Advertisement
০৫ মে ২০২৪

লন্ডনের ধাঁচে কলকাতায় এ বার ‘ব্লু প্লাক’, বসবে এই সব রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকানে

ভোজ-সংস্কৃতিও একটি ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক নির্মাণ বলে মনে করে ইউনেস্কো।

কলকাতাক ভোজনরসিকদের প্রিয় চাইনিজ পদ।

কলকাতাক ভোজনরসিকদের প্রিয় চাইনিজ পদ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৪
Share: Save:

কোনটা কলকাতার পরিচয়? তা কি নিছকই ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিসৌধ বা হাওড়া ব্রিজ? বা উত্তর কলকাতার সাবেক খিলান-বারান্দা কি অফিসপাড়ার সুদৃশ্য গির্জাচুড়ো? তা হলে, অনেকের কাছে কলকাতা-আবেগের সমার্থক, প্রিয় বিরিয়ানি বা পুরনো সন্দেশ-ঘরানা কেন স্বীকৃতি পাবে না?

শহরের ঐতিহ্য-ইতিহাসকে অন্য ভাবে পড়ার চেষ্টা এ বার শুরু হয়ে গেল কলকাতায়। অনেকটা লন্ডনের ধাঁচে ‘ব্লু প্লাক’ বা ‘নীল ফলক’ বসছে শহরের ভোজ-রসিকদের প্রিয় ১৪টি ঠিকানায়। লন্ডনে এমন রীতি বিখ্যাতদের স্মৃতিজড়িত ইতিহাস মাখা বাড়িতে। ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারের শরিক সর্বভারতীয় সংগঠন ‘ইনট্যাক’-এর তরফে কলকাতাতেই গোটা দেশে সবার আগে এমন চেষ্টা শুরু হয়েছে। ইনট্যাক-এর রাজ্য আহ্বায়ক গৌরমোহন কপূরের কথায়, ‘‘কলকাতার পুরনো কাফে, কেবিন, মিষ্টির দোকান বা রেস্তরাঁগুলির মধ্যে ১৯৬০-এর আগের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা বেছে নিয়েছি, যারা একটা নিজস্ব ঘরানা বয়ে চলেছে।’’ এই রীতি মেনে কড়াপাক-নরমপাক খ্যাত ভীম নাগ, নকুড় নন্দী, চিংড়ির কাটলেট-খ্যাত উত্তর কলকাতার অ্যালেন কেবিন থেকে শুরু করে সাবেক চিনে রান্নার ইউ চু বা স্টেক-সিজ়লার বিশারদ মোক্যাম্বো, কোয়ালিটির মতো পুরনো রেস্তরাঁকেও শনিবার সম্মাননা প্রদান করা হল।

ইউনেস্কো-র ‘ইনট্যানজিব্‌ল কালচারাল হেরিটেজ’ চিহ্নিত করার ধাঁচে কলকাতাতেও নিছকই প্রাচীন সৌধের বাইরে অন্য ঐতিহ্যকে চিহ্নিত করতে চেয়ে অবশ্য আগেই রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পেড়েছিল রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। সরকারি সূত্রের খবর, বিষয়টিতে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এর আগেই নীল ফলক বসিয়ে শহরের ভোজ-ঘরানার ঐতিহ্যকে চিহ্নিত করার কাজ শুরু হচ্ছে। সদর স্ট্রিটের হেরিটেজ-ঠিকানা ফেয়ারলন হোটেলে এ দিন কয়েকটি পুরনো ভোজশালার নাম ঘোষণা করা হয়। বাছাই খাদ্য বিপণিগুলি নানা ভাবেই শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও শরিক হয়ে উঠেছে। সিরাজ, সাবিরের মতো মোগলাই রেস্তরাঁ, রসগোল্লা-খ্যাত কেসি দাশ, ইন্ডিয়া কফি হাউস, কাটলেট-ডেভিলখ্যাত নিরঞ্জন আগার, দিলখুসা কেবিন, সরবত বিশারদ প্যারামাউন্টকেও বেছে নেওয়া হয়েছে।

এ দেশের ছৌ, কুম্ভমেলা, রামলীলার মতো অনেক কিছুই ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তালিকায় পড়ে। আবার ভোজ-সংস্কৃতিও একটি ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক নির্মাণ বলে মনে করে ইউনেস্কো। প্রাচীন মেক্সিকান রান্নাশৈলী বা ভূমধ্যসাগরীয় ভোজ ঘরানাও তাদের ঐতিহ্য তালিকায় রয়েছে। ‘‘কলকাতা বা বাংলার খাবারের নানা ঘরানাই মুছে যাচ্ছে। সেখানে স্বাদ-ঘরানারও এক ধরনের স্বীকৃতি অবশ্যই প্রাপ্য।’’ বলছেন রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদস্য তথা হেরিটেজ স্থপতি পার্থরঞ্জন দাশ। ঐতিহ্য বজায় রাখতেই নকুড়ের মিষ্টির দোকান, সন্দেশ তৈরি ছাড়া অন্য কিছুতে হাত দেয় না। আবার উত্তর কলকাতার অ্যালেন কিচেন দক্ষিণে শাখা খুলেও নিজেদের কাটলেটের ঐতিহ্য ধরে রাখে। তবে ব্যক্তি বা পারিবারিক মালিকানাধীন রেস্তরাঁ অনেক সময়ে মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয় এটাও মাথায় রাখা দরকার বলে মনে করছেন ঐতিহ্য বা সংরক্ষণবিদেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Foods Kolkata Drinks Intac Blue Plaque
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE