Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Train Service

বিশেষ ট্রেনে উঠতে চেয়ে অবরোধ চার ঘণ্টা, ভোগান্তি

শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার, নামখানা ও লক্ষ্মীকান্তপুরের ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়।

গণপরিবহণ বন্ধ। তাই কর্মক্ষেত্রে পৌঁছনোর তাগিদে ‘স্টাফ স্পেশ্যাল’ ট্রেন ধরতে দৌড় নিত্যযাত্রীদের একাংশের। বুধবার, সোনারপুরে অবরোধ ওঠার পরে।

গণপরিবহণ বন্ধ। তাই কর্মক্ষেত্রে পৌঁছনোর তাগিদে ‘স্টাফ স্পেশ্যাল’ ট্রেন ধরতে দৌড় নিত্যযাত্রীদের একাংশের। বুধবার, সোনারপুরে অবরোধ ওঠার পরে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২১ ০৬:২২
Share: Save:

রেলকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট লোকাল ট্রেনে উঠতে দেওয়ার দাবি ঘিরে যাত্রী-বিক্ষোভের জেরে বুধবার সকাল থেকে ঘণ্টা চারেক অবরুদ্ধ হয়ে রইল সোনারপুর স্টেশন। ওই ঘটনায় শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার, নামখানা ও লক্ষ্মীকান্তপুরের ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র সচল ছিল বজবজ শাখা। অভিযোগ, স্টাফ স্পেশ্যাল ট্রেনে ভিড়ের চাপে পিয়ালি স্টেশনে পড়ে যান এক মহিলা যাত্রী। যদিও এ ব্যাপারে রেলের তরফে প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

রেলকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট ট্রেনে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা যাতায়াতের অনুমতি পেলেও তার বাইরে কেউ উঠতে পারেন না। অথচ, গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় বিভিন্ন বেসরকারি অফিস, বাণিজ্যিক সংস্থা, শপিং মল, হোটেল, দোকান, রেস্তরাঁ এবং বাড়ির কাজে যুক্ত অসংখ্য মানুষকে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছতে প্রবল হয়রান হতে হচ্ছে। এ দিন সেই ক্ষোভ থেকেই সকাল ৭টা নাগাদ সোনারপুর স্টেশনে আচমকা রেল অবরোধ শুরু করেন হাজার দেড়েক মানুষ। সব ক’টি লাইন আটকে দেন তাঁরা। লোকাল ট্রেন চালু করার দাবি জানানোর পাশাপাশি বিশেষ ট্রেনে ওঠার অনুমতিও চান তাঁরা। ঘণ্টা চারেক পরে আরপিএফ এবং জিআরপি-র আধিকারিকেরা এসে সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।

অবরোধের জেরে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই কর্মস্থলে পৌঁছতে পারেননি। দিন কয়েক আগে বারুইপুর লোকালে আরপিএফের হাতে হেনস্থার অভিযোগ তোলা নার্স তনুশ্রী চৌধুরী এ দিন স্বামীর বাইকে হাসপাতালে পৌঁছন। তিনি বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় ঠাসাঠাসি ভিড়ে কোনও মতে ফিরেছি। সকালে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকলে পৌঁছতে পারতাম না।’’

একই অবস্থা হয় রেল, পুলিশ, দমকল ও ডাক বিভাগের মতো জরুরি পরিষেবার কর্মীদের। বালিগঞ্জের একটি শপিং মলের কর্মী তপন সর্দার বললেন, ‘‘কাজে না গেলে ছাড়িয়ে দেবে বলেছে। ট্রেন ছাড়া যাওয়ার উপায় নেই। মরিয়া হয়েই প্রতিবাদ করতে হচ্ছে।’’ যাদবপুরে পরিচারিকার কাজ করা শিউলি নস্করের কথায়, ‘‘একটি বাড়িতে বাচ্চার দেখাশোনা করি। কাজে না গিয়ে উপায় নেই। ট্রেন ছাড়া যাব কী ভাবে?’’

বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, ট্রেন না চললে ফের তাঁদের বিক্ষোভের পথই নিতে হবে। রেল সূত্রের খবর, হাওড়া, শিয়ালদহ ছাড়াও অন্যান্য ডিভিশন মিলিয়ে এখন দৈনিক চারশোর বেশি লোকাল ট্রেন চলছে। এর মধ্যে শিয়ালদহ ডিভিশনেই চলছে ২৬৪টি ট্রেন। তার পরেও সব চেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে ওই ডিভিশনেই। অভিযোগ, ওই সংখ্যক ট্রেনে যাত্রীদের সবাইকে কোনও ভাবেই জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীদের ভিড় দেখে হকারেরাও ফিরে এসেছেন। তাঁরাও চাইছেন, দ্রুত ট্রেন চালু হোক। এ দিন যাত্রীদের সকলকে সমস্ত ট্রেনে উঠতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে এসইউসিআই।

প্রাক্-করোনা পরিস্থিতিতে সোনারপুর স্টেশন থেকে প্রতিদিন গড়ে এক লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করতেন। যা শিয়ালদহ স্টেশনের পরে দ্বিতীয় সর্বাধিক। আগে সারা দিনে ওই স্টেশন দিয়ে ১১৫ জোড়ার বেশি ট্রেন চলত। এখন সেখানে এক-চতুর্থাংশেরও কম ট্রেন চলছে বলে অভিযোগ।

রেল সূত্রের খবর, প্রাক্-করোনা পরিস্থিতিতে শিয়ালদহ ডিভিশনে দৈনিক ৯০০-রও বেশি লোকাল ট্রেন চলত। যাত্রীদের কথা ভেবে সমস্ত ট্রেন চালানোর অনুমতি চেয়ে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছিল রেল। রেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রাজ্য চাইলে আমরা সব ট্রেন চালাতে প্রস্তুত।’’ কোভিড-বিধি মেনে চলার স্বার্থে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরাও। তবে, বিধিনিষেধ বলবৎ থাকায় রাজ্যের অনুমতি ছাড়া ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন রেলকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Train Service
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE