Advertisement
E-Paper

ভেসেল বন্ধ, ব্যস্ত দিনে বাড়ল দুর্ভোগ

সকাল সাড়ে ন’টা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ভেসেল বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। ফলে কাঁথি ও খেজুরির দিকে আটকে পড়েন বহু মানুষ। অফিস টাইমে আচমকা এমন আন্দোলনে ভোগান্তিতে পড়েন স্কুল-কলেজের পড়ুয়া, শিক্ষক থেকে শুরু করে দিনমজুর, অফিস যাত্রীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:১০
রসুলপুর ঘাটে অপেক্ষায় যাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

রসুলপুর ঘাটে অপেক্ষায় যাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

মজুরি নিয়ে ঘাটমালিকদের সঙ্গে ভেসেল শ্রমিকদের দ্বন্দ্বে রসুলপুর- বোগা ভেসেল পরিষেবা বন্ধের কারণে বুধবার হয়রান হতে হল যাত্রীদের।

এদিন সকাল সাড়ে ন’টা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ভেসেল বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। ফলে কাঁথি ও খেজুরির দিকে আটকে পড়েন বহু মানুষ। অফিস টাইমে আচমকা এমন আন্দোলনে ভোগান্তিতে পড়েন স্কুল-কলেজের পড়ুয়া, শিক্ষক থেকে শুরু করে দিনমজুর, অফিস যাত্রীরা।

খেজুরি ও কাঁথির মধ্যে যাতায়াতের সহজ পথ রসুলপুর নদীর উপর ভেসেল পরিষেবা। সেই কারণে প্রতিদিন ভেসেলে চেপে রসুলপুর– বোগা ঘাট পেরিয়ে কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। এ দিন দেশপ্রাণ শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রসুলপুর ঘাটে ভেসেল বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। তাঁদের অভিযোগ, ভেসেল পরিষেবা চালু থাকলেও গত কুড়ি দিন ধরে তাঁরা মজুরি পাননি। তা ছাড়া মজুরি বৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে তাঁরা এ দিন আন্দোলন শুরু করেন। আগে থেকে কোনও খবর না থাকায় এদিন ঘাটে এসে আটকে পড়ে নাজেহাল হন কাজে বের হওয়া মানুষজন। রসুলপুর ঘাটে আটকে পড়া কাঁথির বাসিন্দা এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘কাঁথি থেকে গাড়িতে রসুলপুর এসে ভেসেলে নদী পেরিয়ে ফের গাড়িতে স্কুলে পৌঁছই। কিন্তু এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঘাটেই আটকে পড়ি।’’

স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ, রসুলপুরের এই ঘাটে আগে দুটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা ছিল। সেখানে কাজ করতেন ১০ জন শ্রমিক। রাজ্য পরিবহণ দফতরের উদ্যোগে, সেই নৌকার পরিবর্তে ভেসেল পরিষেবা চালু হয়। এখানে পারাপারের জন্য পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ থেকে দরপত্র দেওয়া হয়। বার্ষিক প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকার চুক্তিতে ঘটা ইজারা নেন মালিকপক্ষ। মালিকপক্ষকে আগের নৌকার ১০ জন শ্রমিককেই ভেসেলের শ্রমিক হিসেবে রাখার দাবি জানানো হয়। মালিকপক্ষ তা মেনে নেন। কিন্তু কাজিয়া বাধে মজুরি নিয়ে।

মালিক পক্ষের দাবি, প্রথমে ওই শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ছিল সত্তর টাকা। তার উপর বাইক-সহ যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের মালপত্র থেকে তাঁদের উপরি আয় হত দৈনিক প্রায় পাঁচশ টাকা। কিন্তু তা নিয়ে যাত্রীদের থেকে অভিযোগ ওঠে। এক বাইক আরোহীকে পার করতে হলে ৫৬ টাকা (ভাড়া ৬ টাকা ও বাইকের জন্য ৫০ টাকা) দিতে হত। যাত্রীদের অভিযোগ পেয়ে দিন কুড়ি আগে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানে ছিলেন খেজুরির বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল, উত্তর কাঁথির বিধায়ক বনশ্রী মাইতি, দুই বিডিও এবং ব্লক সভাপতি। ঠিক হয় বাইক-সহ যাত্রীদের কাছে ৩০টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। ভেসেল শ্রমিকরা তখন দৈনিক চারশ টাকা মজুরি দাবি করেন। রণজিৎবাবু বলেন, “বৈঠকে বলা হয়েছিল ভেসেলে বাইক-সহ যাত্রীদের থেকে উপরি টাকা নেওয়া যাবে না। ঠিক হয় পুরো বিষয়টি রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। মন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। ততদিন শ্রমিকদের কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তার পরিবর্তে শ্রমিকরা বুধবার যে ভাবে ভেসেল পরিষেবা বন্ধ করলেন তা দুর্ভাগ্যজনক।’’

আন্দোলনকারীদের তরফে তারাপদ বারিক বলেন, “মালিক পক্ষ প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকা বার্ষিক চুক্তিতে ঘাটের দরপত্র পেয়েছেন। কিন্তু বছরে তাঁদের আয় হয় প্রায় আশি লক্ষ টাকা। অথচ শ্রমিকেরা এত কম মজুরি পাবেন কেন? আবার মালিক পক্ষ ঘোষণা করেছেন, ১০ জনের মধ্যে অনেককে ছাঁটাই করা হবে। তা হলে শ্রমিকেরা যাবেন কোথায়?’’

ঘাটমালিকদের অন্যতম খেজুরির রাখাল প্রধান বলেন, “শ্রমিকেরা যা খুশি দাবি করলে তা মানা সম্ভব নয়। মজুরি কী হবে তা প্রশাসন ঠিক করবে। আর বার্ষিক আয় আশি লক্ষ টাকা নয়। এটা ভুল তথ্য।’’

বুধবার দেশপ্রাণে বিডিও মনোজ মল্লিক যাত্রী দুর্ভোগের কথা শুনে এলাকায় যান। তিনি আন্দোলনকারী শ্রমিকদের কুড়ি দিনের বকেয়া মজুরির কিছু অংশ এদিন দেওয়ার আশ্বাস দিলে ভেসেল পরিষেবা চালু হয়। খেজুরি-২ এর বিডিও রমল সিং বর্দি বলেন, “ফের ভেসেল পরিষেবা বন্ধ করা হলে যাত্রীস্বার্থে কড়া হাতে তার মোকাবিলা করা হবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy