আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছিল কোথায়? ঘটনাস্থল ঘুরে দেখতে চাইলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। এই আর্জি নিয়ে তাঁরা শিয়ালদহ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের আর্জি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকেও তুলোধনা করেছেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক। বলেছেন, ‘‘সিবিআইয়ের অবস্থা শোচনীয়।’’
কেন সিবিআইকে ধমক? আরজি করের নির্যাতিতার পরিবার জানায়, ঘটনাস্থল তারা আলাদা করে ঘুরে দেখতে চায়। পরিবারের এই আবেদনে আপত্তি করেনি সিবিআই। তারা ‘নো অবজেকশন’ দিয়ে দিয়েছে। কেন তা দেওয়া হল? কেন সিবিআইয়ের তরফে এতে আপত্তি করা হল না? প্রশ্ন তুলেছে আদালত। বিচারকের মন্তব্য, ‘‘সিবিআইয়ের অবস্থা শোচনীয়। তদন্তকারী সংস্থা হয়েও কেন তারা এতে আপত্তি করল না, বুঝতে পারছি না। এই ঘটনার বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের মামলার তদন্ত তো এখনও চলছে। তার জন্য অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কেন তাঁদের গ্রেফতার করা হল তা হলে? সিবিআইয়ের এই ভূমিকা অবাক করার মতো।’’
আরও পড়ুন:
নির্যাতিতার পরিবার এই আবেদন নিয়ে এর আগে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থও হয়েছিল। সেখান থেকে নিম্ন আদালতে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। পরিবারের বক্তব্য, তারা স্বতন্ত্র ভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে চায়। কিন্তু আদালতের মন্তব্য, সিবিআই এই ঘটনার তদন্ত করছে। এর পরেও পরিবার কী করে এই আবেদন জানায়? নির্যাতিতার বাবা-মা কি পৃথক এবং সমান্তরাল কোনও তদন্ত চাইছেন? একটি সংস্থার তদন্ত চলাকালীন তো ব্যক্তিগত ভাবে কাউকে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার অনুমতি দেওয়া যায় না।
রাজ্যের তরফে নির্যাতিতার পরিবারের আবেদনের বিরোধিতা করা হয়েছে প্রথম থেকেই। বিরোধিতা করেছেন আরজি কর-কাণ্ডের ষড়যন্ত্রে অন্যতম অভিযুক্ত হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের আইনজীবীরা। আদালত জানায়, অভিযুক্তদের আপত্তি জানানোর কোনও প্রয়োজনই ছিল না এ ক্ষেত্রে। কারণ এই আবেদনের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ নেই।
রাজ্যের তরফে আপত্তি করে জানানো হয়, আরজি করের ঘটনায় এক অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁর শাস্তি ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় তাই আইনত পরিবারের ঘটনাস্থল পরিদর্শনের আবেদন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নতুন করে তদন্তের আবেদনও হাই কোর্টে গ্রাহ্য হয়নি। ফলে এই সংক্রান্ত শুনানির এক্তিয়ার নেই এই আদালতের। একই ভাবে পরিবারের ঘটনাস্থলে যাওয়ারও এক্তিয়ার নেই।
উল্লেখ্য, আরজি কর-কাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে এর আগেও প্রশ্ন উঠেছিল। প্রথম থেকেই নির্যাতিতার পরিবার কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করে আসছে। সিবিআই চার্জশিট দিতে দেরি করার কারণে সন্দীপ এবং অভিজিৎ জামিনও পেয়ে গিয়েছেন। অভিজিৎ জেলের বাইরে থাকলেও সন্দীপ অন্য মামলায় এখনও জেল খাটছেন। বুধবার আদালতে সিবিআইয়ের চার্জশিটে দেরির সেই প্রসঙ্গও উঠেছিল।