আমি নির্দোষ, দাবি অনিন্দিতার। ইনসেটে রজত।
স্বামীর গলায় মোবাইলের চার্জার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন। তার পর আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা। নিউটাউনে রোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডে স্ত্রী অনিন্দিতা পালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল বারাসত আদালত। নিহত রজত দে ও অনিন্দিতা দু’জনেই পেশায় আইনজীবী ছিলেন। গত সোমবার অনিন্দিতাকে এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে বারাসত আদালতের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। আজ সাজার মেয়াদ ঘোষণা করলেন বিচারক।
যদিও রায় শুনেই আদালত চত্বরে চিৎকার করে ওঠেন অনিন্দিতা। বারবার বলতে থাকেন, ‘‘আমি নির্দোষ, আমি নির্দোষ। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করে যাব।’’
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় আদালত বসলে অনিন্দিতার আইনজীবী সোহিনী অধিকারী বিচারককে বলেন, ‘অনিন্দিতার ৩ বছরের এক সন্তান রয়েছে। যার বাবা নেই। মায়েরও ফাঁসি হলে সেই সন্তান পুরোপুরি অনাথ হয়ে পড়বে।’ তিনি বিচারকের কাছে আবেদন করেন, যাতে অনিন্দিতাকে সর্বোচ্চ শাস্তি না দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: স্বামীকে টুকরো করে রেঁধে খাওয়ানোর খবর শেয়ার করেছিলেন অনিন্দিতা
২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বর নিউটাউনের ফ্ল্যাটে বসার ঘরে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী রজতের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। বছর চৌত্রিশের রজতের স্ত্রী অনিন্দিতা কলকাতা এবং বম্বে হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করতেন। দু’জনের একটি সন্তানও রয়েছে। ময়নাতদন্তে ধরা পড়ে রজত শ্বাসরোধ হয়ে মারা গিয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে, এটা খুন না আত্মহত্যার ঘটনা তা নিয়ে প্রবল ধন্দে ছিলেন তদন্তকারীরা।
অনিন্দিতা প্রথম থেকেই বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে দাবি করতে থাকেন। কিন্তু তদন্তে পুলিশ জানতে পারে— রজতের মৃত্যুর কয়েক মাস আগে থেকে দু’জনের সম্পর্ক ভাল ছিল না। তা ছাড়া রজতের মৃত্যু নিয়ে অনিন্দিতার বয়ানেও বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে পুলিশের কাছে। সামনে আসে অনিন্দিতার গুগল সার্চ এবং হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের ইতিহাসও। যেখানে তিনি বিবাহকে ‘গণশৌচাগার’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। গুগল সার্চে স্ত্রী-র হাতে স্বামী খুনের বিভিন্ন ঘটনা পড়েছেন। পুলিশের মতে, খুনের পদ্ধতি নিয়ে সার্চ করেছেন অনিন্দিতা।
আরও পড়ুন: উল্টোডাঙা হত্যাকাণ্ড: বান্ধবী ও তাঁর প্রেমিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পুলিশের দাবি, জেরায় সাত দিনে সাত বার বয়ান বদল করেছিলেন অনিন্দিতা। প্রথমে তিনি দাবি করেন— সেই রাতে রজতের সঙ্গে বাইরে ডিনার সেরে ফেরার পর তিনি অন্য ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। হঠাত্ লোডশাডিং হয়ে যাওয়ায় ঘুম ভেঙে যায়। সেই সময় নাকি তিনি বসার ঘরে গিয়ে দেখেন মেঝেতে অদ্ভুত ভাবে বসে রয়েছেন রজত। গলায় বিছানার চাদর জড়ানো। সাড়া না পেয়ে গায়ে হাত দিতেই রজতের শরীর মেঝেতে ঢলে পড়ে। অনিন্দিতা বলেন, ভয় পেয়ে প্রতিবেশীর ফ্ল্যাটে চলে যান। আবার কখনও তিনি বলেন, রজত নিজেই বসার ঘরের সিলিং থেকে বিছানার চাদর গলায় জড়িয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। পুলিশের দাবি, আরও একাধিক তত্ত্ব তিনি খাড়া করার চেষ্টা করেছিলেন।
শেষ পর্যন্ত জেরার চাপে অনিন্দিতা রজতকে খুনের কথা স্বীকার করে নেন বলে দাবি পুলিশের। যদিও আদালতে, এমনকি শাস্তি ঘোষণার পর আদালত চত্বরে, অনিন্দিতা বার বার নিজেকে নির্দোষ হিসেবে দাবি করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy