Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Fire Accident

Fire Acciddent: হল্কা থেকে বাঁচতে গিয়েই পড়লাম নীচে

গিয়ে দেখি, টালির ছাউনি দেওয়া দোতলার ঘর দাউদাউ করে জ্বলছে। জানলা দিয়ে বেরিয়ে আসছে আগুনের লেলিহান শিখা।

দগ্ধ: আগুন নিভে যাওয়ার পরে এমনই অবস্থা দোতলা বাড়িটির। রবিবার, নারকেলডাঙার কসাই বস্তিতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

দগ্ধ: আগুন নিভে যাওয়ার পরে এমনই অবস্থা দোতলা বাড়িটির। রবিবার, নারকেলডাঙার কসাই বস্তিতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

বিশেষ প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:৪৯
Share: Save:

বাড়ির সামনের রাস্তায় বসেছিলাম। এটা আমার প্রতিদিনের অভ্যাস। সারা দিন ভ্যান চালিয়ে রাতে বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া সেরে একটু রাস্তায় বসা। শনিবার রাতে আলোচনার বিষয় ছিল বিধাননগর পুরসভার ভোট। হঠাৎ কেউ এক জন এসে বললেন, কসাই বস্তিতে আগুন লেগেছে। প্রথমে গুরুত্ব দিইনি। ভাবলাম, বাচ্চারা কিছু ধরিয়েছে হয়তো। একটু পরে নিভে যাবে। কিন্তু চিৎকার কানে আসতেই সকলের সঙ্গে আমিও দৌড়ে যাই। সেখানে গিয়ে যে এমন ভয়ানক অবস্থা দেখব, কল্পনাতেও আসেনি।

গিয়ে দেখি, টালির ছাউনি দেওয়া দোতলার ঘর দাউদাউ করে জ্বলছে। জানলা দিয়ে বেরিয়ে আসছে আগুনের লেলিহান শিখা। আশপাশে থাকা মহিলা থেকে বাচ্চা, সবাই আতঙ্কে দৌড়োদৌড়ি করছিলেন। ভয়ে অনেকে কান্নাকাটিও জুড়ে দিয়েছিলেন। আগুনের তীব্রতা আর আশপাশে এতগুলো বস্তিবাড়ি। চার দিকে ঝুলে রয়েছে তারের জট। আগুন কোনও ভাবে ছড়াতে শুরু করলেই সব শেষ। তাই আতঙ্কিত হওয়াটাও স্বাভাবিক।

এ সব দেখে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। পাশ কাটিয়ে কোনওমতে উঠে পড়লাম পাশের উঁচু জায়গায়। আমার দেখাদেখি কয়েক জন উঠে পড়লেন পাশের বাড়ির দোতলায়।

তত ক্ষণে আগুন ছড়াতে শুরু করেছে। তাই কয়েক জন আগেই সেই উঁচু জায়গায় উঠে পড়েছিলেন। দমকলের অপেক্ষা না করে তাঁরা বালতি করে জল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা
করছিলেন।

কয়েক বার আমিও সে ভাবেই চেষ্টা করলাম। কিন্তু আগুনের যা তীব্রতা, ওই এক-দু’বালতির জলে কি কোনও কাজ হয়! সত্যি বলতে কী, হচ্ছিলও না। তাই আর জলের ভরসায় থাকলাম না। সকলে মিলেই বালি-পাথর জড়ো করে উঁচু জায়গা থেকে আগুনের উপরে ছুড়ে দিতে লাগলাম। এর মধ্যেই দেখি, এক জন পাশের বাড়ির ট্যাঙ্ক থেকে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।
শুরু হল সেই জল দিয়ে আগুনের সঙ্গে লড়াই।

এ ভাবে বেশ কিছু ক্ষণ চলার পরে আচমকাই একটা বিকট আওয়াজ। আগুনের হল্কা যেন আমাদের দিকে ছুটে এল। সেই হল্কা থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়েই তারে জড়িয়ে পড়ে গেলাম নীচে।
ওঠার ক্ষমতা ছিল না। তার মধ্যেই তাকিয়ে দেখি, রক্তে ভেসে যাচ্ছি। সবাই ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসে শুনি, দমকলের কর্মীরাই আগুন নিভিয়ে দিয়েছেন।

শহরের এ দিক-ও দিক আগুন লাগার কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু সেই আগুন যে আমার বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে লাগবে তা কখনও ভাবিনি। পা আর মাথার ক্ষত কয়েক দিনেই শুকিয়ে যাবে। কিন্তু এই ভয়ের স্মৃতি হয়তো আমায় সারা জীবন তাড়া করে বেড়াবে।

লেখক- পারভেজ আলম ভ্যানচালক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Accident Massive fire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE