কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গে সিবিআইয়ের শীর্ষকর্তা সম্পৎ মীনার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলল আরজি করে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবার। বুধবার শিয়ালদহ আদালতে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। সেখানেই নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী দুই আইপিএস অফিসারের যোগাযোগের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি জানান, বিনীত এবং সম্পৎ একই ব্যাচের আইপিএস। অর্থাৎ, তাঁদের প্রশিক্ষণ একসঙ্গে হয়েছিল এবং তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। সেই কারণে বিনীতের বিরুদ্ধে সিবিআই কোনও পদক্ষেপ করবে না। সঠিক ভাবে হবে না তদন্ত। এমনটাই আশঙ্কা নির্যাতিতার পরিবারের। তাদের এই দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে সিবিআই। তাঁদের পাল্টা বক্তব্য, ব্যাচমেট হওয়া অপরাধ নয়। বিনীতের বিরুদ্ধে অপরাধে যুক্ত থাকার কোনও প্রমাণ মেলেনি। সেই কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সঞ্জয় রায়কে। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তদন্ত চলছে। ওই ঘটনার সময়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার ছিলেন বিনীত। কলকাতা পুলিশই সঞ্জয়কে গ্রেফতার করেছিল ঘটনার পরের দিন। কিন্তু বিনীতের একাধিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা সেই সময়ে তাঁর ইস্তফার দাবিও জানিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিনীতকে পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেন। তার পরেও বিতর্ক থামেনি।
আরও পড়ুন:
বুধবার আদালতে আরজি কর-কাণ্ডের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই। নির্যাতিতার আইনজীবী ফিরোজ় এডুলজি এই মামলার তদন্তকারী অফিসারের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। টেনেছেন উত্তরপ্রদেশের হাথরস কাণ্ডের প্রসঙ্গ। অভিযোগ, আরজি করের ঘটনায় সিবিআইয়ের যে তদন্তকারী অফিসার রয়েছেন, তিনিই ছিলেন হাথরসে। উত্তরপ্রদেশের ওই ঘটনায় তিন জন অভিযুক্ত খালাস পেয়ে যান। এক জন দোষী সাব্যস্ত হন, আদালতে জানিয়েছেন পরিবারের আইনজীবী। এ ছাড়াও তাঁর বক্তব্য, বিনীত এবং সম্পৎ ব্যাচমেট। তাই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে না।
সিবিআইয়ের আইনজীবী এর জবাবে বলেন, ‘‘ব্যাচমেট হওয়া অপরাধ নয়। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছি। সমস্ত সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয়েছে। বিনীতের বিরুদ্ধে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি, অভিযুক্তের ডিএনএ নমুনা পাওয়া গিয়েছে ঘটনাস্থল থেকে। তা-ও কি আমরা অন্য দিকে তদন্ত চালাব?’’
বিচারক জানতে চান, সিসিটিভিতে কী পাওয়া গিয়েছে? সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, মোট ৩২টি সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়েছে। হাসপাতালে কে আসছেন, কে যাচ্ছেন, সব দেখা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘হাথরসের ঘটনায় আদালতের নির্দেশ রয়েছে। আমরা কিছুতে ভয় পাই না। মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও আমরা তদন্ত করেছি।’’
নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী এর পর জানান, ঘটনাস্থলে পৌঁছোনোর জন্য আরও দু’টি রাস্তা রয়েছে। কিন্তু সিবিআই কেবল একটি জায়গার সিসিটিভি ফুটেজই দেখেছে, যেখানে সঞ্জয়কে দেখা গিয়েছে। আইনজীবী বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের একটাই বক্তব্য, অভিযুক্তের সাজা হয়ে গিয়েছে। আদালত তাদের কাছ থেকে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট চেয়েছে। কিন্তু তদন্তের আদৌ কোনও অগ্রগতি হয়েছে? নির্যাতিতার সঙ্গে যে চার জন ডাক্তার ছিলেন, তাঁদের কি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে?’’ ডাক্তার না হয়ে গ্রুপ-ডি কর্মী হলে সিবিআই একই কাজ করত কি না, প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী।
সিবিআই আদালতে জানায়, শুধু হাসপাতাল নয়, বাইরের ট্র্যাফিকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও তারা খতিয়ে দেখেছে। সমস্ত তথ্য উদ্ধার করে দেখা হয়েছে। চার জনের ‘লাই ডিটেক্টর টেস্ট’ করা হয়েছে। সঞ্জয়ের ডিএনএ-র সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া নমুনা মিলে গিয়েছে। এর পরেও বিনা অপরাধে কাউকে কেন গ্রেফতার করা হবে? প্রশ্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার আইনজীবীর। তিনি বলেন, ‘‘সঞ্জয়কে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। সে-ই প্রথম থেকে অভিযুক্ত। এই ঘটনায় আর কোনও অভিযুক্ত পাওয়া যায়নি।’’ নির্যাতিতার পরিবারের কথায় কাউকে গ্রেফতার করা হবে না, স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। গ্রেফতার করা হবে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে।
নির্যাতিতার পরিবারের বক্তব্যের সূত্র ধরে আক্রমণ শানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার। বলেছেন, ‘‘শুনতে খারাপ লাগলেও এটা সত্য যে, ভারতে যত আইএএস-আইপিএস আধিকারিক রয়েছেন, যাঁরা পরস্পরের ব্যাচমেট, তাঁরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের খুব ভাল বন্ধু এবং বিপদে পড়লে তাঁরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেন। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না। আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। সমঝদারো কে লিয়ে ইশারা হি কাফি হ্যায়।’’