প্রতীকী ছবি।
সপ্তাহান্তের বিকেল। আচমকাই কেঁপে উঠল মহানগরের ধরণী! অনেকেই নিজের অফিস, বাড়ি, বা দোকান ছেড়ে বেরিয়ে এলেন রাস্তায়। কেউ কেউ ফেসবুকে ‘ভূমিকম্প’ ঘোষণা করলেন। কলকাতা লাগোয়া হাওড়া বা বারাসতেও নাকি ভূমিকম্প অনুভব করেছেন অনেকে। তবে এই ঘটনায় জনজীবন ব্যাহত হয়নি।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শনিবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ রিখটার স্কেলে ৩.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে, যার উৎসস্থল ছিল হাওড়ায় মাটি থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। দিল্লির মৌসম ভবনের খবর, শুক্রবার রাত ১টা ৫৫ মিনিট নাগাদ মণিপুরের চান্দেলে ৩.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল।
সাধারণত, ৩.৬ মাত্রার ভূমিকম্পকে মৃদু হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। সেই কারণেই এ দিন সে ভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন, কলকাতার মাটির প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার নীচে ময়মনসিংহ-কলকাতা বা ইয়োসিন হিঞ্জ রয়েছে। সেখানে যা শক্তি রয়েছে, তাতে ভূকম্প হওয়া অস্বাভাবিক নয়। খড়্গপুর আইআইটি-র ভূতত্ত্ব ও ভূপদার্থবিদ্যার অধ্যাপক শঙ্করকুমার নাথ জানান, এ দিনের ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল হাওড়ার উলুবেড়িয়া। তিনি জানান, ইয়োসিন হিঞ্জ-এর আশপাশের এলাকায় এমন ছোট ছোট ভূমিকম্প হচ্ছে।
ভূতত্ত্ববিদদের অনেকেই বলছেন, কলকাতা কিংবা দক্ষিণবঙ্গে ভূমিকম্প অস্বাভাবিক নয়। গত রবিবার রাত ২টো ৫৫ মিনিটে পুরুলিয়ায় রিখটার স্কেলে ৪ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। তার আগে গত ২৬ মে বাঁকুড়ায় ৪.৮ মাত্রার একটি ভূকম্প হয়েছিল। গত বছরের অগস্টে হুগলির খণ্ডঘোষেও রিখটার স্কেলে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল।
এ দিন অবশ্য ঘটনার পরে ভূকম্প হয়েছে কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্তিও ছড়িয়েছিল। কম্পনের মাত্রা কম হওয়ায় চট করে ধরা পড়েনি। পরে খতিয়ে দেখে ভূবিজ্ঞানীরা বিস্তারিত তথ্য বার করেন। হাওড়া উৎসস্থল হওয়ায় শুধু কলকাতা নয়, বিভিন্ন জেলাতেও মানুষ কম্পন বুঝতে পেরেছেন। সেই বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। ধর্মতলায় একটি বেসরকারি অফিসের কর্মী শৈবাল গঙ্গোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘আমার চেয়ার দুলে উঠল। সামনে বোতলে রাখা জলও
কাঁপছিল। সঙ্গে সঙ্গে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে এসেছিলাম।’’
তবে অনেকেই অবশ্য কম্পন বুঝতে পারেননি। এ দিন চাঁদনি চক মোড়ে একটি চায়ের দোকানে ভূমিকম্প নিয়ে আলোচনা চলছিল। যা শুনে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক মধ্যবয়সি ব্যক্তি বলে উঠলেন, ‘‘ভূমিকম্প হয়েছে নাকি?’’ তার পরে স্বগতোক্তির মতো বললেন, ‘‘হতেও পারে। আমিই হয়তো বুঝিনি।’’ ভূমিকম্প মালুম না-হওয়া নিয়ে ফেসবুকে রসিকতাও শুরু হয়েছে। ভূকম্পন বুঝতে না-পারার ‘আক্ষেপ’ নিয়ে এক তরুণী লিখেছেন, জীবনে তিনি এক বারই পায়ের তলার মাটির কম্পন বুঝেছিলেন, যে দিন
হাত থেকে বিরিয়ানির প্লেট পড়ে গিয়েছিল। ভূমিকম্প নিয়ে হোয়্যাট্সঅ্যাপেও শুরু হয়েছে নানা চর্চা। কেউ কেউ আবার পূর্বাভাসও দিয়েছেন। যদিও ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন, কোথায়, কখন ভূমিকম্প হবে, তার পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy