Advertisement
E-Paper

মমতা-শোভন বৈঠকের পরের দিনই ব্রাত্যের দফতরের তরফে ‘রহস্যময়’ চিঠি পেলেন বৈশাখী! প্রত্যাবর্তনের পথে কাঁটার খোঁচা?

বেনিয়াপুকুর এলাকার মিল্লি আল আমিন কলেজে পড়াতেন বৈশাখী। শুধু সহকারী অধ্যাপিকা নন, তিনি কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা তথা আর্থিক বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকও (ডিডিও) ছিলেন। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বৈশাখী প্রথম বার ইস্তফা দেন।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:১২
Mysterious letter to Baishakhi Banerjee from Higher Education Department after Sovan meets Mamata in Darjeeling, Whispers of a ploy grows inside TMC

(বাঁ দিকে) শোভন চট্টোপাধ্যায়। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

বছর পাঁচেক আগে চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়া এক সহকারী অধ্যাপিকাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। চিঠি আদানপ্রদানের স্থান কলকাতা। কিন্তু তার কাল ও পাত্র জল্পনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, পাত্র (এক্ষেত্রে পাত্রী) অর্থাৎ চিঠির প্রাপকের নাম বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। আর কাল, অর্থাৎ চিঠিটি যে দিন তাঁর বাড়িতে পৌঁছেছে বলে বৈশাখী জানাচ্ছেন, সেটি হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরর সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বৈঠকের পরের দিন। চিঠিতে উল্লিখিত তারিখ অবশ্য তার সওয়া দু’মাস আগের।

মধ্য কলকাতার কলেজে সহকারী অধ্যাপিকা হিসাবে যে তারিখ পর্যন্ত বৈশাখী কাজ করেছিলেন, তার এক বছর আগের তারিখে তাঁর চাকরির পরিসমাপ্তি ঘটেছে বলে ওই চিঠিতে জানিয়েছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দার্জিলিঙে গত ১৫ অক্টোবর বৈঠক হয় কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভনের। তারপরে ১৭ অক্টোবর শোভনকে ‘নিউটাউন কলকাতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ (এনকেডিএ)-এর চেয়ারম্যান পদে নিযুক্তির বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার। ওই দু’টি তারিখের মধ্যে গত ১৬ অক্টোবর উচ্চশিক্ষা দফতরের চিঠিটি পৌঁছেছে শোভনের গোলপার্কের ফ্ল্যাটে। বৈশাখীর কথায়, ‘‘চিঠি পড়ে বিস্মিত হওয়ার একাধিক উপাদান রয়েছে। কিন্তু প্রথমেই অবাক হয়েছি চিঠির উপরে লেখা তারিখ দেখে।’’

চিঠির উপরে ডান দিকে তারিখ লেখা রয়েছে ৮ অগস্ট, ২০২৫। কিন্তু বৈশাখী বলছেন, ‘‘১৬ অক্টোবর সকালে বিশেষ বার্তাবাহকের হাত দিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতর আমাদের ফ্ল্যাটে এই চিঠি পাঠিয়েছে। আমরা তখনও দার্জিলিঙে। সে দিন রাতে কলকাতায় ফিরেছি। চিঠিটি যদি সত্যিই ৮ অগস্টে লেখা হয়ে থাকে, তা হলে গোটা উচ্চশিক্ষা বিভাগ ছুটিতে থাকাকালীন ১৬ অক্টোবর কেন সেটা পাঠানো হল, তা আমার কাছে রহস্যের!’’

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, ‘‘আমি এই রকম কোনও চিঠির বিষয়ে কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

বেনিয়াপুকুর এলাকার মিল্লি আল আমিন কলেজে পড়াতেন বৈশাখী। শুধু সহকারী অধ্যাপিকা নন, তিনি কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা তথা আর্থিক বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকও (ডিডিও) ছিলেন। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বৈশাখী প্রথম বার ইস্তফা দেন। নিয়ম অনুযায়ী পরিচালন সমিতির কাছেই তাঁর ইস্তফা দেওয়ার কথা। কিন্তু সে সময়ে ‘তত্ত্বাবধায়ক’ হিসাবে ওই কলেজ সামলাচ্ছিল অস্থায়ী পরিচালন সমিতি। তাই বৈশাখী সরাসরি রাজ্যের শিক্ষাসচিবকেই ইস্তফাপত্র পাঠান। তার প্রতিলিপি দেন অস্থায়ী পরিচালন সমিতিকে। বৈশাখীর সেই ইস্তফা পরিচালন সমিতি গ্রহণ করে নিয়েছিল। কিন্তু সে বছরের ১৮ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষা দফতর জানিয়ে দেয়, বৈশাখীর ইস্তফা গ্রহণ করার এক্তিয়ার অস্থায়ী পরিচালন সমিতির নেই। ফলে তিনি মিল্লি আল আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা তথা ডিডিও পদে বহালই ছিলেন।

২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর বৈশাখীকে বদলি করা হয় রামমোহন রায় কলেজে। কিন্তু সে কলেজে তিনি কাজে যোগ দেননি। উচ্চশিক্ষা দফতরকে পাল্টা চিঠি লিখে তিনি ফের ইস্তফা দিয়ে দেন। সেই চিঠিতে উচ্চশিক্ষা দফতরের নির্দেশে ‘আইনি ত্রুটি’ সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয়ও বৈশাখী উল্লেখ করেছিলেন।

বৈশাখীর সঙ্গে মিল্লি আল আমিন কলেজের অস্থায়ী পরিচালন সমিতির এই টানাপড়েন যখন চলছিল, তখন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফলে অনেকে মনে করেন, তাঁর নির্দেশেই বৈশাখীর ইস্তফা প্রথমে গৃহীত হয়নি। এক বছর পরে ইস্তফা যখন গৃহীত হয়, তখনও পার্থই দফতরের মন্ত্রী। কিন্তু ২০২১ সালের মে মাস থেকে আবার শিক্ষামন্ত্রী হন ব্রাত্য। সেই জমানায় বৈশাখীর কাছে নতুন করে যে চিঠি এসেছে, তাতে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর নয়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেই বৈশাখী চাকরি ছেড়েছেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা দফতর তাঁকে ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বরের পরেও চাকরিতে বহাল রাখার এবং পরে রামমোহন রায় কলেজে বদলি করার যে সব নির্দেশ আগে জারি করেছিল, সেগুলিকে বাতিল করা হচ্ছে বলেও সাম্প্রতিকতম চিঠিটিতে জানানো হয়েছে।

এর অর্থ হল, শেষ এক বছর বৈশাখী যে বেতন নিয়েছেন, তা তাঁর ‘প্রাপ্য’ নয়। ওই সময়কালে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা তথা ডিডিও হিসাবে তিনি যে সব অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তারও কোনও বৈধতা থাকছে না। সে ক্ষেত্রে বৈশাখীকে এখন এক বছরের বেতন ফেরত দিতে হতে পারে। শেষ এক বছরে তাঁর সিদ্ধান্তে যে সব খরচ হয়েছে, তাও ‘অনধিকার হস্তক্ষেপ’ হিসাবে গণ্য হতে পারে।

শোভন যে দিন মমতার সঙ্গে বৈঠকে বসলেন, তার পরদিন সকালেই বিশেষ বার্তাবাহক মারফত এমন একটি চিঠি বৈশাখীকে পাঠানোর মধ্যে অনেকে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের প্রতিফলন দেখছেন। তাঁদের মতে, তৃণমূলে তথা প্রশাসনে শোভনের প্রত্যাবর্তনকে যাঁরা ‘মসৃণ’ হতে দিতে চান না, এই চিঠির নেপথ্যে তাঁদের অবদান থাকলেও থাকতে পারে।

বৈশাখী বলছেন, ‘‘উচ্চশিক্ষা দফতরকে চিঠি লিখে এই নির্দেশ সংশোধন করার অনুরোধ জানিয়েছি। সংশোধন না হলে আমাকে তো আইনি পদক্ষেপ করতেই হবে।’’ তেমন হলে শোভন যখন রাজ্য প্রশাসনে হাতেকলমে ফিরবেন, প্রায় সেই সময়েই সেই রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতে যেতে হতে পারে বৈশাখীকে!

Baishakhi Banerjee Sovan Chatterjee Bratya Basu Partha Chatterjee Higher Education Department West Bengal Police AITC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy