মামলার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’-এর তালিকায় তার নাম জ্বলজ্বল করছে। ইনাম পাঁচ লক্ষ টাকা। জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি-তে সে ‘আমির’ বা সর্বোচ্চ পদাধিকারী। তবু খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত, বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা সালাউদ্দিন সালেহিনকে গ্রেফতার করা তো দূরের কথা, আড়াই বছরে তার নামে চার্জশিটও দিতে পারেনি জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)! সেই জন্য মামলার বিচার-প্রক্রিয়া নতুন করে শুরুই করা যাচ্ছে না।
সোমবার ওই মামলায় আরও তিন জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে কলকাতার এনআইএ আদালতে। এনআইএ-র বিশেষ কৌঁসুলি তমাল মুখোপাধ্যায় জানান, ওই তিন জন হল বাংলাদেশের নাগরিক মহম্মদ রুবেল ও জহিদুল ইসলাম এবং অসমের বরপেটার বাসিন্দা মহম্মদ শহিদুল ইসলাম। এটা চতুর্থ অতিরিক্ত চার্জশিট। এই নিয়ে মোট ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ হল। এর মধ্যে পলাতক অভিযুক্ত আট জন। চার্জশিট দেওয়া হয়নি শুধু সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধেই।
কেন?
এনআইএ-র একটি সূত্রের বক্তব্য, সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে খাগড়াগড় মামলায় সরাসরি জড়িত থাকার অকাট্য প্রমাণ এত দিনেও জোগাড় করা যায়নি। যথেষ্ট আদালতগ্রাহ্য প্রমাণ পেতে হলে তাকে গ্রেফতার করাটা জরুরি। সেটা না-হওয়ায় চার্জশিট দিতে সমস্যা হচ্ছে।
গোড়ায় সালাউদ্দিনের নাম মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় ছিল না। তখন গোয়েন্দারা জানতেন, তার নাম মাহিন। মুকিমনগর ও শিমুলিয়া মাদ্রাসা ও বোরখা ঘরের মতো জঙ্গি ডেরায় যার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। পরে জানা যায়, সে-ই জেএমবি-র সর্বোচ্চ পদাধিকারী। ২০১৪-র ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে সালাউদ্দিন এবং খাগড়াগড় মামলার আর এক অভিযুক্ত কওসরকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। আর খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ হয় সেই বছরেরই ২ অক্টোবর।
এনআইএ সূত্রের খবর, এ বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সালাউদ্দিন ভারতেই ছিল। পরে বাংলাদেশে চলে যায়।
গোয়েন্দাদের একাংশের বক্তব্য, অক্টোবরের পরে যে-বিচার প্রক্রিয়া থেমে গিয়েছিল, নতুন তিন জনকে চার্জশিট দেওয়ায় ফের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। তদন্তকারীদের যুক্তি, সালাউদ্দিন ধরা পড়লে আবার একটি চার্জশিট দিতে হবে। যাঁদের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়ে গিয়েছে, তাঁদের ফের ডাকতে হবে আদালতে। যা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ। এই অবস্থায় মামলাকে দু’ভাগ করার আবেদন করা যায় কি না, তা ভাবছে এনআইএ।
এই মামলার বিচার শুরু হয়েছিল গত ২০ অগস্ট। সেপ্টেম্বরে কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেএমবি-র ছ’জন। তাদের পাঁচ জন ছিল খাগ়ড়াগড় মামলায় অভিযুক্ত। তার পরেই বিচার-প্রক্রিয়া থেমে যায়। সেই পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনের বিরুদ্ধে এ দিন চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। বাকি দু’জন ইউসুফ ও কালামের বিরুদ্ধে আগেই চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। তবে ষষ্ঠ জন, আনোয়ার হোসেন ফারুক পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি-র মাথা হলেও তার বিরুদ্ধে এই মামলায় জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ পায়নি এনআইএ।