Advertisement
E-Paper

‘আমি পালাইনি, যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে রাজি’, বললেন যাদবপুরের প্রাক্তন ছাত্রনেতা ‘আলু’

ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্টে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন অরিত্র। তিনি কাশ্মীরে গিয়েছিলেন। এত দিন ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় তাঁর নীরবতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। তার জবাব দিয়েছেন প্রাক্তন ছাত্রনেতা।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৩ ১০:২৫
Ex Student Union leader Aritra Majumdar speaks up on Jadavpur University Case.

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা অরিত্র মজুমদার ওরফে ‘আলু’। ছবি: ফেসবুক।

তাঁর বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ নেই। তবে যে অভিযোগটি আছে, তা গুরুতর। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রনেতা অরিত্র মজুমদার ওরফে ‘আলু’র নাম আগেই জড়িয়ে গিয়েছিল ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে। পুলিশ তাঁর নাম না করলেও সমাজমাধ্যম থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম, দিনের পর দিন চর্চা চলেছে ‘আলু’কে নিয়ে। তাঁর নীরবতা জল্পনায় আরও ঘি ঢেলেছে। মঙ্গলবার সকালে অবশেষে নীরবতা ভাঙলেন সেই বহুচর্চিত ‘আলু’।

ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্টের মাধ্যমে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন অরিত্র। তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যম এবং সমাজমাধ্যমে ওঠা অভিযোগগুলিকে মোট দু’ভাগে ভাগ করেছেন তিনি। এক, তিনি সেই রাতে হস্টেলে ছিলেন এবং তাঁর উপস্থিতিতেই তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছে। এই অভিযোগ অস্বীকার করে অরিত্র জানিয়েছেন, যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে তিনি কোনও ভাবেই জড়িত নন। এমনকি, তাঁর দাবি, গত ৯ অগস্ট রাতে তিনি মেন হস্টেলে ঢোকেনইনি। যেতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের বেসরকারি হাসপাতালেও, যেখানে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছিল নদিয়ার ছাত্রকে। তদন্ত করলে সেই রাতে হস্টেলে তাঁর অনুপস্থিতি সহজেই প্রমাণিত হবে বলে জানিয়েছেন অরিত্র।

এ ছাড়া, অরিত্রের বিরুদ্ধে ওঠা দ্বিতীয় অভিযোগ, তিনি ঘটনার পর থেকে ‘পলাতক’। রাজ্যের শাসকদলের কোনও প্রভাবশালী নেতার ‘ছত্রছায়ায়’ তিনি লুকিয়ে আছেন বলেও কেউ কেউ প্রচার করেছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অরিত্র তথ্য এবং প্রমাণ দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গত ১০ অগস্ট তিনি কলকাতা ছাড়েন। গন্তব্য কাশ্মীরের গ্রেট লেকস্। এই ট্রেকের কথা অনেক দিন আগে থেকেই ঠিক হয়ে ছিল বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন ওই ছাত্রনেতা। চার মাস আগে থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসের টিকিট এবং দিল্লি থেকে শ্রীনগরগামী বিমানের টিকিট কাটা ছিল তাঁর। ফেসবুকে টিকিটগুলির ছবি প্রকাশ করেছেন অরিত্র।

অরিত্র লিখেছেন, ‘‘গত ১০ অগস্ট, ট্রেন ধরার আগে সকালে আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। যাঁরা সেই রাতের ঘটনার পরেই আমার ফেরার হওয়া নিয়ে প্রচার করছেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গে দেখাও হয়েছিল সে দিন। আমি ট্রেকে যাব, সে কথা আমার রিসার্চ গাইডকে আগেই জানিয়েছিলাম।... তার পরেও আমাকে নিয়ে ফেসবুকে এবং মিডিয়ায় টানা ‘পলাতক’ প্রচার চলেছে।’’

তথ্যপ্রমাণ যাচাই না করেই সত্য ‘গড়ে-পিটে’ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি অরিত্রের। একেও একপ্রকার ‘নির্যাতন’ বলেই মনে করছেন তিনি। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, র‌্যাগিংয়ের ঘটনার সঙ্গে তিনি কোনও ভাবে যুক্ত না থাকলেও এই ঘটনায় নিজেরও ব্যর্থতার দায় তিনি এড়াতে পারেন না। কারণ, ক্যাম্পাসকে র‌্যাগিংমুক্ত রাখার নৈতিক এবং রাজনৈতিক দায় তিনি পালন করতে পারেননি। সেই দায় মাথায় নিয়েই ঘটনার পর ছাত্র সংসদের ‘সভাপতি’ পদ থেকে ইস্তফাও দিয়েছিলেন অরিত্র।

এর পরেই ফেসবুক পোস্টে অরিত্র জানান, তিনি এই ঘটনা সম্পর্কিত যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে রাজি। কলকাতায় শীঘ্রই ফিরে আসছেন। বাঁশদ্রোণীর ফ্ল্যাটে তাঁকে পাওয়া যাবে। নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি এবং র‌্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়ে পোস্ট শেষ করেছেন অরিত্র। তাঁর এই নীরবতাভঙ্গে অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলল বলে মনে করা হচ্ছে।

বস্তুত, মৃত ছাত্রের পরিবারের তরফে অরিত্রের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে গবেষণারত। তবে ঘটনার পরেই অভিযোগ ওঠে, অভিযুক্ত ছাত্রনেতা সৌরভ চৌধুরী এক প্রাক্তন ছাত্রনেতাকে ফোন করেছিলেন। সেই প্রাক্তন নেতা অরিত্র এমন অভিযোগ পুলিশের কাছেও পৌঁছয় বলে সূত্রের দাবি। যদিও এ বিষয়ে লালবাজার থেকে বার বারই প্রকাশ্যে বলা হয়েছে, ওই প্রাক্তন ছাত্রনেতার খোঁজ তারা আদৌ করেনি।

অরিত্রের নাম শোনা গিয়েছিল এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যের মুখে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সেই রাতে গেট বন্ধ করে রাখা, পুলিশকে ঢুকতে না দেওয়ার নির্দেশের নেপথ্যে অরিত্র মজুমদার-সহ দুই নেতার কী ভূমিকা ছিল? প্রভাবশালীর হাত মাথার উপরে আছে বলেই কি পুলিশ-প্রশাসন এ সব দেখেও দেখছে না?’’ আর একটি ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটে (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) অরিত্র এবং আর এক জন ছাত্রনেতার নাম উঠে এসেছিল। মঙ্গলবার সব অভিযোগই উড়িয়ে দিলেন ‘আলু’।

তবে উল্লেখ্য, অরিত্র দাবি করছেন তিনি ১০ তারিখ কাশ্মীরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। কিন্তু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান পার্থ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘১১ অগস্টও বিভাগীয় প্রধানের দফতরে উপস্থিতির খাতায় অরিত্রের স্বাক্ষর রয়েছে।’’ ১০ তারিখ কলকাতা ছাড়লে উপস্থিতির খাতায় তাঁর স্বাক্ষর কোথা থেকে এল? আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হলে এই প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি অরিত্র। তিনি জানান, অন্য কোনও তারিখে হয়তো ভুলবশত স্বাক্ষর করা হয়ে গিয়েছিল। এই স্বাক্ষর ঘিরে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Jadavpur University Student Death Jadavpur University facebook post
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy