গ্রুপ ডি কর্মীর নাম সানন্দা। সম্প্রতি তার নিয়োগ হয়েছে কল্যাণীর পান্নালাল ইনস্টিটিউশনে। সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা এই দীর্ঘাঙ্গিনী এক যন্ত্রমানবী। ক্লাসঘরে গিয়ে নোটিস, হাজিরা খাতা, জল পৌঁছে দেওয়া, টিচার্স রুমে শিক্ষকদের ফাইলপত্র এগিয়ে দেওয়া— সবই করতে পারবে সে।
স্কুলগুলিতে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মীর নিয়োগ নেই বহু দিন। ২০১৬ সালে নিযুক্ত গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মীদের চাকরি বাতিল হয়েছে। ফলে স্কুলগুলিতে এখন তীব্র কর্মী সঙ্কট। পান্নালাল ইনস্টিটিউশনেও পাঁচ জন গ্রুপ ডি কর্মীর মধ্যে রয়েছেন দু’জন। ক্লাসঘরে নোটিস দেওয়ার মতো সাধারণ কাজও অনেক সময়ে করতে পারা যায় না। মুশকিল আসান হিসেবে রক্তমাংসের গ্রুপ ডি কর্মীর জায়গায় তাই যন্ত্রমানবী সানন্দাকে এনেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সোমবার সানন্দার নিয়োগের দিনে টিচার্স রুমে রোবট-দিদিকে দেখতে ভিড় জমে ছাত্রদের। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সৌদীপ্ত দাস জানান, তাঁদের দোতলার টিচার্স রুম-সহ আটটি ক্লাসঘরে সানন্দা ঘোরাফেরা করবে। দোতলার মেঝেয় একটি লাইন বসানো হচ্ছে। সেই লাইন ধরেই হাঁটবে সানন্দা। বাংলা বা ইংরেজিতে মুখে-মুখে নির্দেশ শুনে বা টাচ স্ক্রিনের স্পর্শে আদেশ পালন করবে। ৮-১০ কিলোগ্রাম ওজনের ভার বহনেও তার অসুবিধা নেই। হায়দরাবাদের একটি সংস্থার নির্মিত রোবটটির দাম দু’লক্ষ টাকা। সরকারি স্কুলগুলিতে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, সেখানে এত টাকা দিয়ে রোবট তারা কী ভাবে পেল? স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমেনচন্দ্র ভাওয়াল জানান, মেধাবী প্রাক্তনী সন্দীপ মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া উপহার এই সানন্দা। রমেন বলেন, “স্কুলের উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছে দরবার করে তেমন লাভ হয়নি। তবে সন্দীপের মতো কৃতী প্রাক্তনী স্কুলের সহায়। স্কুলকে ভালবেসে সন্দীপ আরও দুটো ক্লাস ঘর এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জেনারেটরের বন্দোবস্তও করে দিয়েছেন।”
সন্দীপ ১৯৯০ সালে পান্নালাল স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। তার পরের আইআইটি খড়্গপুর, আইআইএম আমদাবাদের পাট চুকিয়ে তিনি এখন দুবাইয়ে কর্মরত। দুবাইয়ে সন্দীপের নিজস্ব তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা আছে। নিজের পুরনো স্কুলে বসে এ দিন তিনি বললেন, “নিজের স্কুল নিয়ে তো আবেগ থাকবেই! যন্ত্রমানবীকে দেখে ছাত্রদের বিজ্ঞানে ঝোঁক নিশ্চিত বাড়বে।”
সৌদীপ্ত জানান, জেলার একটি রেস্তরাঁয় রোবটকে কাজ করতে দেখে তাঁদের স্কুলের কাজে রোবট নিয়োগের বিষয়টি মাথায় আসে। হায়দরাবাদের সংস্থার সঙ্গে কথা বলার পরে তাঁরা সন্দীপের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই শিক্ষকের কথায়, “রোবটের জন্য এককালীন দু’লক্ষ টাকা খরচ হলেও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ খুব কম। বলা যায়, সারা বছরে এক জন গ্রুপ ডি কর্মীর পিছনে এর থেকে ঢের বেশি খরচ হয়। আবার রোবট তো ছুটিও চাইবে না।”
প্রধান শিক্ষক রমেনচন্দ্র অবশ্য বলছেন, “যন্ত্রমানবীকে রক্তমাংসের মানুষের বিকল্প হিসেবে দেখছি না। কিন্তু স্কুলে শিক্ষাকর্মীর আকাল পরিস্থিতিই তো আমাদের রোবট নির্ভর করে তুলছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)