E-Paper

কোথাও অন্য স্যর, কোথাও ক্লাস ফাঁকা

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বহু শিক্ষকের চাকরি বাতিল হওয়ায় স্কুলের স্বাভাবিক পঠনপাঠনে প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা ছিলই। পরীক্ষার পরে বুধবার স্কুল চালু হতেই দেখা গেল, আশঙ্কাই সত্যি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৩৮
চুঁচুড়ায় জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে বিক্ষোভ এসএফআইয়ের।

চুঁচুড়ায় জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে বিক্ষোভ এসএফআইয়ের। ছবি: তাপস ঘোষ।

কোথাও শারীরশিক্ষার শিক্ষক নিলেন হিন্দি ক্লাস। ইতিহাস পড়াতে হল হিন্দির শিক্ষককে। কোথাও অঙ্ক বা বিজ্ঞানের ক্লাসই হল না।

আদালতের রায়ে বহু শিক্ষকের চাকরি বাতিলে বুধবার এমনই পরিস্থিতি হল হুগলি জেলার বিভিন্ন স্কুলে। কয়েকটি স্কুলে পঞ্চম বা ষষ্ঠ পিরিয়ডে ছুটিও দেওয়া হয়েছে।

খানাকুলের শঙ্করপুর বাসেদ আলি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক শিবশঙ্কর সামন্তের বিষয় কৃষিবিজ্ঞান। এ দিন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণির অঙ্ক, অষ্টম শ্রেণির অঙ্ক ও ভৌতবিজ্ঞানের ক্লাস নেন। ভূগোলের শিক্ষক গিয়েছেন পরিবেশবিদ্যার ক্লাসে। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘শিক্ষাবিজ্ঞানে আমি এমএ। ওই বিভাগও চালিয়ে দেব।’’ এখানে ১৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ৫ জনের চাকরি গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে দু’জন ক্লাস নেন প্রধান শিক্ষকের অনুরোধে। অষ্টম শ্রেণির আক্তার তাসমিনের কথায়, ‘‘আজ হেড স্যর অঙ্ক করিয়েছেন।’’

২১ জনের মধ্যে সাত জন চাকরিহারা হয়েছেন আরামবাগের ডিহিবাগনান উচ্চ বিদ্যালয়ে। জানা গেল, এখানে সব পিরিয়ড হলেও রুটিন অনুযায়ী পড়ানো যায়নি। অঙ্ক-সহ বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাসই হয়নি। সংশ্লিষ্ট ক্লাসে যে শিক্ষক গিয়েছেন, তিনি তাঁর নিজের বিষয় পড়িয়েছেন। প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু আদকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘জোড়াতালি দিয়ে চলল।’’ তিনি জানান, সমস্যা সমাধানে আজ, বৃহস্পতিবার পরিচালন সমিতি, আভিভাবক, গ্রামবাসী এবং প্রাক্তনীদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।

বাঁশবেড়িয়ার গ্যাঞ্জেস হাই স্কুলে (হিন্দি মাধ্যম) প্রধান শিক্ষক বিশাল তিওয়ারি-সহ প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে টানা ৬টি করে ক্লাস নিতে হয়েছে। আদালতের রায়ে এখানে ৪১ জনের মধ্যে ১৫ জন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। এখানে প্রায় ২৩০০ ছাত্রছাত্রী। হিন্দি ক্লাস নিয়েছেন শারীরশিক্ষার শিক্ষক। হিন্দির শিক্ষক গিয়েছেন ইতিহাস ক্লাসে। শেষ দু’টি পিরিয়ড (খেলা ও কর্মশিক্ষা) বন্ধ রেখে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। নির্দিষ্ট বিষয়ের পাশাপাশি অন্য কোন বিষয়ে কে পারদর্শী, তা জেনে ক্লাস নেওয়ার রূপরেখা তৈরি হয়। প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘সাধারণত বিকেল ৫টার পরে স্কুল থেকে বেরোতাম। এ বার মনে হয় সাড়ে ৭টা বাজবে!’’

শিক্ষকের অভাবে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশের অনেক ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন রিষড়া বিদ্যাপীঠের (মেন) প্রধান শিক্ষক প্রমোদ কুমার তিওয়ারি। এখানকার চাকরিহারা ৮ শিক্ষকের মধ্যে এ দিন দু’জন এসেছিলেন। সব মিলিয়ে ১৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা অনুপস্থিত ছিলেন। একাদশ-দ্বাদশে অঙ্ক এবং হিন্দি ছাড়া কোনও ক্লাস হয়নি। নালিকুলের কিঙ্করবাটী কৃষি বিদ্যালয়ের ৩২ জন শিক্ষকের মধ্যে ৫ জন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। প্রধান শিক্ষক হরিদাস গঙ্গোপাধ্যায় জানান, এক এক জন শিক্ষককে ৬টি করে ক্লাস নিতে হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Howrah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy