Advertisement
E-Paper

হস্টেলে ওদের দিন কাটছে অডিয়ো বইয়ে

প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎবাবু জানান, উচ্চ মাধ্যমিক এবং একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার পরীক্ষা মাঝপথে বন্ধ হওয়ার পরে ওই আবাসিকদের কয়েক জন বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পায়নি।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২০ ০৩:১৯
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

লকডাউনের সময়ে বাড়ি চলে গিয়েছে ছাত্রাবাসের বেশির ভাগ আবাসিকই। শুধু রয়ে গিয়েছে জনা দশেক ছাত্র। তাদের কেউ একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। কারও আবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা মাঝপথে থমকে গিয়েছে। করোনা আবহে হস্টেলে বসেই পরীক্ষার প্রস্তুতি আর অবসরে অডিয়ো বই শুনে সময় কাটাচ্ছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমির ওই দৃষ্টিহীন ছাত্ররা।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘোষ ও ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমির মঙ্ক ইন চার্জ স্বামী সর্বপ্রেমানন্দ জানান, লকডাউনে সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে চলার কথা বারবার বলা হলেও তাতে কান দিচ্ছেন না অনেকে। অথচ দৃষ্টিহীন এই সব ছাত্রেরা শত অসুবিধা সত্ত্বেও সেই নির্দেশ পালন করছে গত এক মাস ধরে। দৃষ্টিহীনদের পক্ষে অন্যের স্পর্শ বাঁচিয়ে জীবনধারণ বেশ কঠিন ব্যাপার হলেও হস্টেলে থেকে সেটাই করে দেখাচ্ছে ওই ছাত্রেরা। আর সেই লড়াইয়ে তারা পাশে পাচ্ছে স্কুলের শিক্ষক, হস্টেলের কর্মী এবং আশ্রমের মহারাজদের।

প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎবাবু জানান, উচ্চ মাধ্যমিক এবং একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার পরীক্ষা মাঝপথে বন্ধ হওয়ার পরে ওই আবাসিকদের কয়েক জন বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পায়নি। অনেকেরই বাড়ি দূরে দূরে ছিল। গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও তাদের অভিভাবক এবং গ্রামের বাসিন্দারা জানান যে, বাড়ি ফিরলে ওদের প্রথমে কোনও কোয়রান্টিন কেন্দ্রে আগে থাকতে হবে। কিন্তু দৃষ্টিহীনদের পক্ষে অচেনা কোথাও থাকা খুবই কঠিন। তাই ওই ছাত্রেরা রয়ে গিয়েছে ছাত্রাবাসেই।

স্বামী সর্বপ্রেমানন্দ জানান, ছাত্রাবাসের ২০০ জন আবাসিকের মধ্যে বর্তমানে সেখানে রয়ে গিয়েছে মাত্র ১০ জন। সকালে উঠে দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে মধ্যাহ্নভোজ ও নৈশভোজ— সবেতেই নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখছে তারা। স্বামী সর্বপ্রেমানন্দ বলেন, ‘‘ওদের সঙ্গে আমরা তো সব সময়েই আছি। কখনও কোনও দরকার পড়লেই চলে আসছি ওদের কাছে।’’

হস্টেলে রয়ে যাওয়া এক আংশিক দৃষ্টিহীন ছাত্র সন্দীপ সেনের বাড়ি চিত্তরঞ্জনে। ওই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ফোনে বলে, ‘‘প্রথম প্রথম বাড়ির জন্য মন খারাপ করত। এখন আর করে না। সময় কাটানোর জন্য অডিয়ো বই পড়ছি। ইউটিউবে বেশ ভাল অডিয়ো বইয়ের সংগ্রহ আছে। সেগুলো পড়ছি।’’

হস্টেলের অন্য আবাসিক সুমন বেরা, শাহরুখ শেখরা জানায়, দৃষ্টিহীনদের জন্য নানা কাজে একে অপরের স্পর্শ অনেক সময়ে খুব জরুরি। এখন সেটা হচ্ছে না। তবে লকডাউনের এই পরিস্থিতির সঙ্গে তারা মানিয়ে নিয়েছে। সকলে মিলে গল্প করা হোক বা বাগানে হাঁটতে বেরোনো— সবই চলছে ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে। এমনকি খাবার টেবিলেও দূরে দূরে বসছে ওরা।

সুমনরা জানাচ্ছে, লকডাউনের মধ্যে নির্জন এই হস্টেলে তাদের প্রাত্যহিক কাজকর্মের ধরন বদলাতে হয়েছে অনেকটাই। দৃষ্টিহীনদের জন্য এই স্পর্শহীন জীবন অনেক বেশি কঠিন। স্বামী সর্বপ্রেমানন্দ বলেন, ‘‘লকডাউনে স্পর্শ বাঁচিয়ে চলার এই চ্যালেঞ্জ ওরা নিয়েছে হাসিমুখেই।’’

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy