রাস্তার ধারে ফুটপাতে ছোট্ট টেবিলের উপরে স্টোভ জ্বালিয়ে কড়াইয়ে আলুর চপ ভাজছিলেন চম্পাহাটির উমা মণ্ডল, কাশ্মীরা খাতুনেরা। পাশেই একটি ঝুড়িতে ঝালমুড়ি তৈরি করছিলেন পার্থ কর্মকার। আর, যেখানে চপ-মুড়ি আছে, ঝালমুড়ি আছে, সেখানে চা তো থাকবেই। তাঁদের পাশের টেবিলেই চা তৈরি করছিলেন ইসরাফিল শেখ।
এঁরা কেউ পেশাদার চপ-মুড়ি বা চা-বিক্রেতা নন। সকলেই টেট পাশ করা চাকরিপ্রার্থী। তাঁরা জানাচ্ছেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে টেট দিয়েছিলেন। ২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি টেটের ফল বেরোয়। কিন্তু তার পরে কেটে গিয়েছে দু’বছর। নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শুরুই হয়নি। দু’বছর ধরে বেকার অবস্থায় বসে থাকার পরে মঙ্গলবার তাঁরা বিকাশ ভবনের কাছে এই চপ-মুড়ির স্টল দিয়েছিলেন এক দিনের জন্য। নাম দিয়েছিলেন ‘বেকার মেলা।’ এক চাকরিপ্রার্থী বিদেশ গাজি বলেন, ‘‘এক দিনের বেকার মেলা চলছে। আমরা হাই কোর্টের অনুমতি নিয়েই এই অভিনব ধর্না-অবস্থান করছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, সরকারি চাকরি নেই। চপের দোকান দাও। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় মুড়ি-চপের দোকান দিয়েছি। কারণ, আমরা বেকারত্বের জ্বালা থেকে মুক্তি পাচ্ছি না।’’
এ দিনের এই ‘বেকার মেলা’য় বিভিন্ন জেলা থেকে চাকরিপ্রার্থীরা এসেছিলেন। চপ ভাজতে ভাজতেই এক চাকরিপ্রার্থী পার্থজিৎ বণিক বললেন, ‘‘৫০ হাজার শূন্য পদ রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল। বলেছিলেন, প্রতি বছর পরীক্ষা হবে। নিয়োগ হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ১০ লক্ষ শূন্য পদ রয়েছে। এ সব প্রতিশ্রুতি কবে পূর্ণ হবে?’’
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের উপসচিব পার্থ কর্মকার বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন থাকায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকার থেকে শ্রেণিভিত্তিক শূন্য
পদের সংখ্যা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদও শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে শূন্য পদের সংখ্যা পাওয়া গেলেই
নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি যথাসময়ে প্রকাশিত হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)