Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Migrant Workers

পরিযায়ী জীবন-যন্ত্রণায় ফিরতে চান না ওয়দুল

নতুন অতিথিকে আঁকড়েই এখন নয়া জীবন শুরু করেছেন পরিযায়ী ওয়দুল আলি মোল্লা।

মেয়ের সঙ্গে ওয়দুল।

মেয়ের সঙ্গে ওয়দুল।

বিশ্বসিন্ধু দে
দাঁতন শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২১ ০৫:৩৪
Share: Save:

থমকে যাওয়া হঠাৎ জীবনে হাঁটতে শুরু করেছিলেন। বাড়ি ফেরার জন্য হাঁটা। ফেরার পথেই পেয়েছিলেন মেয়েকে। নতুন অতিথিকে আঁকড়েই এখন নয়া জীবন শুরু করেছেন পরিযায়ী ওয়দুল আলি মোল্লা। ঘরে ফেরার বর্ষপূর্তি ছিল গত শনিবার। কিন্তু জীবনের চাপে সে কথা ভুলেছেন। দরজির পেশায় মন দিয়েছেন তিনি।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের বাসিন্দা ওয়দুল। স্ত্রী নাজিরাকে নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের এক ইটভাটায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। কাজ ছিল না গ্রামে। সদ্য বিয়ে করা যুবক ওয়দুল উপার্জনের জন্য হন্যে হয়েছিলেন। কিন্তু ইটভাটায় ছ’মাস কাজ করার পর করোনা অতিমারির কারণে লকডাউন হয়ে যায়। ভাটা বন্ধ। উপার্জনহীন ওয়দুল সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে পথে নামেন। বাড়ি ফেরার মরিয়া চেষ্টা। কখনও মালবাহী গাড়িতে চেপে, কখনও হেঁটে পৌঁছে গিয়েছিলেন ওড়িশা-বাংলা সীমানা সোনাকোনিয়ায়। গত বছরের ২৫ মে। প্রয়োজনীয় বিধি মেনে পরের দিন বাড়ি ফিরতে চাওয়া শ্রমিকদের বাসে তোলা হয়। তখনই প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় নাজিরার। দাঁতন থানার পুলিশ তাঁকে দাঁতন গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। হাসপাতালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন নাজিরা।

২৯ মে বাড়ি ফিরেছিলেন পুলিশের সহযোগিতায়। কোলে সদ্যোজাত কন্যাকে নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের মাতৃযানে চেপে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনজন। নাজিরার কাছে সেই দিনগুলো যেন ‘দুঃস্বপ্ন’। ‘‘কষ্টের দিনগুলো কি ভোলা যায়!’’, বক্তব্য নাজিরার। বছর ছাব্বিশের ওয়দুল এদিন বলেন, ‘‘সে যে কী ভাবে ফিরেছি বলতে পারব না। সে সব মনে করলে আজও শিউরে উঠি। সেসব মনে করতে চাই না। একসময় মনে হয়েছিল হয়ত কেউই বাঁচব না। মানুষ আর আল্লা-মালিকের দয়ায় বেঁচে ফিরেছি।’’

বাড়ি ফিরতে পারার বর্ষপূর্তিতে ফোন করা হয়েছিল ওয়দুলকে। বাড়িতে নলকূপ ছিল না। অন্যের বাড়ি থেকে জল আনতে হত। কষ্ট হত নাজিরা ও বৃদ্ধ বাবার। কয়েকদিন আগেই বাড়িতে নলকূপ বসিয়েছেন ওয়দুল। এদিন নলকূপের পাইপের গোড়ায় কোদাল নিয়ে মাটি দেওয়ার কাজ চালাচ্ছিলেন। মোবাইল বাজতেই ফোন ধরলেন। বলেন, ‘‘কল পোঁতা হয়েছে। কাজ করছি। এখন তো কথা বলতে পারব না গো।’’ পরিচয় দিতে চিনতে পারলেন। বলেন, ‘‘পুলিশ, প্রশাসন সবাই সহযোগিতা করেছে। এখন যাই হোক করে চলে যাচ্ছে সংসার।’’ মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরার এক বছর হল যে! প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, ‘‘এমন দিনে ফিরেছিলাম বুঝি। মনে নাই তো!’’

মেয়ের নাম রেখেছেন আফিসা। কাজে ফেরেননি? আঞ্চলিক উচ্চারণ ঘেঁষা বাংলায় ওয়দুল উত্তর দিলেন, ‘‘আর ফিরিনি গো। ইট ভাটায় যে কষ্টের কাজ। তার পর কখন কী হয় বলা যায় না। আর কষ্টের মধ্যে ফিরতে চাই না।’’ জানালেন, সেলাইয়ের কাজ তাঁর শেখা ছিল। এখন সেটাই জীবিকা। মেয়েদের পরিধানের নানান জিনিস তৈরি করেন। সংসার চলে যাচ্ছে।

ফের করোনার বাড়বাড়ন্তে বিধিনিষেধ জারি রাজ্যে। অনেকেই গতবারের আতঙ্কের পর কাজে গিয়েও বাড়ি ফিরেছেন। পরিযায়ী তকমা মুছে ফেলেছেন ওয়দুল ও নাজিরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আর বাইরে যাব না। বেশ ভাল আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Workers COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE