নরেন্দ্রপুরে পসরা সাজাচ্ছেন দোকানি। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
শহর ও শহরতলি মিলিয়ে মোট ৩০টি জায়গা। আপাতত সেই জায়গাগুলির দিকেই নজর সকলের। কারণ, গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে ওই এলাকাগুলি থেকেই বাজি সংক্রান্ত অভিযোগ এসেছে সব চেয়ে বেশি। আরও অভিযোগ, সব জেনেও প্রশাসন প্রতি বছরই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘নিষ্ক্রিয়’ থেকেছে। তাই বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পরে এলাকাভিত্তিক ‘বাজি তাণ্ডব’-এর চিরাচরিত চিত্র পাল্টাবে কি না, আপাতত সেটাই আলোচনার কেন্দ্রে।
প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাজিতে অতিষ্ঠ যে সমস্ত এলাকা, তাদের আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য ভাবে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছরই কিছু নতুন এলাকা যোগ হচ্ছে সেই তালিকায়। অর্থাৎ, শহরে বাজি-তাণ্ডবের ধারার ধাপে ধাপে সম্প্রসারণ হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনের মতো দীর্ঘ গত কয়েক বছর ধরে শহরের বাজি সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ করছে পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-ও। ওই সংগঠনের সম্পাদক নব দত্তের কথায়, ‘‘আগে মূলত দক্ষিণ কলকাতা এবং সংযুক্ত এলাকা থেকেই বাজি সংক্রান্ত অভিযোগ আসত।
কিন্তু কয়েক বছর ধরে উত্তর কলকাতার কিছু জায়গা থেকেও অভিযোগ আসতে শুরু করেছে।’’ সংগঠনের কন্ট্রোল রুমে গত বছর বাজি সংক্রান্ত যে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তৈরি তালিকায় যেমন লেক টাউন, দমদম, বাঙুর, চিৎপুর, শ্যামবাজার, বাগবাজার রয়েছে, তেমনই রয়েছে যাদবপুর, গড়িয়াহাট, কসবা, বাঘা যতীন, টালিগঞ্জ, বেহালার মতো জায়গাও। ফলে ওই এলাকাগুলিতে বাজি-দূষণ রুখতে এ বার পুলিশ কতটা সফল হবে, তার উপরেই করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি অনেকাংশে নির্ভর করবে বলে ধারণা অনেকের।
আরও পড়ুন: সৌরভ বা শুভেন্দু? পদ্মের মুখ নিয়ে রহস্য বাড়ালেন অমিত
কারণ, বাজির ধোঁয়া যে শরীরে করোনা প্রবেশের পথ প্রশস্ত করতে পারে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। জাতীয় পরিবেশ আদালতও সম্প্রতি বাজি সংক্রান্ত এক মামলার নির্দেশে বলেছে—‘ভাইরাসের সংক্রমণ, বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম) এবং অ্যাঞ্জিয়োটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম ২ রিসেপ্টর (এসিই ২), যা ফুসফুসের কোষের মধ্যে করোনাভাইরাস প্রবেশের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে, তাদের মধ্যে সক্রিয় আন্তঃসম্পর্ক (পজ়িটিভ কো-রিলেশন) রয়েছে বলে দেখা গিয়েছে।’ ফলে এই পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণের ভয় প্রতি বছরের বাজি-তাণ্ডব রুখতে পারবে কি না, সে দিকেই তাকিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ।
তবে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে বাজি ফাটানো, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ না মেনে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো— আদালতের
এমন বহু নির্দেশ ভাঙার ‘সংস্কৃতি’ এ রাজ্যে রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা সংক্রমণ রাতারাতি এই অভ্যাসে বদল আনবে, তেমন আশা করা অতিরিক্ত হয়ে যাবে!’’ আর এক পরিবেশকর্মী অজয় মিত্তল বলেন, ‘‘অন্য রাজ্য যদি আদালতের রায় মেনে বাজি নিষিদ্ধ করতে পারে, এ রাজ্যেরও না পারার কারণ নেই।’’
আরও পড়ুন: ক্ষতি পুষিয়ে দেবে রেল, পরিষেবা না পাওয়া দিন যোগ করে মেয়াদ বাড়বে সিজন টিকিটের
যদিও পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে চলতি বছরে বাজি-দূষণ আটকাতে আদালতের রায়ের আগে থেকেই একটি প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি হয়েছিল। এ বার তার বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত হবে। পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের কথায়, ‘‘আদালতের রায় মানার জন্য যা করা দরকার, আমরা তা-ই করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy