বিপর্যয়: বৃষ্টিতে জমা জলের স্রোত ঠেলে যাত্রা। বৃহস্পতিবার, হাওড়ার পঞ্চাননতলায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
আতঙ্ক ছিলই। যদিও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব সরাসরি পড়েনি। তবে গঙ্গায় ভরা কটাল এবং বুধবার মাঝরাত থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে ভাসল গোটা হাওড়া।
এমনিতেই গত আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে হাওড়া পুরসভায় নির্বাচন না হওয়ায় বোর্ড চালাতে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এলাকায় অন্যান্য পরিষেবার সঙ্গে নিকাশি সংস্কারের কাজও ব্যাহত হচ্ছে বলে বার বার অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। সেই অভিযোগ যে সত্য, তা এ দিনের বৃষ্টিতে প্রমাণ হয়ে গেল। পুরসভার ৬৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে বৃহস্পতিবার ২৩টি ওয়ার্ডেই জল জমে যায়। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন।
যদিও পুরসভার বক্তব্য, গঙ্গায় ভরা কটাল আসায় জল নামতে পারছে না। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, হাওড়া শহরের তুলনায় গঙ্গার নদীতলের উচ্চতা বেশি। তাই জমা জল সরাতে পাম্প চালানো হলেও সেই জল ফের শহরেই ফিরে আসছে।
হাওড়ায় নিকাশি সমস্যা দীর্ঘ কয়েক দশকের। নিয়মিত পাঁক না তোলায় নর্দমাগুলি পলি জমে প্রায় বুজে গিয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই নর্দমা উপচে নোংরা জলে ভরে যায় অধিকাংশ রাস্তা। পুরসভা সূত্রের খবর, তার মধ্যে বুধবার মাঝরাত থেকে দফায় দফায় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সারা দিন ধরেই চলেছে অঝোরে বৃষ্টি। সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে বেলা ১২টার পরে, যখন গঙ্গায় ভরা কটাল আসে। ফলে শহর থেকে তখন জমা জল বেরোতে পারেনি বলে দাবি পুরসভার।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন মধ্য হাওড়ার পঞ্চাননতলা, বেলিলিয়াস রোড, বেলিলিয়াস লেন, রামরাজাতলা, জগাছা স্কুল রোড, সাঁতরাগাছি এলাকার কোথাও হাঁটু-জল, কোথাও কোমর-জল জমে যায়। অন্য দিকে উত্তর হাওড়ার নস্করপাড়া, মাধবপুকুর লেন, ধর্মতলা রোড, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তিনকড়ি বসু লেন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যানার্জিপাড়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষপাড়া, মৈনাকপাড়া, ফকিরবাগান এলাকার বহু জায়গায় বাড়ির ভিতরে জল ঢুকে যায়। বৃষ্টি থামার ঘণ্টা চারেক পরেও ওই জল না-নামায় নাজেহাল হন বাসিন্দারা। জি টি রোডের দু’পাশে থাকা দু’টি কোভিড হাসপাতাল, টিএল জয়সওয়াল এবং সত্যবালা আইডির সামনে হাঁটু-জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি আরও বাড়ে।
কিন্তু কেন জমা জল নামছে না? উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক ও হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম চৌধুরী বলেন, ‘‘বৃষ্টি না থামলে আমরা পাম্প চালাতে পারছি না। গঙ্গায় ভরা কটাল চলছে। জল ফেলব কোথায়? বৃষ্টি কমলেই পাম্প বসিয়ে জল বার করে দেওয়া হবে।’’
একই যুক্তি হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তার। তিনি বলেন, ‘‘সকাল থেকে ৫০টা পাম্প চলছে বিভিন্ন জায়গায়। কেএমডিএ-র যে দু’টি বড় পাম্পিং স্টেশন ইছাপুর ও জেএন মুখার্জি রোডে রয়েছে, তার সব ক’টিই চলছে। এ ছাড়া পুরসভার নিজস্ব ন’টি পাম্পিং স্টেশন থেকে জল পাম্প করা হচ্ছে। কিন্তু গঙ্গায় ভরা কটাল চলছে, ফলে সেই জল বেরোচ্ছে না। ভাটার জন্য আমরা অপেক্ষা করে আছি।’’ কিন্তু রাতে বৃষ্টি হলে সমস্যা যে আরও বাড়বে তা মানছেন পুরকর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy