Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
bus fare

বাসে ব্যয় ৪ হাজার, আয় ৮০০

বৃহস্পতিবার এমনও ঘটনা ঘটল যেখানে যাত্রীর অভাবে খোদ জেলাসদরের বাসস্ট্যান্ড থেকে একাধিক বাস একটিও যাত্রী না নিয়ে গন্তব্যের দিকে যাত্রা করতে বাধ্য হল।

চালু হল বাস, তবে চলছে খুবই কম।। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডে।

চালু হল বাস, তবে চলছে খুবই কম।। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২১ ০৮:১০
Share: Save:

আশঙ্কা ছিলই। এবং দিনের শেষে তা সত্যিই হল।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে জারি হওয়া বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর বেসরকারি বাসের প্রথম দিনের যাত্রা যে খুব একটা মসৃণ হবে না নদিয়ার বাস মালিকেরা গোঁড়াতেই আঁচ করেছিলেন। ভেবেছিলেন অর্ধেক বাস হয়তো চলবে। কিন্তু বস্তুত পক্ষে যাত্রীরা এ দিন বাসমুখো হলেন না। ফলে ৫০ শতাংশ নয় বৃহস্পতিবার প্রথম বেসরকারি বাস চলাচলের দিন নদিয়ায় সব মিলিয়ে বড়জোর ২০ শতাংশ বাস রাস্তায় নামল। বেশির ভাগ বাসই ফাঁকা যাতায়াত করে দিনের প্রচুর টাকা লোকসান করে ঘরে ফিরল।

বাস মালিকদের একাংশ জানান, বৃহস্পতিবার এমনও ঘটনা ঘটল যেখানে যাত্রীর অভাবে খোদ জেলাসদরের বাসস্ট্যান্ড থেকে একাধিক বাস একটিও যাত্রী না নিয়ে গন্তব্যের দিকে যাত্রা করতে বাধ্য হল। ফলে পরবর্তী দিন গুলিতে বেসরকারি বাস চলাচল প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল প্রথমেই। যদিও মালিকপক্ষের একাংশের আশা হয়তো প্রথম দিন বলে এই ছবি। ক্রমশ যাত্রী সংখ্যা বাড়তে পারে। যদিও বেশির ভাগ বাসকর্মী উল্টোটাই মনে করছেন। এ প্রসঙ্গে নদিয়া জেলা বাসমালিক সমিতির সভাপতি কুণাল ঘোষ বলেন, “বৃহস্পতিবার শুরুর দিনে জেলা জুড়ে বিভিন্ন এলাকা ভেদে ১০-২০ শতাংশ বাস চলাচল করেছে। যাত্রীসংখ্যা খুবই খারাপ ছিল। হয়তো প্রথম দিনে মানুষের দ্বিধা ছিল বলে আসেননি। আমরা রবিবার পর্যন্ত বিষয়টা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।”

অন্য দিকে রানাঘাট বাস মালিক সমিতির চেয়ারপার্সন মদন দাস বলেন, ‘‘রানাঘাট থেকে চলাচল করা কমবেশি ১২০টি বাসের মধ্যে গোটা কুড়ি বাস প্রথম দিন চলেছে। তবে আমরা আশা করছি প্রথম দিন তাই মানুষজন কম এসেছেন। পরদিন থেকে যাত্রী সংখ্যা বাড়বে। রানাঘাট, বাদকুল্লা, কৃষ্ণনগর প্রভৃতি এলাকায় বাস ট্রেনের বিকল্প হয়ে উঠবে বলেই বিশ্বাস। যাত্রী সংখ্যাও বাড়বে।” যদিও এ দিন রানাঘাট থেকে চলাচলকারি কোনও বাসেই তেমন যাত্রী ছিল না।

প্রায় দেড় মাস পর এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ স্টিয়ারিংয়ে বসে ছিলেন কৃষ্ণনগর থেকে নোনাগঞ্জ ভায়া হাঁসখালি, বগুলা রুটের বাস চালক রণজয় ঘোষ। বিকেল পর্যন্ত চার ট্রিপ বাস চালিয়ে এ দিন তাঁদের রোজগার সাকুল্যে ৮০০ টাকা। যেখানে সারাদিনের খরচ হয়েছে প্রায় ৪০০০ টাকা। তিনি বলেন, “এ অবস্থা চললে বড়জোর দুটো দিন দেখব। তারপর বাস আবার বন্ধ করে দিতে হবে। আসলে মানুষ বাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ ভাবে চলতে পারে না।” একই অভিজ্ঞতা কৃষ্ণনগর-শান্তিপুর-রানাঘাট রুটের কনডাক্টর বাপ্পা সরকারের। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় বেরিয়ে দুপুর ২টোয় ট্রিপ শেষে বাপ্পার সংগ্রহ ১২০০ টাকা। যেখানে সারাদিনে খরচ হয়েছে ২৩০০ টাকা। তাঁর কথায় “প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা লোকসান করে বাস চালানো মালিকের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা আরও দু’দিন দেখব। তারপর হয়তো বন্ধ করে দিতে হবে।”

কেন যাত্রী হচ্ছে না বাসে?

জবাবে বাসের সঙ্গে যুক্তদের বক্তব্য স্থানীয় বাস চলে স্থানীয় যাত্রী নিয়ে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে লকডাউন, বিধিনিষেধ ইত্যাদির জন্য যাত্রীদের একটা বড় অংশ অন্য বিকল্প যান, যেমন টোটো, অটো বেছে নিয়েছেন। স্বল্পপাল্লার নিয়মিত যাতায়াতকারীরা অনেকেই কিনেছেন মোটরবাইক বা স্কুটি। বাসের দরকার হচ্ছে না তাঁদের।

বাসমালিক সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য অসীম দত্ত বলেন, “লোকাল বাসের যাত্রীদের দুটো ভাগ। ট্রেন সম্পর্কিত এবং স্থানীয় স্কুল-কলেজ, অফিস আদালতগামী। এদের এক অংশ সকাল এবং রাতে বাস ভরান। দ্বিতীয় অংশের যাত্রীরা একটু বেলার দিক থেকে দুপুর বিকেল পর্যন্ত বাসে যাতায়াত করেন। এই দু’টি ক্ষেত্রেই লাগাতার বন্ধ থাকার ফলে আমরা সিংহভাগ যাত্রী হারিয়েছি। সব কিছু স্বাভাবিক না হলে যাত্রী পাওয়া মুশকিল।” তুলনায় দূরপাল্লার বাসে যাত্রীসংখ্যা ভাল ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bus fare bus owners
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE