Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Dilip Ghosh

BJP: কৈলাস-ঘনিষ্ঠ নেতার বদলি, ভোটে ভরাডুবির পর প্রথম কোপ কি দিলীপের প্রভাবেই

বিধানসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল না হওয়ায় বিজেপি-তে কিছু সংগঠনিক রদবদল হতে পারে। মনে করা হচ্ছে সেটাই এ বার শুরু হয়ে গেল।

কৈলাসের পছন্দের কিশোরকে নিয়ে বরবার আপত্তি ছিল দিলীপের।

কৈলাসের পছন্দের কিশোরকে নিয়ে বরবার আপত্তি ছিল দিলীপের। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২১ ১৭:০৯
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি-র সহ সংগঠন সম্পাদক কিশোর বর্মনকে ত্রিপুরায় পাঠিয়ে দেওয়া হল। ঘটনাচক্রে, যিনি কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত। সেই কৈলাস, বাংলার ভোটে বিপর্যয় এবং মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার পর যাঁর নিজের অবস্থানই দলের অন্দরে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবারই কিশোরকে দিল্লিতে ডেকে বদলির সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। তবে কিশোর ত্রিপুরায় কী পদে বসবেন বা কোন দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিয়ে কোনও ঘোষণা হয়নি। যা ‘আশ্চর্যজনক’ বলেই মনে হচ্ছে বিজেপি-র অন্দরমহলের। নড্ডা টুইটে শুধু এটুকুই জানিয়েছেন যে, কিশোর এ বার ত্রিপুরায় বিজেপি-কে শক্তিশালী করার কাজ করবেন। রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই কিশোরকে অন্য দায়িত্ব দেওয়ার দাবি তুলেছেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এ বার সেই আপত্তিতেই প্রভাবিত হয়ে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ঘটনাচক্রে, দিলীপ এবং কৈলাসের সম্পর্ক যে কত ‘মধুর’, তা বিজেপি-র অন্দরে কারও অজানা নয়।

আদতে ত্রিপুরার বাসিন্দা কিশোরকে নিজের রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়াকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন বঙ্গ বিজেপি-র নেতারা। কারণ, কিশোর বাংলার দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম থেকেই পর্যবেক্ষক কৈলাসের ‘পছন্দের লোক’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অনেকে দাবি করেন, মূলত কৈলাসের পছন্দেই সহ সংগঠন সম্পাদক হয়েছিলেন কিশোর। সেই সঙ্গে সমর্থন ছিল দুই কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ এবং অরবিন্দ মেননের। কিন্তু বারংবার রাজ্য সভাপতি দিলীপের অনুগামীদের সঙ্গে বিবাদে জড়ান তিনি। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ক্ষোভের কথা জানালেও কাজ হয়নি। কারণ, বিজেপি-র সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী কিশোরকে সরানোর ক্ষমতা ছিল না দিলীপের। সংগঠন সম্পাদকদের নিয়োগ, অপসারণ ও বদলি হয় শুধু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে।

বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি-র আশানুরূপ ফল না হওয়ার পরে রাজ্যের সংগঠনে বেশ কিছু রদবদলের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাতে অনেকেই পদ হারাতে পারেন। মনে করা হচ্ছে, সেই কাজটা কিশোরকে দিয়েই শুরু হল। বিজেপি-তে সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যখন ভোট পরিচালনার দায়িত্ব পুরোপুরি নিতে চান, তখন তাতে নারাজ ছিলেন দিলীপ-ঘনিষ্ঠ সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। বেশ কয়েকবার সুব্রতর সঙ্গে কৈলাসদের মতানৈক্য তৈরি হয়। রাজ্য বিজেপি-র অনেকেই মনে করেন যে, ভোটের আগে গত বছরের অক্টোবর মাসে সুব্রতকে সরিয়ে ওই পদে অমিতাভ চক্রবর্তীকে আনার পিছনে সেই কারণও কাজ করেছিল। এর পরে সুব্রতকে বিজেপি থেকেই সরিয়ে দেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

তখন থেকেই সুব্রত-র সহকারী কিশোর হয়ে যান অমিতাভর সহকারী। রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে মূলত আরএসএস প্রচারকদের বসানো হলেও বিধানসভা নির্বাচন পর্বে সেই নিয়মে বদল হয়। অমিতাভ ও কিশোর সরাসরি আরএসএস-এর প্রচারক ছিলেন না। দু’জনেই আসেন বিদ্যার্থী পরিষদ থেকে। ভোট পর্বে অমিতাভ কলকাতায় থেকে গোটা রাজ্যের কাজ দেখেন। আর কিশোর শিলিগুড়িতে থেকে মূলত উত্তরবঙ্গের দায়িত্ব পালন করেন।

কিশোর ত্রিপুরায় গেলেও কোনও দায়িত্ব ঘোষণা হয়নি।

কিশোর ত্রিপুরায় গেলেও কোনও দায়িত্ব ঘোষণা হয়নি। ছবি সৌজন্য: কিশোর বর্মনের ফেসবুক

বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য দক্ষিণের তুলনায় উত্তরবঙ্গে অনেকটাই ভাল ফল করেছে বিজেপি। তবে গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে সেই ফল আশানুরূপ নয়। তা সত্বেও কিশোরকে উত্তরবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে রাজ্য নেতারা অন্য কারণ দেখছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিধানসভা নির্বাচন পর্বে কৈলাস যে ভাবে বাংলায় নিজের টিম সাজিয়েছিলেন তা ভেঙে দেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ এই বদলি। কিশোর অবশ্য তা মনে করছেন না। শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘এটা নিয়মমাফিক দায়িত্ব বদল। আমাদের সংগঠনে এটা হয়েই থাকে। নেতৃত্ব যে দায়িত্ব দেবেন সেটাই পালন করব। দিন সাতেকের মধ্যেই আগরতলায় যাব।’’

কিশোরের ত্রিপুরায় বদলি প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই কিশোরের কারও সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। তাঁর সঙ্গে বিবাদের জেরেই এক সময়ে উত্তরবঙ্গ জোনের দায়িত্ব ছেড়ে দেন রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে সেখানে সায়ন্তন বসুকে পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁর সঙ্গেও কিশোরের সম্পর্ক ভাল ছিল না।’’ প্রসঙ্গত, সুব্রতকে সরানোর সময়ে দিলীপ ক্ষুব্ধ ছিলেন। কারণ, সঙ্ঘের দুই প্রাক্তন প্রচারক দিলীপ ও সুব্রত এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলেন, যে তাঁরা নিউটাউনে একই বাড়িতে পাশাপাশি ঘরে থাকতেন। দিলীপের মতোই সুব্রতর সঙ্গেও মুকুল, বাবুল সুপ্রিয়দের সম্পর্ক ভাল ছিল না। তাঁদের বক্তব্য ছিল, রাজ্য থেকে জেলা—সর্বত্র দিলীপ-সুব্রত সংগঠনকে নিজেদের ‘কুক্ষিগত’ করে রেখেছেন। ওই জুটি ভাঙার পরে তাই উল্লসিত ছিলেন দিলীপ বিরোধী গোষ্ঠী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Dilip Ghosh Kailash Vijayvargiya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE