প্রায় ১১ বছর পর আবারও ঠিকা-প্রজা স্বীকৃতি বা ঠিকা-প্রজা সার্টিফিকেট বিতরণের প্রক্রিয়া শুরু করল কলকাতা পুরসভা। গত সপ্তাহেই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের হাত থেকে ২৭ জন আবেদনকারী তাঁদের বহুপ্রতীক্ষিত শংসাপত্র গ্রহণ করেন। দীর্ঘ দিন প্রক্রিয়াটি বন্ধ থাকায় নাগরিকেরা যেমন নানা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তেমনই রাজস্ব হারিয়েছে পুরসভাও। এ বার সেই অচলাবস্থা কাটাতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুর প্রশাসন। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাস থেকে ঠিকা-প্রজা সার্টিফিকেট প্রদান বন্ধ ছিল। তবে বছর বছর অসংখ্য আবেদন জমা পড়লেও কোনও অগ্রগতি হয়নি। অবশেষে রাজ্য মন্ত্রিসভা নতুন ভাবে তালিকা প্রণয়নের অনুমতি দেওয়ায় ফের শুরু হল এই প্রক্রিয়া। বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন স্বয়ং মেয়র ফিরহাদ। তাঁর নির্দেশে চলতি বছরের ২ জুন থেকে আবেদনপত্র বিলি শুরু হয়। কলকাতার ১ থেকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এই সুবিধা পাবেন।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে আবেদনকারীদের। সব খতিয়ে দেখে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে দেওয়া হচ্ছে সার্টিফিকেট। মেয়র নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী ছ’মাসের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
আরও পড়ুন:
পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সরকারি পরিভাষায় এই সার্টিফিকেট প্রদানের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘রিটার্ন’। এত দিন যাঁরা ঠিকা জমিতে বসবাস করছিলেন, তাঁদের কোনও আইনি স্বীকৃতি ছিল না। ফলে সরকারি পরিষেবা গ্রহণে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছিল। কিন্তু রিটার্ন জমা দিয়ে শংসাপত্র হাতে পেলে আবেদনকারীরা সরাসরি সরকারকে গ্রাউন্ড রেন্ট বা জমির ভাড়া দিতে পারবেন। পাশাপাশি বাড়ির মিউটেশন, অ্যাসেসমেন্ট করানোও সহজ হবে। প্রয়োজনে পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি নির্মাণের অনুমতিও পাওয়া যাবে।
এর ফলে যেমন নাগরিকদের সুবিধা হবে, তেমনই পুরসভার আয় বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা নেবে ঠিকা-প্রজা সার্টিফিকেট। পুরসভা কর্তৃপক্ষের আশা, জমির ভাড়া, মিউটেশন এবং অ্যাসেসমেন্ট বাবদ রাজস্ব উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। দীর্ঘ ১১ বছর পর ফের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় বহু নাগরিকেরই স্বস্তি মিলেছে। এক জন আবেদনকারী বলেন, “আমরা এত দিন নানা পরিষেবা নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়তাম। এখন শংসাপত্র হাতে পাওয়ায় আইনি স্বীকৃতি মিলল। এতে ভবিষ্যতে আর কোনও অসুবিধা হবে না।” কলকাতা পুরসভার মতে, ঠিকা-প্রজা সার্টিফিকেট শুধু নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষিত করবে না, শহরের আর্থিক শৃঙ্খলাকেও আরও মজবুত করবে।