প্রতীকী ছবি।
উৎসবের মরসুম মানেই উচ্চগ্রামে লাউউস্পিকার আর ডিজে-র উৎপাত। গত কয়েক বছর ধরে এটাই কার্যত রাজ্যের সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদেরা। চলতি বছরে করোনা সংক্রমণ থাকার কারণে হয়তো উৎসবে কিছুটা লাগাম থাকবে। কিন্তু লাউউস্পিকার বা ডিজে-র হাত থেকে বাঁচা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
অথচ পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, গাড়ির হর্ন, লাউডস্পিকার-সহ সব ধরনের শব্দযন্ত্রে বাধ্যতামূলক ভাবে সাউন্ড লিমিটর লাগানোর কথা অনেক দিন আগেই একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু তার পর থেকে এ নিয়ে শুধু নির্দেশিকা জারি করা ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই বড়দিন, নতুন বছর-সহ আসন্ন উৎসবের দিনগুলিতে শব্দের দৌরাত্ম্য থামাতে লাউডস্পিকার, সাউন্ড বক্স, পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম-সহ সমস্ত ধরনের যন্ত্রে অবিলম্বে ‘ইনবিল্ট’ সাউন্ড লিমিটর লাগানোর বিষয়টি বাস্তবায়িত করার জন্য কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে চিঠি দিয়ে আবেদন জানাল ‘নাগরিক মঞ্চ’। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পাশাপাশি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছেও একই আবেদন জানানো হয়েছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত জানাচ্ছেন, শুধু এই উৎসবের মরসুমেই নয়। ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক-সহ সমস্ত অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত শব্দযন্ত্রে ইনবিল্ট সাউন্ড লিমিটর লাগানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের তথ্য বলছে, ২০০৭-২০১৭, এই দশ বছর সময়কালে শুধুমাত্র শব্দতাণ্ডবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য এই রাজ্যে ১৩ জন মানুষ মারা গিয়েছেন! তার পরেও এখনও কেন শব্দযন্ত্রে সাউন্ড লিমিটর বাধ্যতামূলক নয়? সেই প্রশ্নের উত্তর চাই। কারণ, এটা চলতে দেওয়া যায় না।’’
অথচ সেটাই সমানে চলছে বলে আক্ষেপ পরিবেশবিদদের। ‘সাউন্ড লিমিটর’ কী ভাবে কাজ করে, তার ব্যাখ্যা করে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড’ (ওয়েবেল)-এর এক কর্তা জানাচ্ছেন, এটি এমন একটি যন্ত্র যেটি অ্যামপ্লিফায়ারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। অ্যামপ্লিফায়ার থেকে যে শব্দ মাইক, লাউডস্পিকার বা পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমের মাধ্যমে বেরোয়, তা যাতে নির্ধারিত মাত্রার উপরে যেতে না পারে, তার নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘এটি এমন ভাবে তৈরি যে সংশ্লিষ্ট শব্দযন্ত্রের শব্দ বাড়ালেও এটা তাকে বাড়তে দেবে না। সব সময়েই তা নির্ধারিত ৬৫ ডেসিবেলের মধ্যেই শব্দমাত্রাকে রাখবে। বলা যেতে পারে, বাঁধ দিয়ে যেমন জলের স্রোতের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করা হয়, এটাও অনেকটা সেই রকমই। শব্দের প্রাবল্যকে নিয়ন্ত্রণ করে।’’
‘নাগরিক মঞ্চ’-এর গবেষণা জানাচ্ছে, শব্দদূষণ নিয়ে দেশ জুড়ে বিভিন্ন মামলায় একাধিক বার শব্দযন্ত্রে ‘ইনবিল্ট’ সাউন্ড লিমিটর লাগানোর নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট আদালত। সংগঠনের এক কর্তা বলেন, ‘‘দেশের অন্যত্র এই ‘ইনবিল্ট’ সাউন্ড লিমিটর লাগানো হলেও এ রাজ্যে এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি। শুধু নির্দিষ্ট সময় অন্তর সরকারি স্তরে একাধিক নির্দেশিকা জারি হয়েছে।’’ নববাবুর কথায়, ‘‘দূষণ রোধের শংসাপত্র ছাড়া যেমন গাড়ি চালানো বেআইনি এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেই শংসাপত্রের নবীকরণ দরকার, তেমনই যাঁরা সাউন্ড বক্স, লাউডস্পিকার-সহ শব্দযন্ত্র ভাড়া দেন বা ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও সাউন্ড লিমিটরের বৈধ শংসাপত্র থাকা প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy