প্রতীকী ছবি।
মোবাইল ফোন চালু রয়েছে, অথচ বেশির ভাগ সময়েই ফোন করে সেই ব্যক্তিকে পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝেমধ্যেই এমন মেসেজ আসছে যার সঙ্গে হয় ওই মোবাইল নম্বর ব্যবহারকারীর কোনও যোগাযোগ নেই, অথবা আউটবক্সে এমন কিছু মেসেজ জমা হচ্ছে, যা তিনি কখনও কাউকে পাঠাননি!
লাগাতার এমন হতে থাকলে দ্রুত সতর্ক হতে বলছেন সাইবার গবেষকেরা। প্রয়োজনে পুলিশের দ্বারস্থ হতে বলছে লালবাজারও। কারণ, ব্যবহারকারীর অজানতেই তাঁর নম্বরের নকল সিম কার্ড বার করে প্রতারণার ফাঁদ পাতার একাধিক অভিযোগ সামনে আসছে গত কয়েক মাস ধরে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য জেনে এই ফাঁদ পাতা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
হোয়াটসঅ্যাপে ফাঁদ পাতা নিয়ে একটি ভিডিয়ো শনিবারই সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয় কলকাতা পুলিশ। তাতে জানানো হয়েছে, কারও হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করার জন্য প্রতারক নিজের মোবাইল ফোনে প্রথমে ওই মেসেজিং অ্যাপটি নামাচ্ছে। এ বার যখন অ্যাপটি কোন ফোন নম্বরের সঙ্গে যুক্ত হবে বলে জানতে চাইছে, তখন সেখানে কোনও এক ‘টার্গেটের’ মোবাইল নম্বর দেওয়া হচ্ছে। এর পরে সংশ্লিষ্ট মোবাইল নম্বর ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বলা হচ্ছে, ‘‘ভুল করে হোয়াটসঅ্যাপ অথেন্টিকেশন কোডটি আপনার কাছে চলে গিয়েছে।’’ এর পরে যে কোনও অছিলায় কোডটি জেনে নিতে পারলেই সেই ব্যবহারকারীর হোয়াটসঅ্যাপ চলে যাচ্ছে প্রতারকের হাতে।
সেখান থেকে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য জেনে নেওয়া তো বটেই, এমনকি পরিচিতদের থেকে অর্থসাহায্য চেয়ে লিঙ্ক পাঠানোর নামেও ঠকানো হচ্ছে। বহু ক্ষেত্রেই ওই অ্যাপের সাহায্যে ‘টার্গেট’ ব্যক্তির আধার বা প্যান কার্ডের মতো ব্যক্তিগত নথির তথ্যও বার করে নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি এ ভাবেই প্রতারিত হওয়া যাদবপুরের এক বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘এক সময়ে ঋণ নেওয়ার জন্য এক ব্যাঙ্ককর্মীকে আধার কার্ডের ছবি পাঠিয়েছিলাম। সেটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে রয়ে গিয়েছিল। সেই নথি বার করে নিয়েই আমার নামে নতুন করে ব্যাঙ্ক ঋণ নেওয়া হয়েছে।’’
মানিকতলা মেন রোডের বাসিন্দা স্নেহময় গঙ্গোপাধ্যায়ের আবার অভিযোগ, ‘‘এই ভাবেই হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করে গোপন তথ্য হাতিয়ে আমার নামে নতুন একটি সিম কার্ড বার করা হয়েছে। এক দিন হঠাৎ কয়েক দফায় আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়ার পরে বিষয়টি জানতে পেরেছি। পুলিশ তদন্ত করে বলেছে, আমার নামে আরও একটি সিম কার্ড বার করা হয়েছে। এমন কিছু যে হয়েছে, তা বুঝতেই পারিনি।’’
সাইবার তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে কাউকে ‘টার্গেট’ করে লাগাতার ব্যাঙ্ক পরিষেবা সংক্রান্ত ইমেল পাঠানো হচ্ছে। সেই সূত্রেই জেনে নেওয়া হচ্ছে তাঁর প্যান এবং আধার নম্বর। এর পরে পুলিশের কাছে সিম কার্ড হারানোর ভুয়ো অভিযোগ দায়ের করে টেলি অপারেটিং সংস্থার কাছ গিয়ে বলা হচ্ছে, সিমটি হারিয়ে গিয়েছে। এমনকি সই নকল করে বার করে নেওয়া হচ্ছে একই নম্বরের নতুন সিম কার্ড। সে ক্ষেত্রে আসল ব্যবহারকারী কখনও খেয়াল করছেন যে তাঁর সিম কার্ডটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গিয়েছে, আর না হলে পরিচিতদের থেকে শুনছেন, ‘‘তোমায় ফোন করলে অন্য কেউ ধরছে!’’ প্রতারিত ব্যক্তি যতক্ষণে থানায় যাচ্ছেন, ততক্ষণে ওই নম্বর ব্যবহার করে ওটিপি জেনে নিয়ে প্রতারক হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
তা হলে উপায়? লালবাজারের তদন্তকারীদের পরামর্শ, কাউকেই কোনও হোয়াটসঅ্যাপ কোড বলা যাবে না। ফোন নম্বরে কোনও সমস্যা হচ্ছে বুঝলেই দ্রুত সংশ্লিষ্ট টেলি অপারেটিং সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কোনও ভাবে টাকা খোয়া গেলেও পুলিশকে জানাতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। সাইবার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জানালে অনেক সময়েই হারানো টাকা উদ্ধার করে দেওয়া সম্ভব। সব সময়ে মাথায় রাখতে হবে, কোনও ব্যক্তিগত তথ্য অপরিচিত কাউকে কখনওই জানানো চলবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy