Advertisement
০৫ মে ২০২৪

‘ফার্স্ট বয়’ গর্বে ডগমগ, তবু প্রশ্নে সচেতনতা

গত বছর যেখানে এত দিনে একের পর এক ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গিয়েছে, সেখানে এ বছর অগস্ট পর্যন্ত দক্ষিণ দমদমের মধুগড়ে একটিও ডেঙ্গি সংক্রমণের খবর নেই। যে কারণে প্রশাসনিক স্তরের বৈঠকে অভিনন্দন কুড়োচ্ছে মধুগড়-সহ দক্ষিণ দমদম পুর এলাকা।

আগাছা পরিষ্কার হলেও মধুগড়ে যত্রতত্র পড়ে রয়েছে থার্মোাকলের বাক্স, কাপ। নিজস্ব চিত্র।

আগাছা পরিষ্কার হলেও মধুগড়ে যত্রতত্র পড়ে রয়েছে থার্মোাকলের বাক্স, কাপ। নিজস্ব চিত্র।

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০২:৫২
Share: Save:

খাতায়-কলমে একেবারে উলটপুরাণ!

গত বছর যেখানে এত দিনে একের পর এক ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গিয়েছে, সেখানে এ বছর অগস্ট পর্যন্ত দক্ষিণ দমদমের মধুগড়ে একটিও ডেঙ্গি সংক্রমণের খবর নেই। যে কারণে প্রশাসনিক স্তরের বৈঠকে অভিনন্দন কুড়োচ্ছে মধুগড়-সহ দক্ষিণ দমদম পুর এলাকা। কিন্তু এত কিছুর পরেও সচেতনতা ফিরেছে কি না, সেই প্রশ্ন রয়েই গেল।

গত বছর বর্ষার মরসুম শুরু হওয়ার আগে মধুগড়ে ডেঙ্গি সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। মধুগড়ের পাশাপাশি পূর্ব সিঁথি, এপিসি অ্যাভিনিউ, এমসি গার্ডেন, প্রমোদনগর, গড়ুই, নতুনপল্লি, পাতিপুকুর-সহ পুরসভার প্রায় সব ক’টি ওয়ার্ডেই থাবা বসিয়েছিল পতঙ্গবাহিত রোগের সংক্রমণ। সেখানে এ বছর হাসি চওড়া করে পুর কর্তারা বলছেন, ‘‘আমাদের পুর এলাকায় এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র দু’জন। তা-ও স্বাস্থ্য দফতর এক জনের যে ঠিকানা পাঠিয়েছে, সেখানে গিয়ে ওই নামের কাউকে পাওয়া যায়নি!’’ স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মীর বক্তব্য, ‘‘প্রশাসনের বৈঠকে আমরা এখন প্রথম সারিতে বসছি। বাকি পুরসভাগুলিকে আমাদের মডেল করতে বলা হচ্ছে। একেবারে ফার্স্ট বয়, ফার্স্ট বয় অনুভূতি!’’

এই অনুভূতি আত্মতুষ্টির আকার নেবে না তো? মধুগড়ের ঘোষপাড়া, বিধান কলোনি, রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের গলি, পূর্ব সিঁথি রোড, ফকির ঘোষ লেন, অগ্রদূত ক্লাব সংলগ্ন এলাকার রাস্তাঘাট যে আগের তুলনায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু চোনা ফেলে দিয়েছে মধুগড় কাঠপোলের কাছে খালপাড়ের পাশে থাকা আবর্জনার স্তূপ। জমে থাকা জঞ্জালের ঢালু অংশে টিপটিপ করে জমছে বৃষ্টির জল। এই জল কী বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা পুরসভার থেকে ভাল কেউ জানে না। স্থানীয় বাসিন্দা নাড়ুগোপাল দাস বললেন, ‘‘আগের তুলনায় জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ ভাল হচ্ছে। মিথ্যা বলব না।’’ তা হলে খালপাড়ে আবর্জনার স্তূপ কেন? নাড়ুগোপালবাবু বলেন, ‘‘ওখানে ওয়ার্ডের আবর্জনা ফেলা হয়। তার পরে প্রতিদিন না হলেও এক সময়ে তা পরিষ্কার করা হয়।’’ কিন্তু মধুগড়ের মতো ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় জঞ্জাল পড়ে থাকবে কেন? ফকির ঘোষ লেন, পূর্ব সিঁথি রোডে ফাঁকা জমির জঙ্গল ও ব্যক্তিগত বাড়ির পিছনের অংশের আগাছায় যে সদ্য অস্ত্রের কোপ পড়েছে, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু সেই উদ্যোগকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে সদ্য ফেলা থার্মোকলের বাক্স, কাপের মধ্যে জমা জল। গত বছর বাড়ির জলাধারে লার্ভা পেয়েছিলেন পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা। এখনও সেই সমস্ত জলাধারে জল জমিয়ে রাখার অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেননি বাসিন্দারা।

আরও পড়ুন: ভাগ্যের ভরসায় বসে ফুঁসছেন বাসিন্দারা

সচেতন হতে আরও অনেকটা পথ যে হাঁটতে হবে, তার পরিচয় মিলল বিধান কলোনি এলাকাতেও। সেখানে আট নম্বর বাড়ির বাসিন্দা রতন সাহা গত তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। খাবারে রুচি নেই, বমি বমি ভাব। সারা শরীরে অসম্ভব ব্যথা। গত বছর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর পরেও রক্ত পরীক্ষার কথা মাথায় আসেনি রতনবাবুর। ১০ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা আশা বিশ্বাসের চার দিন ধরে জ্বর। গত বছর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন। রক্ত পরীক্ষা করাননি তিনিও। আশার স্বামী শম্ভুনাথ বললেন, ‘‘স্থানীয় চিকিৎসক বলেছেন, ঠান্ডা লেগে জ্বর এসেছে। ডেঙ্গি নয়!’’ এই পরিস্থিতিতে বাসিন্দাদের সচেতন করে যাঁরা রক্ত পরীক্ষার জন্য পুরসভায় পাঠাতে পারতেন, সেই সমীক্ষক দলও আসেননি বলে দাবি বাসিন্দাদের।

পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছর একেবারে শেষ পর্যায়ে পুর কর্তৃপক্ষের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল প্রমোদনগর। উৎসবের মরসুমে হাসপাতালে রাত কেটেছে ক্ষুদিরামপল্লি, মাতঙ্গিনী, কালীনগর-শিবনগর, নতুনপল্লির বাসিন্দাদের। বস্তুত এমনও নজির রয়েছে যে, একটি পরিবারের সকলেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ বছর সেখানে এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলেই জানাচ্ছেন পুর আধিকারিকেরা। তবে বাড়ির চৌবাচ্চায় লার্ভা যে মিলছে না, তা কিন্তু নয়। জঞ্জাল পরিষ্কার নিয়েও এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। যদিও স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা চেয়ারম্যান পারিষদ প্রদীপ মজুমদার বললেন, ‘‘যা রিপোর্ট পাচ্ছি, তা এক কথায় চমকপ্রদ। ওয়ার্ডের বাসিন্দারা খুবই সহযোগিতা করছেন।’’

এ দিকে, মধুগড় সম্পর্কে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা চেয়ারম্যান পারিষদ প্রবীর পাল বলেন, ‘‘আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। কোথাও ফাঁকফোকর থাকলে তা পূরণ করা হবে।’’ আর পুরপ্রধানের বক্তব্য, ‘‘এ বছর ত্রিস্তরীয় নজরদারি চলছে। পুরসভার পাশাপাশি জেলা স্বাস্থ্য দফতর, সুডার দলও কাজ করছে। এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Health Medical
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE