Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Local Train

‘ট্রেন না চললে হয়তো না খেয়েই মরতে হত’

প্রথম দিনের এমন ছবির পরে দূরত্ব-বিধি মানার উপায় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সাবওয়ে দিয়ে প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বুধবার, হাওড়া

সাবওয়ে দিয়ে প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বুধবার, হাওড়া

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
বারাসত শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২০ ০২:২৮
Share: Save:

ঠাসাঠাসি ভিড় আর এই লোকালের নাম কার্যত সমার্থক। ফের লোকাল ট্রেন চলার ঘোষণার সময়েই যাত্রীদের আশঙ্কা ছিল, সোনার পাথরবাটি খোঁজার মতোই বনগাঁ লোকালে দূরত্ব-বিধি মানা দুরূহ হবে। বুধবার সেই আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণ হল। সকালে শিয়ালদহগামী বনগাঁ লোকালে ঠেলাঠেলি করেও উঠতে পারলেন না বহু যাত্রী। স্টেশনগুলিতে করোনা-বিধি মানার যাবতীয় ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও তাই শেষ রক্ষা হল না পূর্ব রেলের বনগাঁ এবং বসিরহাট শাখায়।

দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস পরে এ দিন লোকাল ট্রেন চালু হওয়ায় শহরতলির বহু যাত্রীই বাস ছেড়ে ট্রেন বেছে নিয়েছিলেন। আগের থেকে ট্রেনের সংখ্যা কম থাকায় তাই সকাল-সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে উপচে পড়ল ভিড়। যাত্রীদের মুখে মাস্ক থাকলেও শিকেয় উঠল দূরত্ব-বিধি। যাত্রীরা জানান, শিয়ালদহ-বনগাঁ ও বসিরহাট শাখার ট্রেনগুলিতে বরাবরই তিন জনের বসার জায়গায় চেপেচুপে চার জন বসতেন। করোনা পরিস্থিতিতে একটি করে আসন ছেড়ে দাগ দেওয়া থাকলেও তা মানেননি যাত্রীরা। বনগাঁ শাখার বেশির ভাগ ট্রেনে তিন জনের আসনে তিন জন করেই বসেছেন। তবে বসিরহাট শাখায় ভিড় তুলনায় কম হওয়ায় দু’জন করে বসেছিলেন যাত্রীরা। বেলা গড়াতে অবশ্য দু’টি শাখাতেই কিছুটা কমে যায় যাত্রীর সংখ্যা।

লকডাউনের আগে এই দুই শাখার ট্রেনে চেপে বসিরহাট, বামনগাছি, দত্তপুকুর, হাবড়া ও বারাসত থেকে কলকাতায় কাজে যেতেন বহু পরিচারিকা ও শ্রমিক। এ দিন হাসি ফুটেছে তাঁদের মুখে। কেউ ফের কাজে যোগ দিতে পেরেছেন। কেউ আবার কম সময়ে ও কম খরচে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছতে পেরেছেন। বেড়াচাঁপার বাসিন্দা চম্পা কাহার এ দিন বারাসতে পরিচারিকার কাজে যোগ দেন। তাঁর স্বামী নির্মাণ শ্রমিক। বাড়িতে রয়েছে তিন স্কুলপড়ুয়া মেয়ে। চম্পা বলেন, ‘‘লকডাউনে কী ভাবে সংসার চলেছে তা ভগবানই জানেন। ট্রেন না চললে হয়তো না খেয়েই মরতে হত।’’

আরও পডুন: ‘ক্যানসার তো কী? তিন জনের আসনে চার জন চেপে বসুন!’

প্ল্যাটফর্মে হকার বসা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এ দিন বিভিন্ন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অনেক দোকানই খোলা দেখা যায়। বারাসতের তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা বাসুদেব দাস বলেন, ‘‘এত দিন সবাই কোনও রকমে সংসার চালিয়েছেন। আজ একটু বেচাকেনা হয়েছে। দোকান খুলে রাখা গেলে ওদের একটু সুরাহা হবে।’’

এ দিন দমদম, মধ্যমগ্রাম, বারাসতের মতো বড় স্টেশনগুলিতে ঢোকার মুখে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটি স্টেশনে দেহের তাপমাত্রা মেপে, হাতে স্যানিটাইজ়ার দেওয়ার পরে ঢুকতে দেওয়া হয় যাত্রীদের। দুপুরে মধ্যমগ্রাম স্টেশনে ট্রেন ধরতে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আদিত্য দে। দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকায় ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। জ্বর থাকার জন্য কিছু যাত্রীকে বিভিন্ন স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ দিন সকালে বারাসত স্টেশনে পরিদর্শনে আসেন বারাসত পুলিশ জেলার সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। কেউ মুখে রুমাল বা আঁচল চাপা দিয়ে স্টেশনে ঢুকতে গেলে মাস্ক পরে আসতে বলা হয়।

প্রথম দিনের এমন ছবির পরে দূরত্ব-বিধি মানার উপায় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভিড়ের জন্য ট্রেনে উঠতে না পেরে বামনগাছির বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কালিদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ট্রেনের সংখ্যা না বাড়ালে কোনও ভাবেই দূরত্ব-বিধি মানা সম্ভব নয়।’’ তাঁর কথার প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে বহু যাত্রীর মুখে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দিনের ব্যস্ত সময়ে ট্রেন বেশি রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী ধাপে ট্রেন বাড়ানো হবে। যাত্রীদের যাতে অসুবিধা না হয়, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Local Train Indian Railways Rail Passengers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE