Advertisement
E-Paper

ত্রাণের সমবণ্টন নিয়ে ধন্দে কর্মীরা

হতাশ সনকা জানান, পাড়ার রাজনৈতিক দলের কর্মী ছেলেপুলেরা কয়েকটি বাড়িতে সাহায্য দিয়েছে। কিন্তু তা নির্দিষ্ট এই দলের লোকেরাই পেয়েছেন।

সুদীপ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২০ ০৭:৫৩
ঘরে খাবার নেই। বসে ত্রাণের আশায়। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

ঘরে খাবার নেই। বসে ত্রাণের আশায়। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

শেষ চৈত্রের ভরদুপুরে কাঠফাটা রোদে মলিন আঁচল দিয়ে মাথাটা কোনও রকমে ঢেকে জাতীয় সড়ক দিয়ে হাসাডাঙ্গা থেকে ধুবুলিয়ার দিকে হাঁটছিলেন ৬৫ বছরের সনকা ঘোষ।

নাতনির মুখে শুনেছেন মহিলাদের অ্যাকাউন্টে নাকি ৫০০ টাকা দিয়েছে সরকার। কিন্তু খোঁজ নিতে চাইলে যেতে হবে সাত কিমি দূরে ধুবুলিয়ায় গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে। লকডাউনে বাস বন্ধ। অগত্যা হেঁটেই ধুবুলিয়া যাচ্ছেন টাকার খোঁজে। হাঁপাতে হাঁপাতে সনকা বলেন, ‘‘ঘরে পাঁচটা লোক। কাজ নেই। সাহায্য বলতে রেশনের দশ কেজি চাল আর মাঝে এক দিন মেম্বার কিছু সাহায্য করেছেন।’’ হতাশ সনকা জানান, পাড়ার রাজনৈতিক দলের কর্মী ছেলেপুলেরা কয়েকটি বাড়িতে সাহায্য দিয়েছে। কিন্তু তা নির্দিষ্ট এই দলের লোকেরাই পেয়েছেন। সনকা বলেন, ‘‘আমরা তো কোনও পার্টি করি না, আমাদের দেয়নি।’’ বাংলার আনাচে-কানাচে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁদের ঘরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও সাহায্য পৌঁছায়নি এখনও। কোথাও কোথাও সরকারি রেশনও নয়।

জানা গেল, অনেক অসুস্থ মানুষ মানুষ রয়েছেন, যাঁরা বাড়ি থেকে বেরোতে পারেন না। তাঁরা প্রায় অভুক্ত— এমনটাই দাবি গ্রামেগঞ্জে ঘুরে কাজ করা বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী ও সেচ্ছাসেবকদের। তাঁদের অনুমান, সরকারি তথা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য সমবণ্টন হচ্ছে না। কেউ কেউ বেশি পাচ্ছেন, কেউ আবার সামর্থ থাকলেও স্বভাবে ত্রাণ নিচ্ছেন। আবার, কারও কাছে কিছুই পৌঁছচ্ছে না।

ধুবুলিয়া এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী লক্ষণ ব্রহ্ম বলেন, ‘‘খুঁজে খুঁজে গ্রামের দুঃস্থ পরিবার চিহ্নিত করে সাহায্য পৌঁছতে গিয়ে কর্মীরা দেখেছেন, সাহায্য দরকার নেই এমন অনেক পরিবারই সাহায্যের দাবি নিয়ে চলে আসছে।’’ তিনি জানান, লকডাউনে জাতীয় সড়কে আটকে থাকা ট্রাক ড্রাইভারদেরও রোজ খাওয়াচ্ছেন লক্ষণেরা। সেটা করতে গিয়েও তাঁরা দেখেছেন রাস্তায় বেড়াতে আসা, বা আশপাশের এলাকা থেকে অনেকেই এসে হাত পাতছেন শুধু বিনামূল্যে খাবার পাওয়ায় সুযোগ পেয়ে।

একই রকম অভিজ্ঞতা চাপড়ার দেবদুলাল বিশ্বাসের বা কালীগঞ্জের ওসমান গনি খানের। দেবদুলাল বলেন, ‘‘আমাদের সংস্থা প্রতিদিন ৭০০ জনের জন্য খিচুড়ি রান্না করছে। প্রত্যন্ত গ্রামে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে গিয়ে দুঃস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে, সেখানে যাঁরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল এমন অনেকেও ছুটে আসছেন সাহায্য নিতে।’’

ওসমান গনি খান কালীগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন ইটভাটায় ঝাড়খণ্ড থেকে আসা শ্রমিকদের হাতে সাহায্য তুলে দিচ্ছেন নিয়মিত। তিনি বলেন, ‘‘ওঁদের তো রেশন কার্ডও নেই। খুব করুণ অবস্থা। সাহায্য করার কেউ নেই।’’ তিনি আরও জানান, শহরাঞ্চলে সাহায্য করার লোক অনেক। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে কেউ কষ্ট করে যেতে চান না, সেখানে মানুষ অনাহারে ভুগছেন।

Krishnanagar Coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy