Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Bulbul

পাকা ধানে মই দেবে বুলবুল, আশঙ্কা

কার্তিকের শেষ থেকে অঘ্রান চাষিদের কাছে সবচেয়ে কাঙ্খিত সময়। কারণ, এই হেমন্তেই কাটা হয় আমন ধান। পাড়া ভরে ওঠে নতুন ধানের সুগন্ধে। চাষির হাতে আসে পরিশ্রমের অর্থ।

যতটুকু বাঁচানো যায়, সেই চেষ্টায় ঘরমুখী। তবে জমিতেই পড়ে রইল বেশির ভাগ ফসল। শনিবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

যতটুকু বাঁচানো যায়, সেই চেষ্টায় ঘরমুখী। তবে জমিতেই পড়ে রইল বেশির ভাগ ফসল। শনিবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৩৫
Share: Save:

মাঠ ভরা সোনালি রঙের ধান সোনা রোদ্দুরে ঝলমল করছিল। হঠাৎ কোথা থেকে উদয় হল খ্যাপাটে, উদ্দাম এক ঝড়ের। তীব্র গতিতে চার দিক লন্ডভন্ড করে সে ছুটে আসতে লাগল। রোদ্দুর বদলে গেল অবিশ্রান্ত বর্ষণে। মাথায় হাত পড়ল কৃষকের। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর হানায় এত পরিশ্রমের পাকা ধানের সর্বনাশ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে রয়েছেন তাঁরা। নদিয়ার উপ-কৃষি অধিকর্তা রঞ্জন রায় চৌধুরী শনিবার দুপুরে বলেন, “এখনই কোনও মন্তব্য করার সময় আসেনি। আমরা অবস্থার প্রতি সতর্ক নজর রাখছি।”

কার্তিকের শেষ থেকে অঘ্রান চাষিদের কাছে সবচেয়ে কাঙ্খিত সময়। কারণ, এই হেমন্তেই কাটা হয় আমন ধান। পাড়া ভরে ওঠে নতুন ধানের সুগন্ধে। চাষির হাতে আসে পরিশ্রমের অর্থ। কিন্তু বুলবুলের জেরে হওয়া অকাল বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ায় বিঘের পর বিঘে সুপুষ্ট ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম। গ্রামবাংলার প্রধান উৎসব ‘নবান্ন’ পুরোপুরি আমন ধান নির্ভর। ধান কেটে গোলাজাত করার পরেই শুরু হয় নবান্ন উৎসব। আনন্দে মেতে ওঠেন গ্রামের মানুষ। এ বার সোনালি ফসল ঘরে তোলার মুখেই বুলবুল তাতে মই দিল। আকাশে জমা মেঘের ছায়া পড়েছে চাষির মুখেও। নবান্নের সব আনন্দ শেষ হয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।

শুধু আমন বলে নয়, অসময়ের ঘূর্ণাবর্তে মাঠে থাকা শীতকালীন ফসল, আলু, পেঁয়াজ, ডাল শস্য, তৈলবীজ, ফল, ফুল— সবই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন কৃষক থেকে কৃষিবিশেষজ্ঞ, সকলেই। এখন মাঠে রয়েছে লঙ্কা, বেগুন, পটল, কপি, কলাইয়ের মতো ফসল। শনিবার বিকেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে ইদ্রাকপুরের পরেশ ঘোষ, হোগলবেড়িয়ার সাধন প্রামাণিকদের আফশোস যাচ্ছিল না। বলছিলেন, ‘‘বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়ায় মাথা ভারি ধানগাছ জমিতে পড়ে যাবে। তাতে ধানের মারাত্মক ক্ষতি হবে। শুধু বৃষ্টি হলে ক্ষতি অনেক কম হতো।”

বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়ে বাংলার উপকূল ধরে এগিয়ে আসছে শুনেই প্রমাদ গণেছিলেন রাজ্যের চাষিরা। শুক্রবার সন্ধেবেলা থেকে জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে নাগাড়ে বৃষ্টি। শনিবার সকাল থেকে সেই সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। আমন থেকে আনাজ, ফুল থেকে ফল— যাবতীয় ফসলের বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কায় ত্রস্ত চাষিরা। তেহট্ট দু-নম্বর ব্লকের সহ-কৃষি আধিকারিক বিপ্লব বিশ্বাসের কথায়, “আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাষ অনুযায়ী, এই বৃষ্টি যদি মাত্র দু’ দিন হয় এবং ঝড়ো হাওয়া না-বয়, তা হলে রবিচাষের পক্ষে খারাপের থেকে ভাল হবে। বৃষ্টির ফলে ধানের শোষক পোকা নষ্ট হবে। ধানেরও উপকার হবে। তবে দুর্যোগ বেশি হলে চাষের ক্ষতি হবে।” পার্শ্ববর্তী বর্ধমানে সহ কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষের আশঙ্কা, “যদি এই ভাবেই আরও আটচল্লিশ ঘণ্টা দুর্যোগ চলতে থাকে তা হলে আমনের সঙ্গে আনাজের

বাজারেও প্রভাব পড়বে।”

কেচুয়াডাঙার চাষি হারান স্বর্ণকারের কথায়, “এলাকার বহুচাষি বাঁধাকপি, ফুলকপির মতো শীতকালীন আনাজ চাষ করছেন। কেউ-কেউ এখনও চারা বসাচ্ছেন। এই বৃষ্টিতে সব নষ্ট হবে। টানা দু’-তিনদিন বৃষ্টি হলে পটল, বেগুন চাষও মার খাবে।” করিমপুরের গোয়াসের রসুন চাষী ভুবন মজুমদারের কথায়, “জমিতে সদ্য লাগানো পেঁয়াজে জল জমে গেলে বীজ পচে যেতে পারে। এই এলাকার সর্বত্র রসুন বীজ লাগানোর কাজ চলছে। এই বৃষ্টিতে তা থমকে গেল।” চাষিরা জানাচ্ছেন, এই নিয়ে চলতি বছরে তাঁরা পর-পর পাঁচটি চাষে ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছেন।

চাকদহের সরাটির বাসিন্দা নুর ইসলাম মণ্ডল বলেন, “শীতের ফসল সব শেষ। কপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন আনাজ আর মাঠে থাকল না। সরষের ভালই ক্ষতি হবে।”

চান্দুরিয়া-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সাত্তার মণ্ডলের আক্ষেপ, ‘‘পেঁয়াজ, মুলো,ঝিঙে, উচ্ছে লাগিয়েছিলাম। সব শেষ হয়ে যাবে। ৪-৫ দিনের মধ্যে যে সব বীজ লাগানো হয়েছে, কিচ্ছু থাকবে না।” ধানতলার থানার নোকারি ফুল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তথা বিশিষ্ট ফুল চাষি জ্যোতির্ময় মজুমদারের মত, “শনিবার বৃষ্টি থেমে গেলে সে ভাবে ক্ষতি হত না। কিন্তু, এই বৃষ্টিটা রবিবারও চললে আর রক্ষা

থাকবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE