সকলের কাছেই অভিজ্ঞতাটা হাড়হিম করা।
সে ব্যান্ডেলের স্কুলশিক্ষক চঞ্চল দে হোন বা পান্ডুয়ার জয়ন্ত সমাদ্দার! পর্যটনের ভরা মরসুমে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়ে হুগলির কয়েকটি পরিবারের লোকজন মঙ্গলবার যে অভিজ্ঞতার মুখে পড়লেন, ২৪ ঘণ্টা পরেও সে কথা বলতে গিয়ে কেঁপে যাচ্ছিলেন তাঁরা।
স্ত্রী পর্ণা আর আট বছরের ছেলে অর্চিষ্মানকে নিয়ে বৈসরন থেকে কিছুটা দূরের একটি রেস্তরাঁয় মঙ্গলবার দুপুরে খেতে ঢুকছিলেন চঞ্চল। সঙ্গে সফরসঙ্গীরা। তখনই প্রাণপণে ছুটতে ছুটতে কিছু লোকের চিৎকার, ‘আতঙ্কবাদীও নে হামলা কর দিয়া! সব নিকল যাও। হোটেল মে চলা যাও!’ শুনেই খাওয়া ফেলে দ্রুত হোটেলে ফেরেন সবাই। খবর পান, জঙ্গি হানায় বৈসরনে অনেকে মারা গিয়েছেন। সফর বাতিল করে ঘুমহীন রাত কাটিয়ে বুধবার ভোরেই বাড়ির পথ ধরেন ওই পর্যটকেরা। তাঁদের ফেরার কথা ছিল আগামী সোমবার।
চঞ্চলদের বাড়ি ব্যান্ডেলের টায়ারবাগানে। তাঁর সহকর্মীদের পরিবার-সহ মোট ১১ জনের দল কাশ্মীর রওনা হয় ১৬ এপ্রিল। মঙ্গল এবং বুধবার পহেলগামে থাকার কথা ছিল। পহেলগাম ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের অদূরে একটি হোটেলে ওঠেন তাঁরা। বৈসরন উপত্যকা সেখান থেকে মেরেকেটে তিন কিলোমিটার।
ফোনে তাঁরা জানান, হোটেলে ব্যাগপত্র রেখে রেস্তরাঁয় যান। ওই খবর ছড়াতেই ছোটাছুটি শুরু হয়। উপর থেকে পর্যটকদের বহু গাড়ি নেমে আসতে থাকে। ফুটপাতের দোকান সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়। পাকা দোকানের শাটার পড়তে থাকে। কী হয়েছে না বুঝেই তাঁরাও পার্কিংয়ে থাকা গাড়ির দিকে দৌড়ন। ঘন ঘন অ্যাম্বুল্যান্স ও সেনাবাহিনীর গাড়ি আসতে শুরু করে।
চঞ্চলের কথায়, ‘‘সব দেখেশুনে ছেলে খুব ভয় পেয়ে যায়। জানতে চায়, ওরা কি আমাদের মেরে দেবে? গাড়িতেই ছেলে বমি করে ফেলে ভয়ে। হোটেলে পৌঁছে ফের বলল, আমরা বাঁচব তো! ওকে মিথ্যা বললাম যে, ভারতীয় সেনা জঙ্গিদের মেরে ফেলেছে। আর ভয় নেই।’’ টায়ারবাগানে বাড়িতে বসে পর্ণার জা বাসন্তী জানান, বিকেলে ফোন করে ঘটনার কথা জানান পর্ণা।
ফেরার জন্য বুধবার গাড়ি ভাড়া করে জম্মু পৌঁছন চঞ্চলরা। সেখান থেকে ট্রেনে অমৃতসর হয়ে তাঁদের ফেরার কথা। চঞ্চল বললেন, ‘‘এই নিয়ে ১০ বার এলাম। এমন অভিজ্ঞতা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।’’
পান্ডুয়ার সিমলাগড় থেকে তিনটি পরিবার কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বৈসরন পৌঁছনোর মুখেই তাঁরা জঙ্গি হানার খবর পেয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে হোটেলে ফেরেন। ফোনে জানান, তাঁরা কার্যত হোটেলবন্দি। সেনাবাহিনীর অফিসার হোটেলে এসে বলে গিয়েছেন, কোনও পর্যটক যাতে না বেরোন। ওই দলে থাকা সিমলাগড়ের চাঁপাহাটি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা জয়ন্ত সমাদ্দার ফোনে বলেন, ‘‘এমন অভিজ্ঞতা ভাবনারও অতীত ছিল।’’ তাঁর স্ত্রী মল্লিকা সমাদ্দারের কথায়, ‘‘এখন ভালয় ভালয় বাড়ি ফিরতে পারলেই শান্তি!’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)