ফাইল চিত্র।
সরকারিই হোক অথবা বেসরকারি, সব স্কুলের সব পড়ুয়াকে সমান চোখে দেখে শিক্ষা দফতর। তাই গরমের মধ্যে কিছু পড়ুয়া স্কুলে যাবে, অন্যেরা যাবে না— এই বিভেদ তৈরি করতে চায় না তারা। সেই জন্য সরকারি স্কুলের পাশাপাশি বেসরকারি স্কুলগুলিকেও গরমের ছুটি দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কেন বেসরকারি স্কুলও বন্ধ করা হল, তার যুক্তি হিসাবে এমনটাই জানিয়েছেন শিক্ষা দফতরের এক কর্তা। তাঁদের মতে, সেই নির্দেশ মেনে প্রায় সব বেসরকারি স্কুলই ইতিমধ্যে অনলাইন ক্লাস শুরু করে দিয়েছে।
অতিরিক্ত গরমের কারণে ২ মে থেকে সরকারি স্কুল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা দফতর। কিন্তু ছুটি পড়ার পরের দিন থেকেই তাপমাত্রা কমতে থাকে। কয়েক দফা ঝড়-বৃষ্টিও হয়। তখনই প্রশ্ন ওঠে, এই অবস্থায় সরকারি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হল কেন? স্কুল খোলার দাবি যখন উঠছিল, সেই সময়েই শিক্ষা দফতর বেসরকারি স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষকে ডেকে অবিলম্বে স্কুল বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। যা নিয়ে চরমে ওঠে বিতর্ক। প্রশ্ন ওঠে, শিক্ষা দফতর কি এ ভাবে বেসরকারি স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে?
এই ব্যাপারে শিক্ষা দফতরের কর্তাদের মত, পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা বৈষম্য রাখতে চাননি। সেই কারণে বেসরকারি স্কুলও বন্ধ রাখার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, ২ মে-র পর থেকে কিন্তু তাপমাত্রার পারদ ফের ওঠানামা করছে। মাঝে কিছু দিন গরম খানিকটা কম থাকলেও গত শুক্রবার রোদের তেজ ছিল যথেষ্ট। তাই এক বার তাপমাত্রা কমলে স্কুল খোলা হলেও যদি দেখা যায় গরমের তীব্রতা বাড়ায় দিনকয়েক বাদে তা আবার বন্ধ করে দিতে হল, তাতে ক্ষতি হবে পঠনপাঠনের। ভুগবে পড়ুয়ারা। তাই টানা দেড় মাস স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বহু শিক্ষকেরই আশঙ্কা, এই দীর্ঘ ছুটিতে পিছিয়ে থাকা পড়ুয়ারা বিভিন্ন বিষয়ে আরও পিছিয়ে পড়তে পারে। বিশেষত যেখানে সরকারি স্কুলের অনেক পড়ুয়া অনলাইন ক্লাস করার সুযোগ পায়নি। প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতির মতে, ‘‘বহু শিক্ষক বলেছিলেন, ২ তারিখ থেকেই ছুটি শুরু না করে দিন সাতেক স্কুল খোলা রেখে ছুটির আগে অন্তত প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়ন নিয়ে নিতে। এখন দীর্ঘ ৪৫ দিন ছুটির পরে কখন প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়ন হবে? কবেই বা হবে পরবর্তী সামগ্রিক মূল্যায়নগুলি? আর্থিক ভাবে অসচ্ছল পরিবারের ছাত্রেরা এত লম্বা ছুটিতে আবার না কাজে নেমে পড়ে।’’ ‘শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’-এর রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীও বলেন, ‘‘গরমের ছুটি দেওয়ার আগে প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়নের পাশাপাশি একাদশের প্র্যাক্টিক্যালও শেষ হয়ে গেলে ভাল হত।’’
তবে শিক্ষা দফতরের এক কর্তার মতে, স্কুল বন্ধ থাকলেও শিক্ষকেরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে গরমের ছুটির মধ্যে পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পড়াশোনায় সাহায্য করতে পারেন। তাদের ফোন করে খোঁজখবর নেওয়া, প্রয়োজনে ফোনে কথা বলে কোনও সমস্যার সমাধান করে দেওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে শিক্ষাকর্তাদের মত, স্কুল খুললে যদি দেখা যায় কিছু পড়ুয়া পিছিয়ে পড়েছে, তাদের জন্য আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। কয়েকটি স্কুল ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতি ঠিক থাকলে প্রতি বারের মতোই তারা ছুটির মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় ছোট করে হলেও সামার ক্যাম্প করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy