Advertisement
০১ এপ্রিল ২০২৩

ভাগাড়ের পচার সঙ্গে তাজা মাংস, প্যাকেট যেত রেস্তরাঁয়

পুলিশ জানিয়েছে, নারকেলডাঙার হিমঘরে দু’টি গুদামে মৃত পশুর মাংস সংরক্ষণ করা হত। বুধবার যে পাঁচ জন গ্রেফতার হয়, তার মধ্যে তিন জনকে ধরা হয়েছিল নারকেলডাঙা থেকেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ১৭:৫৬
Share: Save:

ভাগাড়ের মাংস কারবারের তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই তদন্তকারীদের হাতে উঠে আসছে নতুন নতুন তথ্য। এ বার তাঁরা দাবি করলেন, নারকেলডাঙার হিমঘরে সংরক্ষিত মৃত পশুর মাংস পাচার করা হত নেপালে। মঙ্গলবার রাতে পাচার চক্রের এক পাণ্ডা সানি মালিককে বিহার থেকে ধরা হয়। তাকে জেরা করে বুধবার কলকাতা-সহ আশপাশের এলাকা থেকে পাকড়াও করা হয় আরও পাঁচ জনকে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, নারকেলডাঙার হিমঘরে দু’টি গুদামে মৃত পশুর মাংস সংরক্ষণ করা হত। বুধবার যে পাঁচ জন গ্রেফতার হয়, তার মধ্যে তিন জনকে ধরা হয়েছিল নারকেলডাঙা থেকেই। লন্ডা নামে পাচার-চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয় ট্যাংরা থেকে। আর এক জন, সরাফত হোসেন গ্রেফতার হয় কাঁকিনাড়া থেকে। সূত্রের খবর, ধৃত পাঁচ জনের মধ্যে এক জনের নাম ইয়ুং চাই হাসিও। ওই হিমঘরে তারও একটি গুদাম রয়েছে। সে সানিদের থেকে মৃত পশুর মাংস কিনত।

ধৃতদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার পরে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, পাচার চক্রের মূল পাণ্ডা বিশুর মতো হাসিও সানিদের থেকে মাংস কিনে বিক্রি করত। তদন্তকারীদের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক কবুল করেছে, কলকাতা থেকে ফ্রিজার ভর্তি করে লরিতে মাংস চাপিয়ে সে নেপালে রফতানি করত। হাসিও এবং বিশুর আমদানি-রফতানির লাইসেন্স রয়েছে। হাসিওকে দফায় দফায় জেরা করছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের আরও দাবি, নেপালের এজেন্টের কাছেও এই মাংস পাচার করা হয়েছে। বিশুর খোঁজ অবশ্য এখনও পায়নি পুলিশ।

কী ভাবে চলত গোটা কারবার? পুলিশ বলছে, সানি ও সরাফত বিভিন্ন ভাগাড় থেকে মৃত পশুর মাংস ও চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে আসত। নারকেলডাঙায় নিয়ে আসার পরে তা তুলে দেওয়া হত কয়েক জন ফড়ের হাতে। তার পরে ওই মাংস খালপাড়ের একাধিক কষাইখানায় সমান মাপে কাটা হত। এর সঙ্গে অল্প পরিমাণ তাজা মাংস মিশিয়ে তৈরি হত এক কেজির প্যাকেট। সেগুলি পাঠানো হত বিভিন্ন রেস্তরাঁয়।

Advertisement

তদন্তকারীদের দাবি, এটি আন্তর্জাতিক মাংস পাচার-চক্র। এই কাণ্ডে ধৃত সরাফত হোসেনকে বৃহস্পতিবার আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হলে প্রায় ২০-২২ জন আইনজীবী তার জামিনের সওয়াল করেন। পুলিশ জানাচ্ছে, চক্রের আর এক পাণ্ডা লন্ডাও অত্যন্ত প্রভাবশালী। ট্যাংরা থেকে তাকে গ্রেফতার করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিল ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার অফিসারদের দলটি। দলের এক অফিসারের কথায়, লণ্ডাকে প্রথমে পুলিশের গাড়িতে তোলাই যাচ্ছিল না। এলাকায় প্রায় শ’দুয়েক বাসিন্দা তাঁদের ঘিরে ধরেন। লন্ডাকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ। শেষে অতিরিক্ত বাহিনী এসে পরিস্থিতি সামলায়।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ভাগাড়ের মাংস কারবারের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে নারকেলডাঙা এলাকার খালধারের প্রায় ১০-১৫ জন কষাই। মূলত তারাই মৃত পশুর মাংসের সঙ্গে তাজা মাংস মিশিয়ে প্যাকেটবন্দি করত। সানিদের জেরা করে ওই কষাইদের সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশ। আজ, সোমবার পাচার-চক্রের পাণ্ডাদের আলিপুর আদালতে পেশ করা হবে।

এ দিকে, এই কারবার সামনে আসার পরে মাংসের নমুনা সংগ্রহে শিয়ালদহ অঞ্চলে অভিযান চালিয়েছিল পুর প্রশাসন। যদিও নির্দিষ্ট তথ্য না পেলে অভিযান চালিয়ে কী হবে, সে প্রশ্ন তুলছেন পুরকর্তাদেরই একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, খাবারে ভেজাল ধরা এক জিনিস, কিন্তু ভাগাড়ের মাংস পাতে পাচার হয়ে যাচ্ছে তার উপরে নজরদারি চালানো আর এক জিনিস। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট ভাবে আমাদের না জানানো হলে তো এ ভাবে অভিযান করে লাভ নেই। পুলিশ নির্দিষ্ট তথ্য দিলে অবশ্যই সহযোগিতা করব।’’ সংগৃহীত নমুনা আসলে কোন প্রাণীর মাংস, তা ফরেন্সিক পরীক্ষা ছাড়া সম্ভব নয় বলে আগেই জানিয়েছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে পরীক্ষাও সময় সাপেক্ষ বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.