Advertisement
০৪ মে ২০২৪
কলকাতা পুলিশের মালখানা পরিষ্কার করতেই বেরিয়ে এল থমকে থাকা সময়
Kolkata Police

Bhawanipore PS: যৌন হেনস্থা ও ধর্ষণের অভিযোগ প্রায় ছিলই না ভবানীপুর থানায়!

মালখানায় অবহেলায় পড়ে থাকা স্তূপীকৃত সামগ্রীর নীচ থেকে বেরিয়ে এসেছে প্রাক্ স্বাধীনতা পর্বের এমন কিছু নথি, যা দেখে অবাক খাকি উর্দিধারী কর্তারা।

ঐতিহাসিক: ভবানীপুর থানা থেকে পাওয়া সেই গেজেট।

ঐতিহাসিক: ভবানীপুর থানা থেকে পাওয়া সেই গেজেট। ছবি: কলকাতা পুলিশ।

সুনন্দ ঘোষ ও শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২১ ০৬:৪৮
Share: Save:

ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত। দেশ জুড়ে স্বাধীনতার দাবিতে গর্জে উঠছিলেন মানুষ। সেই সময়ের থানায় রাখা সাধারণ অপরাধীদের নথি থেকে বেরিয়ে এসেছে বহু অজানা তথ্য। থানার মালখানার ধুলো ঝেড়ে তা এখন চর্চার বিষয়। জাদুঘরে ঠাঁই পাওয়ার মতোই সেই সব নথি এত দিন থেকে গিয়েছিল অন্তরালে।

বছরের পর বছর মালখানায় অবহেলায় পড়ে থাকা স্তূপীকৃত সামগ্রীর নীচ থেকে বেরিয়ে এসেছে প্রাক্ স্বাধীনতা পর্বের এমন কিছু নথি, যা দেখে অবাক খাকি উর্দিধারী কর্তারা। খাস কলকাতা শহরের থানার মালখানায় প্রায় ৭৫ বছর ধরে পড়ে সেই সব নথি!

কী আছে নথিতে?

ভবানীপুর থানা থেকে পাওয়া গিয়েছে বেশ কিছু নথি। দেখা গিয়েছে, স্বাধীনতার আগে এলাকার সব অপরাধীদের ছবি ও বিস্তারিত তথ্য দিয়ে গেজেট প্রকাশ হত। সেটা প্রকাশ করা হত কলকাতা পুলিশের নামেই। সেই গেজেটে বহু যুবকের ছবি সাঁটা। তারই জীর্ণ পাতা ঘেঁটে মিলেছে খুলনার সাতক্ষীরায় ১৮৯৮ সালে জন্ম নেওয়া এক হরিসাধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সহ নাম। সেখানে থেকে পাওয়া তথ্য জানাচ্ছে, মেসোপটেমিয়ায় সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন হরিসাধন। ঠিক কী ধরনের কাজ করতেন সে কথা অবশ্য নথিতে লেখা নেই। তবে লেখা আছে, মেসোপটেমিয়ার সেনাবাহিনীতে কাজ করতে করতে তিনি সে দেশেই অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। কলকাতা পুলিশের নথি বলছে, সেখানে এক বছর জেলে ছিলেন তিনি। পরে ফিরে আসেন অবিভক্ত বাংলায়। ব্রিটিশ পুলিশের নথি বলছে, ফিরে এসে হাওড়া, ধানবাদ, পটনায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন হরিসাধন।

এ রকম অনেক হরিসাধনের তথ্য রয়েছে গেজেটে। কিন্তু তালিকায় কোনও নামী-অনামী স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম নেই। নিয়মিত ঘটনাবলি লিখে রাখার জন্য তৎকালীন ভবানীপুর থানায় যে ডায়েরি লেখা হত, ১৯৪৬ সালের সেই ডায়েরি পাওয়া গেলেও, স্বাধীনতার বছরেরটি অবশ্য মালখানায় পাওয়া যায়নি। অথচ তার পরের বছর ১৯৪৮ সালের ডায়েরি রয়েছে। তত দিনে ব্রিটিশ পুলিশের হাত ঘুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব চলে গিয়েছে দেশীয় পুলিশের হাতে।

১৯৪৬ এবং ১৯৪৮ সালের সেই ডায়েরি ঘেঁটে অফিসারেরা দেখেছেন, হার ছিনতাই, যৌন হেনস্থা, ধর্ষণের মতো মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের উল্লেখ নেই বললেই চলে। কিন্তু সাধারণ চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাইয়ের ঘটনার কথা লিপিবদ্ধ করা আছে। প্রচুর সাইকেল চুরির ঘটনাও ঘটত সেই সময়ে। স্বাধীনতার ঠিক এক বছর আগে দাঙ্গা, মারপিট এবং আন্দোলনের কথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি ওই সব ডায়েরি পড়ে।

সেই সময়ের তথ্য জানাচ্ছে, তখন অপরাধমূলক কাজের হিসেব রাখা হতো সাপ্তাহিক ভাবে। দেখা গিয়েছে, ১৯৪৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়া সপ্তাহে, ভবানীপুর থানা এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটেছিল ১১টি। যার মধ্যে ৩টির ক্ষেত্রেই পুলিশ চোর ধরতে সফল হয়ে যায়। পরিচারকের চুরি করার ঘটনা একটি ঘটেছিল। আর বাড়ি ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটেছিল ১০টি। অথচ আজকের যে এলাকা, তার চেয়ে অনেক বড় ছিল সেই সময়ের ভবানীপুর থানার এলাকা।

১৯৪৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। এক ব্রিটিশ নাগরিক ইয়ারনাস অ্যান্ডারসন থানায় অভিযোগ করেন, সাবার্বান হসপিটাল রোডে তিনি
গাড়ি দাঁড় করিয়ে কাজে গিয়েছিলেন। এসে দেখেন, গাড়ির হেডলাইট ও ভিতরে রাখা তেলের কুপন চুরি হয়ে গিয়েছে! ঘটনার তদন্তে
নেমেছিলেন বাঙালি অফিসার পি কে পাল। থানায় তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর হিসেবে ব্রিটিশ পুলিশ কে সি ডেলাও ছিলেন।

টুকরো টুকরো এই সব ইতিহাস কি আদৌ ধরে রাখা যাবে? নাকি ফের ঠাঁই হবে কোনও সিন্দুকে? কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) সি মুরলীধরের আশ্বাস, ‘‘আমরা এই সব নথি সংরক্ষণের চেষ্টা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE