চাঁপাডাঙা মহকুমার সহকারী বাস্তুকার মণিশঙ্কর দত্ত বলেন, “নির্দেশিকা ছিল, সেতু থেকে ৫০০ মিটার দূরে বালি তুলতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে মেপেছি, ৮৫০ মিটার দূরে তা কাটা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের ভয়ের কিছু নেই। নদীর মাঝ দিয়ে জল বয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে মাঝের চরগুলো তুলে দেওয়া জরুরি ছিল। সেই কাজই হচ্ছে।’’ তিনি জানান, এর আগে দফতর পয়সা খরচ করে নদী কেটেছে। এখন সরকারি পয়সা খরচ হচ্ছে না, উল্টে বিনা পয়সায় নদীর নাব্যতা বাড়ার পাশাপাশি সরকারি আয় বাড়ছে এবং হাইওয়ের কাজগুলোও হচ্ছে।
আরামবাগ ব্লক ভূমি দফতরের আধিকারিক শর্মিষ্ঠা বন্দ্যেপাধ্যায় বলেন, “বালি তোলায় অসঙ্গতি নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। সেচ দফতরের সঙ্গে যুগ্ম পরিদর্শন করে কিছু জায়গায় বালি তোলার অনুমোদন আছে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে
দেখা হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)