Advertisement
১১ মে ২০২৪
national flag

Independence Day: রাস্তায় গড়াগড়ি খায় তেরঙ্গা! পরম আদরে তুলে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে রাখেন বালির মনু

মনুকে দেখে এলাকার বেশ কিছু যুবক-যুবতীও এগিয়ে এসেছেন জাতীয় পতাকাকে অবমাননার হাত থেকে বাঁচাতে।

প্রিয়রঞ্জন সরকার।

প্রিয়রঞ্জন সরকার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ১০:৩২
Share: Save:

চারপাশ তেরঙা পতাকায় মোড়া। স্বাধীনতা দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবসে এমনটাই হয়। কিন্তু দিন ফুরোলেই সেই পতাকার একটা বড় অংশের প্রতি ‘অবহেলা’ দেখা দেয়। রাস্তা থেকে মাঠঘাট— সর্বত্র গড়াগড়ি খায় কাগজ বা কাপড়ের ছোট জাতীয় পতাকা। অনেকেই বেখেয়ালে তা মাড়িয়ে চলে যান। এ সব দেখেই খারাপ লাগে হাওড়ার বালির প্রিয়রঞ্জন সরকারের। স্থানীয়দের কাছে তিনি মনু। ভাল করে কথা বলতে পারেন না। কিন্তু বছরখানেক ধরে সেই পতাকাপ্রেমেই মজে আছেন তিনি। রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা জাতীয় পতাকা তুলে ঘরে গুছিয়ে রাখেন। মনুকে দেখে এলাকার বেশ কিছু যুবক-যুবতীও এগিয়ে এসেছেন জাতীয় পতাকাকে অবমাননার হাত থেকে বাঁচাতে।

মনু ইতিমধ্যেই ৫০ হাজারেরও বেশি পতাকা রাস্তা থেকে তুলে ঘরে এনেছেন। নিজের এলাকা হোক বা আশপাশের জায়গা, যেখানেই জাতীয় পতাকার অবমাননা দেখেন, উদ্ধারে নেমে পড়েন। শুরুর দিকে পতাকা তুলে এনে বাড়ির রান্নাঘরে রাখতেন। কিন্তু দিনে দিনে সেই সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়, তা রাখার জন্য ১০ ফুট বাই ১৫ ফুটের একটা ট্যাঙ্ক বানিয়ে নিয়েছেন। এখন সেখানেই ন্যাপথালিনের সুরক্ষায় সাজানো থাকে তেরঙ্গা। সেগুলিকে রোজ ধূপ দিয়ে পুজোও করেন তিনি। দেশের প্রতি মনুর এই প্রেম নাড়া দিয়েছে জনা চল্লিশেক যুবক-যুবতীর মনে। জাতীয় পতাকার সম্ভ্রমরক্ষার কাজে তাঁরাও রয়েছেন মনুর পাশে। এ ছাড়া কিছু মানুষ ভালবেসে তাঁকে সাহায্যও করেন।

পড়ে থাকা পতাকা।

পড়ে থাকা পতাকা। নিজস্ব চিত্র।

বালির নিশ্চিন্দার বাসিন্দা মনু। তিনি বলেন, ‘‘সে ভাবে জ্ঞান হওয়ার আগেই বাবাকে হারিয়েছি। মা অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছেন আমাদের তিন ভাইবোনকে। গলায় সমস্যা থাকায় স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পারি না। অনেকে আমাকে হাবা বলে।’’ কিন্তু এ সবে ছেলের মনোবল ভাঙতে দেননি মা আভা। জাতীয় পতাকার সম্মানরক্ষার মতো গুরুদায়িত্ব নিজেই কাঁধে তুলে মনু তাই বলেছেন, ‘‘আমার সব কাজের অনুপ্রেরণা মা। লোকে আমাকে অবহেলা করলে মা বলতেন, মনু তুই এক দিন এমন কাজ করবি যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’ মনুও নিজের কাজ দিয়ে মায়ের ‘চাওয়া’কে সত্যি করে তুলেছেন।

সেচ দফতরে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করেন মনু। মাইনে ১৫ হাজার টাকা। এই টাকার একটা বড় অংশই তিনি ব্যয় করেন সমাজসেবার কাজে। ‘মায়ের প্রেরণা’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও গড়েছেন তিনি। সেই সংস্থা বছরে তিন বার রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে। বিপর্যয়ে ত্রাণ নিয়ে ছুটে যায় অসহায় মানুষের পাশে। মনু জানিয়েছেন, এ ভাবেই সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করতে চান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

national flag Bally independence day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE