Advertisement
E-Paper

নিষ্ক্রিয় চল্লিশের তরুণ, দাপিয়ে কাজ করছেন আশি ছুঁইছুঁই নেতা! বাস্তবের ছবি দেখে কি বদলাচ্ছে অভিষেকের বয়সবিধির ধারণা?

তৃণমূলের বর্তমান বিধায়কদের মধ্যে প্রায় ৬০ জনের বয়স ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে। তাঁদের মধ্যে অনেকে যেমন অশক্ত, বয়সের ভাড়ে ন্যুব্জ, নিষ্ক্রিয়, তেমনই আবার অনেকে সক্রিয়। তাঁদের অনেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভারও সদস্য।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:০৭
Many young leaders are inactive, many senior leaders are active, is Abhishek Banerjee perception of age in politics changing

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

তিনি মনে করেন সব পেশার মতো রাজনীতিতেও অবসরের বয়স থাকা উচিত। তিনি এ-ও মনে করেন যে, সেই বয়স কখনওই পঁয়ষট্টির বেশি হওয়া উচিত নয়। সকলের জন্য ৬৫ হলেও নিজে ৬০ পেরোলেই রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার কথাও প্রকাশ্যে বলে দিয়েছেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই সম্প্রতি ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন, কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অনেক ৪০ বছরের তরুণ দলের কাজে নিষ্ক্রিয়। আবার ৮০ ছুঁইছুঁই নেতা দাপিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই প্রশ্নেই তৃণমূলের অন্দরমহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে যে, বয়সবিধির যে তত্ত্ব অভিষেক বলেছিলেন, বাস্তব ছবি দেখে তাঁর কি সেই ধারণার বদল হতে শুরু করেছে?

অভিষেক সাধারণ ভাবে মনে করেন, বয়স বাড়লে কাজ করার উদ্যম কমে যায়। তরুণ বয়সে এক জন যতটা ছোটাছুটি করে কাজ করতে পারেন, বয়স বাড়লে তাতে শ্লথতা আসে। সূত্রের খবর, সম্প্রতি অভিষেক বয়স সংক্রান্ত বিষয়ে দু’জন প্রবীণ নেতার নামোল্লেখ করেছেন। তাঁদের সক্রিয়তা, কাজের উদ্যমের তারিফ করেছেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’। এক জন অভিষেকের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের অন্তর্গত বজবজ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক অশোক দেব এবং অন্য জন খড়দহের বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি ও পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বর্ষীয়ান রাজনীতিক অশোক শুধু সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজের কেন্দ্রে পড়ে থেকে মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার কাজই করেন না, বিয়ে-পুজো-শ্রাদ্ধ-অন্নপ্রাশনের মতো যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে ডাকলেই হাজির হয়ে যান। শোভনদেবও নিজের বিধানসভা খড়দহের সঙ্গে নিজের মন্ত্রিত্বের দফতর এবং দলের কাজে সক্রিয়।

তবে অভিষেক-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, বয়সবিধি সংক্রান্ত তাঁর যে ধারণা ছিল, তা আমূল বদলে গিয়েছে এমনটা নয়। তিনি ‘ব্যতিক্রমের’ কথা বলেছেন। অর্থাৎ বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি বয়সবিধির কথা বললেও তা নিয়ে তাঁর কোনও গোঁড়ামি নেই। তিনি বয়সবিধি কার্যকর করতে চান। কিন্তু সেখানে কাজ, সেখানে সক্রিয়তার মূল্যায়ন হবে।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে নবীন-প্রবীণ বিতর্কে তপ্ত হয়েছিল তৃণমূলের অন্দর। প্রথম সারির একাধিক নেতা প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন এই মর্মে যে, কেন সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রবীণদের প্রার্থী করা হবে? তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বয়স তত্ত্বে বিশ্বাস করেন না। তিনি তখনই প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘‘মনের বয়সটাই আসল!’’ কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছিল, রাজ্যের ৪২টি লোকসভার মধ্যে ৩৯টি কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীর জন্য (ডায়মন্ড হারবারে তিনি নিজেই প্রার্থী ছিলেন) প্রচারে গেলেও তিনটি কেন্দ্রে কোনও প্রচারে অংশ নেননি অভিষেক। ঘটনাচক্রে, সেই তিনটি কেন্দ্র ছিল সৌগতের দমদম, সুদীপের উত্তর কলকাতা এবং কল্যাণের শ্রীরামপুর। লোকসভা ভোটের পর দেড় বছর কাটতে চলল। দেখা গিয়েছে এই দেড় বছরে দীর্ঘ সময়ে অসুস্থ থেকেছেন সৌগত আর সুদীপ। আবার ৭০ ছুঁইছুঁই কল্যাণ সংসদে, নিজের কেন্দ্র শ্রীরামপুরে সক্রিয়। যদিও তাঁকে ঘিরে নানাবিধ বিতর্ক রয়েছে। লোকসভার মুখ্যসচেতক পদ থেকে ইস্তফাও দিয়েছেন তিনি। মাঝে নেত্রী মমতা সম্পর্কেও বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। পরে অবশ্য প্রকাশ্যেই ভুল স্বীকার করে দিদির কাছে মার্জনা চেয়ে নেন কল্যাণ।

তবে বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে বয়সবিধি সংক্রান্ত অভিষেকের ‘ব্যতিক্রমী’ বার্তা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে। তৃণমূলের বর্তমান বিধায়কদের মধ্যে প্রায় ৬০ জনের বয়স ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে। তাঁদের মধ্যে অনেকে যেমন অশক্ত, বয়সের ভাড়ে ন্যুব্জ, নিষ্ক্রিয়, তেমনই আবার শোভনদেব, অশোকেরাও রয়েছেন। তৃণমূলের অনেকের বক্তব্য, অভিষেকের কথাতেই স্পষ্ট যে, বিধানসভা ভোটে প্রার্থী চয়নের ক্ষেত্রে একমাত্র বয়সকেই সূচক হিসাবে ধরা হবে না। তরুণ মানেই তিনি দারুণ আর বৃদ্ধ মানেই তিনি বাদ— এমন সরলীকরণ হবে না। তাঁর অনুগামীরাও যাতে বয়সবিধি নিয়ে একমুখী মনোভাব না-দেখান, দলের অন্দরে সেই বার্তাও দিতে চেয়েছেন অভিষেক।

Abhishek Banerjee West Bengal Politics Tmc Leader
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy