ফের মার খেল পুলিশ। এ বার শুধু পেটানোই নয়, পুলিশের হাত থেকে এক দুষ্কৃতীকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল হামলাকারীরা। পলাতক যে দুষ্কৃতীকে ধরা গেল না প্রায় ২৪ ঘণ্টাতেও। পুলিশের ডিসি শুধু আশ্বাস দিলেন, শীঘ্রই ধরা পড়বে সে। বুধবার রাতে খাস কলকাতার হরিদেবপুরে এই ঘটনায় ফের বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে পুলিশের কর্মক্ষমতা।
গত পাঁচ মাসে পুলিশের উপরে পরপর হামলায় নবতম সংযোজন সংঘর্ষের খবর পেয়ে দুষ্কৃতী ধরতে গিয়ে পুলিশের এই হাল। অভিযোগ, এক আবাসনে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ করা নিয়ে সংঘর্ষ চলছিল তৃণমূলের দুই সমর্থকের অনুগামীদের মধ্যে।
পুলিশ জানিয়েছে, রাত ১টা নাগাদ খবর আসে, এলাকায় শাসক দলের দুই সমর্থক ডাবলু সিংহ আর পুটু সেনগুপ্তের দলের মারামারি চলছে। কুখ্যাত দুষ্কৃতী বলে পরিচিত ওই দু’জনের বিরুদ্ধেই একাধিক খুন, তোলাবাজি-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। চার পুলিশকর্মীর একটি দল ঘটনাস্থল হরিদেবপুরের মতিলাল গুপ্ত রোডে এবং পরে ধাওয়ান কলোনিতে যায়। সেখানে আহত এক যুবক অভিযোগ করেন, ডাবলু ও দলবল তাঁকে মারধর করেছে। ধাওয়ান কলোনিতেই ডাবলুুর বাড়ি। তাকে আটক করে পুলিশ। অভিযোগ, এর পরেই পুলিশের গাড়ি ঘিরে ডাবলুুকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে বেশ কিছু মহিলা-সহ একটি দল। পুলিশের অভিযোগ, এই সময়েই তাদের মারধর করে আটক ডাবলুুকে ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। শেষে খালি হাতেই ফিরে আসে পুলিশ।
হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে আঘাত, সরকারি কাজে বাধাদান এবং সংঘর্ষে জড়ানোর অভিযোগে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার এক জনকে ধরা হয়েছে। ধৃতের নাম কানু সেনগুপ্ত। তবে রাত পর্যন্ত পলাতক দুষ্কৃতীর হদিস মেলেনি। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সোমা চক্রবর্তী বলেন, “ডাবলুু বা পুটুদের মতো কেউ তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী নয়। তবে বাইরে থেকে যে কেউ দলকে সমর্থন করতে পারে। যারা পুলিশকে মেরেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সোমবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর পাড়াতেই মার খান দুই পুলিশকর্মী। এক মহিলা-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে গড়িয়াহাট মোড়ে মাঝরাতে এক মত্ত মহিলা পুলিশকে মারধর করেছিলেন। ঘটনাস্থলে মহিলা পুলিশ না থাকায় ফুটপাথবাসী মহিলাদের দিয়ে তাঁকে থানায় নিতে হয়। সম্প্রতি আলিপুরে থানা ভাঙচুরের ঘটনাতেও দেখা গিয়েছে, ক্ষুব্ধ জনতার সামনে ফাইল দিয়ে মাথা বাঁচাচ্ছেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মী। গত পাঁচ মাসে বন্ডেল রোড, গিরিশ পার্ক, পার্ক স্ট্রিট, বড়বাজার, তিলজলা, বেহালা, সন্তোষপুর, কসবা, গড়ফা, বারাসত-সহ বিভিন্ন ঘটনায় বারবার পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে। গত অগস্ট মাসেও হরিদেবপুরেই আক্রান্ত হয় পুলিশ। তারও আগে পারিবারিক বিবাদ মেটাতে গিয়ে হরিদেবপুরেই পুলিশের সার্ভিস রিভলভারের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল হরিদেবপুর থানার এক হোমগার্ডের।
বুধবার রাতে পুলিশকে মেরে এক অভিযুক্তকে কার্যত ছিনতাই করে নেওয়ার এই ঘটনায় বিস্মিত পুলিশেরই একাংশ। তাঁদের আশঙ্কা, এ ভাবে চললে পুলিশের মর্যাদা বলে আর কিছু থাকবে না। নিচুতলার কর্মীরা ক্ষোভ জানালেও কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ পশ্চিম) রশিদমুনির খান পুলিশের মার খাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “এক জনকে গ্রেফতার করতে গেলে মহিলারা বাধা দেন। ধস্তাধস্তির সময়ে তাঁরাই ডাবলুুকে ছিনিয়ে নেন। তবে কোনও পুলিশকর্মী জখম হননি। পলাতক ডাবলুর গতিবিধির উপরে নজর রাখছি। শীঘ্রই তাকে ধরা হবে।”
তবে ডিসি অস্বীকার করলেও ওই রাতে ঘটনাস্থলে যাওয়া এক পুলিশকর্মী হামলায় জখম হন। বাঙুর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতে মুখে চোট-সহ হরিদেবপুর থানার এক জন পুলিশকর্মীকে চিকিত্সার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল।
পুলিশ সূত্রে খবর, এলাকা দখল নিয়ে ডাবলু ও পুটুর বিবাদ দীর্ঘদিনের। বুধবার রাতে একটি বেসরকারি আবাসনে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ নিয়ে দু’জনের অনুগামীদের গণ্ডগোল বাধে। অস্ত্র নিয়ে তাদের জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কাউকে না পেয়ে হানা দেয় ধাওয়ান কলোনিতে। অভিযোগ, ডাবলুর বাড়িতে প্রথমে তার স্ত্রী ও ছেলেরা পুলিশকে বাধা দেন। পরে আরও দশ-পনেরো জন মহিলা পুলিশকে ধাক্কাধাক্কি এবং মারধর করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের ওই বরাত নিয়ে পুটু আর ডাবলুর নতুন করে বিরোধ বেধেছে। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মদতেই দু’জনের বাড়বাড়ন্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy