জনজোয়ার: অষ্টমীর দুপুরে শোভাবাজার রাজবাড়িতে দর্শনার্থীদের ঢল। ছবি: সুমন বল্লভ
সপ্তমীর আকাশের হালচাল দেখেই সতর্ক হয়ে গিয়েছিল শহর। অষ্টমীতে তাই পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে পুজোর ময়দানে নেমেছিল পুজো-জনতা। সকালে পাড়ার অঞ্জলি মিটিয়েই পরবর্তী গন্তব্য তাই পুজো মণ্ডপগুলি। সঙ্গী বর্ষাতি-ছাতা। বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও তা উপেক্ষা করেই রবিবার মানুষের ঢল নামল পুজো মণ্ডপগুলিতে। ঘটনাচক্রে এ দিন সকাল থেকে মেঘ যতটা গর্জিয়েছে, ততটা বর্ষায়নি। ফলে সব মিলিয়ে অষ্টমীর দিনভর পুজো প্রাঙ্গণ দাপাল পুজো-বাহিনী।
কাশী বোস লেনের প্রতিমা দেখতে এসে বারাসতের শ্রীতমা পাল বললেন, ‘‘প্রথমে সকাল-সকাল বেরিয়ে পড়ার কথা ছিল। মেঘের গর্জন শুনে প্ল্যান কিছুটা পাল্টে দিয়েছি। বিকেলেও দেখি আকাশের একই অবস্থা। আর তো মোটে দু’দিন। যা হয় দেখা যাবে। বেরিয়ে পড়েছি।’’ বেলা বাড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে ভেবেই আবার সকাল-সকাল বয়স্ক বাবা-মাকে নিয়ে সুরুচি সংঘের মণ্ডপে পৌঁছে গিয়েছিলেন মানিকতলার দেবাশিস দত্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বৃষ্টির আগে যতটা পারি দেখে নিই। খেতে তো কিছু হবে। সমস্যা হলে হোটেলে ঢুকে যাব।’’
কার্যত এ ভাবেই বৃষ্টিকে ‘ট্যাকল’ করে অষ্টমীর সন্ধ্যায় প্রতিমা দর্শন চালিয়ে গিয়েছে পুজো-জনতা। কলকাতা পুলিশ জানাচ্ছে, পঞ্চমী-ষষ্ঠীর চেহারা যা-ই থাকুক, ভিড় সামলানোর আসল ‘চ্যালেঞ্জ’ শুরু হয় সপ্তমী থেকে। যা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয় অষ্টমীর সন্ধ্যায়! রাত যত এগিয়েছে, ততই রাজপথের দখল নিয়েছে মণ্ডপমুখী জনতার ঢল। বিকেলের পরে প্রবল চাপ ছিল চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, এ জে সি বসু রোডে। এ দিনও লালবাজারের তরফে শহরে বাড়তি পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি চলেছে ড্রোনের নজরদারিও। এ বারও কলকাতা পুলিশের মহিলা বাহিনী দক্ষিণ ও উত্তর কলকাতার পাশাপাশি মধ্য ও শহরতলিও চষে বেরিয়েছে।
পুজো ঘিরে প্রতিমা দর্শনের পাশাপাশি চলেছে দেদার ভোগ বিতরণ। বারোয়ারি পুজোর সঙ্গে বনেদি বাড়ির পুজোগুলিতেও এদিন দুপুর থেকেই ভোগের ভিড় লক্ষ করা গিয়েছে। একডালিয়া এভারগ্রিন পুজোর কর্তা স্বপন মহাপাত্র বলেন, ‘‘আমরা প্রতিবারই অষ্টমীর দিন পুজোর ভোগের ব্যবস্থা করি। তা বিতরণও করা হয়।’’
শোভাবাজার রাজবাড়িতে দুপুরের ভোগ খেয়ে দক্ষিণের পুজো দেখতে যাওয়া সৌমেন হাজরা আবার
বললেন, ‘‘ভোগ তো হল! কিন্তু বাস কোথায়? সব সরকারি বাস তো দেখছি পুজো পরিক্রমায় বেরিয়ে গিয়েছে।’’ একই ভাবে নতুন পথ নির্দেশিকায় কিছুটা বিভ্রান্ত ওয়েলিংটন-বৌবাজার হয়ে উত্তর কলকাতায় ফেরার চেষ্টা
করা তমাল বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘বৌবাজার থেকে কলেজ স্ট্রিট হয়ে উত্তরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ। সেই পথ বৌবাজার থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমহার্স্ট স্ট্রিটের দিকে। ফলে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে!’’ লালবাজার অবশ্য জানাচ্ছে, শহরের গতি যাতে ব্যাহত না হয়, সে কারণেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গতি অবশ্য এ দিনও থমকেছিল রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের বেশ কিছু অংশে। ত্রিধারা সম্মিলনী পুজো মণ্ডপ থেকে বেরিয়ে রীতা ভৌমিক বললেন, ‘‘এদিকের দু’টো ঠাকুর দেখতেই দু’ঘণ্টা হয়ে গেল। বৃষ্টি আসছে। কখন যে সব শেষ হবে, কে জানে!’’ একই ভাবে বৃষ্টির ভয়ে সন্ধ্যা পেরোতেই মোবাইলে সিনেমা হল খুঁজতে দেখা গিয়েছে বালিগঞ্জের লগ্নজিতা দত্তকে। তাঁর সঙ্গী সব্যসাচী ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘আমার তো প্রথম থেকেই মত সিনেমা দেখার। বৃষ্টিতে বা ঘামে ভিজে সাজ খারাপ করার থেকে সিনেমাই ভাল!’’
সাজ থাকল কি না, সে ভাবনা অবশ্য অধিকাংশই ভাবতে নারাজ। সময় তো বাকি আর এক রাত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy