সিঁথি থানা। —ফাইল চিত্র
সিঁথি থানায় পুলিশি হেফাজতে এক সন্দেহভাজনের মৃত্যুর ঘটনায় একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান বদল ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। অনেকেই জানতে চান, ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্যে এক বয়ান দেওয়ার দু’দিনের মধ্যেই কোন চাপের মুখে পড়ে প্রত্যক্ষদর্শীর পরিবর্তিত বয়ান সামনে এল? অপরাধ বিষয়ক আইনজীবী থেকে প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের বড় অংশ যদিও বলছেন, সিঁথির মামলায় প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান বদল কি আদৌ গুরুত্বপূর্ণ? কারণ, তথ্যপ্রমাণ আইনের ১০৬ নম্বর ধারায় পুলিশকেই ব্যাখ্যা করে জানাতে হবে, তাদের হেফাজতে থাকাকালীন ওই ব্যক্তির মৃত্যু কী ভাবে হল?
আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘প্রত্যক্ষদর্শী বড়জোর বলবেন, পুলিশ মেরেছিল, না মারেনি। কিন্তু ওই ব্যক্তির মৃত্যু যে থানাতেই হয়েছিল, তা নিয়ে দ্বিমত নেই। এখানেই এভিডেন্স অ্যাক্টের ১০৬ নম্বর ধারার ভূমিকাটা গুরুত্বপূর্ণ। যে হেতু মৃত্যুর আগে রাজকুমার সাউ পুলিশি হেফাজতে ছিলেন, তাই পুলিশকেই তাঁর মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।’’ আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল ওই ধারার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে জানালেন, একটি ঘরে শুধু স্বামী-স্ত্রী থাকাকালীন যদি স্ত্রীর মৃত্যু হয় এবং সেই মৃত্যু ঘিরে অভিযোগ ওঠে, তা হলে স্বামীকেই ব্যাখ্যা করতে হবে, স্ত্রী কী করে মারা গেলেন। ময়না-তদন্তের রিপোর্টও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কথায়, ‘‘সিঁথিতে থানার মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে। এর জন্য সাক্ষী লাগে নাকি?’’
আইনজীবীদের ব্যাখ্যা, সিঁথির ঘটনায় অভিযোগ মোট দু’টি। প্রথমটি চুরির। তাতে অভিযুক্ত আসুরা বিবি। দ্বিতীয় অভিযোগটি রাজকুমার সাউকে পুলিশের পিটিয়ে মারার। দ্বিতীয় ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীই আবার প্রথম ঘটনার মূল অভিযুক্ত। আসুরা প্রথমে প্রকাশ্যে যা বলেছিলেন, সেটাই সম্পূর্ণ বদলে ফেলেছেন বুধবার রাতে। যা ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে, এতে পুলিশের কি কোনও লাভ হয়েছে? প্রাক্তন পুলিশকর্তা গৌতমমোহন চক্রবর্তী বললেন, ‘‘পুলিশই যে হেতু পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করছে, তাই প্রশ্ন উঠছে। এক-এক বার এক-এক রকম কথা বললে সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতাই কমে যায়। মহিলা পুলিশের কাছে যা বলেছেন, আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেও তা-ই বলে থাকলে তবেই তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে।’’
পুলিশকে দেওয়া জবানবন্দিকে গুরুত্বই দিতে নারাজ আইনজীবীদের বড় অংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, চার্জশিট পেশের আগে ১৬১ ধারায় অভিযুক্তের বয়ান নিতে পারে পুলিশ। তবে সেই বয়ানের ভিত্তিতে যদি কিছু উদ্ধার হয়, তবেই তা গ্রহণযোগ্য হয় আদালতে। অন্য সব ক্ষেত্রে পুলিশে দেওয়া বয়ানের অনুরূপ আদালতেও বলতে হয়। জয়ন্তনারায়ণবাবু বলেন, ‘‘চাপ দিয়ে বয়ান বদল করানোর এত অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠে যে, এখন এই ধারাটার গুরুত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে শুনলে এখন আর কেউ কিছুই বিশ্বাস করতে চান না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy