Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Murshidabad

Illegal gratification case: তৃণমূলের তহবিলে জমা পড়ত টাকা, বিধায়ক তাপসকেও দিত, বলছে ধৃত প্রবীরের পরিবার

যদিও পিয়ালি-সাধনদের এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন তেহট্টের বিধায়ক। তাপস দাবি করেছেন, প্রবীর তাঁকে একটি টাকাও দেয়নি।

নিজের বিধানসভা এলাকার মানুষ হিসেবেই তাকে চিনতেন বলে তাপসের দাবি।

নিজের বিধানসভা এলাকার মানুষ হিসেবেই তাকে চিনতেন বলে তাপসের দাবি। প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
খাসপুর শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২২ ১৭:১৩
Share: Save:

এলাকার মানুষজন প্রবীর কয়ালকে বিধায়কের আপ্ত সহায়ক বলেই চেনেন। নদিয়ার তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহা যদিও আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সেই প্রবীরকে নিজের আপ্ত সহায়ক বলে মেনে নেননি। নিজের বিধানসভা এলাকার মানুষ হিসেবেই তাকে চিনতেন বলে তাপসের দাবি। এ বার সেই প্রবীরের পরিবার তাপসের বিরুদ্ধে মুখ খুলল। ধৃতের স্ত্রী এবং শ্বশুর-শাশুড়ির দাবি, প্রবীর টাকা তুলে নিজের কাজেই শুধু ব্যবহার করেনি, নিয়মিত দলীয় তহবিলে জমা দিয়েছে। এমনকি তাপসের জন্যও সে গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রচুর টাকা খরচ করেছে। অন্যান্য কাজেও তাপসকে টাকা দিত প্রবীর। তেহট্টের বিধায়ক যদিও দাবি করেছেন, প্রবীর তাঁকে একটি টাকাও দেয়নি।

গত শুক্রবার আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে রাজ্য পুলিশের দুর্নীতিদমন শাখা প্রবীর-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে। প্রবীরের শ্বশুরবাড়ি তেহট্টের খাসপুরে। সেখানে স্ত্রী, চার বছরের ছেলের সঙ্গে তার শ্বশুর-শাশুড়িও থাকেন। শ্বশুর সাধন বিশ্বাস টোটো চালিয়ে সংসার চালান। দিনে গড়ে ২০০ টাকা রোজগার। কিন্তু বাড়িতে ঢুকলে অন্য বৈভব দেখা যায়। সবই জামাইয়ের টাকায় বলে সাধনের দাবি। সোমবার সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, দাওয়ায় বসে রয়েছেন প্রবীরের স্ত্রী পিয়ালি। কোলে বছর চারেকের ছেলে সৃজন। প্রবীরের কথা উঠতেই কেঁদে ফেললেন। বললেন, ‘‘বাড়িতে অনেক মানুষ আসা-যাওয়া করত। টাকাপয়সার লেনদেনও হত। কিন্তু এ বিষয়ে জানতে চাইলেই মারধর করত।’’

মারধরের অভিযোগ যদিও একা পিয়ালি নন, করছেন তাঁর মা-বাবাও। প্রবীরের শ্বশুর সাধন তাঁর স্ত্রী শেফালির হাত-পায়ের কালশিটের দাগ দেখিয়ে অভিযোগ করছেন, ‘‘প্রশ্ন করলেই মারধর করত আমাদের। এখনও রক্ত জমাটের দাগ মিলিয়ে যায়নি।’’

তবে প্রবীর এ সব নিয়ে কিছু না বললেও সাধনের দাবি, তাঁরা সবই বুঝতে এবং জানতেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘টাকা কি সব ও একা খেয়েছে! পার্টি ফান্ডে টাকা দিত নিয়মিত। বিধায়ক তাপস সাহার ভোটের সময়েও খরচ করেছে। এ ছাড়া তাপসের ব্যক্তিগত কাজের জন্যও অনেক খরচা করতে হত প্রবীরকে।’’ শেফালি যোগ করলেন, ‘‘আমরা ওকে বার বার বলেছিলাম সব ছেড়ে দাও। কিছু বললেই ও বলত, আমার কিছু হবে না। আমার উপরে বড় হাত আছে।’’

সাধনের দাবি, হাওড়ার উলুবেড়িয়ার কাছে একটি গ্রামে প্রবীরের জন্ম। অল্প বয়সেই হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয় সে। তার পর কিছু দিন কাজ করেছে ডানকুনির একটি কারখানায়। সেই সূত্রেই পরিচয় হয় তেহট্টের বাসিন্দা সুব্রত সর্দারের সঙ্গে। সেই সুব্রতের মধ্যস্থতায় সাধনের মেয়ে পিয়ালির সঙ্গে দেখেশুনে বিয়ে হয় ২০১৬-য়। তার পর থেকে শ্বশুরবাড়িতেই ঘরজামাই থাকত প্রবীর। প্রথম দিকে প্রবীর নিজেকে হোটেল ও কারখানার মালিক বলে নিজের পরিচয় দিয়েছিল সাধনকে। পরে জানায়, সে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে যোগ দিয়েছে। প্রতি সোমবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত। ফিরত শনিবার সন্ধ্যায়। সপ্তাহের মাঝে এক বারও ফিরত না বাড়িতে।

খাসপুরে মুদিখানার দোকান রবীন মণ্ডলের। তিনি সোমবার বলেন, ‘‘আমরা এত দিন ভয়ে কিছু বলিনি। নিজেরা তো দেখেছি, বিধায়ক তাপসের ছায়াসঙ্গী ছিল প্রবীর।’’ রবীন ছাড়াও খাসপুরের অনেকেই বলছেন, তাপসের সঙ্গে দেখা করার ‘অ্যাপোয়েন্টমেন্ট’ হোক বা নানাবিধ শংসাপত্র— প্রবীরের অনুমতি ছাড়া কোনওটাই মিলত না বেলে দাবি রবীনের। সাড়ে তিন বছর আগে প্রবীরের ছেলের অন্নপ্রাশনের এলাহি আয়োজনেও প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন বিধায়ক তাপস। রবীন বলছেন, ‘‘অভিভাবকের মতো সারাটা দিন বিধায়ককে সব কিছুর ব্যবস্থাপনায় দেখা গিয়েছিল।’’

স্থানীয় তেল ব্যবসায়ী তিলক ঘোষের দাবি, বিধায়কের গাড়ির জ্বালানি তাঁর পাম্প থেকেই ভরা হত। তিনি বলেন, ‘‘তাপসবাবুর গাড়ির জন্য যা তেল প্রয়োজন হত, তা আমার কাছ থেকেই নিতেন প্রবীর। বিলও শোধ করতেন উনি।’’ তিলকের পাম্পের এক কর্মচারী জানান, বিধায়ককে কিছু দিন আগে পর্যন্ত কালো রঙের যে বিলাসবহুল গাড়িতে চড়তে দেখা যেত, সেটা প্রবীরের স্ত্রীর নামেই কেনা। পিয়ালিও বলছেন, ‘‘ওই গাড়ি আমার নামে কেনা বলে আমিও জানি।’’

সাধনদের প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত এনভিএফ-কর্মী বুদ্ধদেব মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘এলাকার ভোটে তাপসের হয়ে খুব খেটেছিল প্রবীর। গভীর রাতে প্রায়ই ওর বাড়িতে দামি দামি গাড়ি ঢুকত। তবে কারা আসত বলতে পারব না।’’

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত তিন বছরে প্রবীরের উত্থান উল্কার মতো। সাধন বলছেন, ‘‘মুড়ি-মুড়কির মতো টাকা ওড়াত। তিনটে বাড়ি। ৮ বিঘা কৃষি জমি। আমি তো দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। টোটো চালাই। এ সবই তো প্রবীরের করা।’’

যদিও পিয়ালি-সাধনদের এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন তেহট্টের বিধায়ক। আনন্দবাজার অনলাইনকে তাপস বলেন, ‘‘প্রবীর আজ পর্যন্ত একটা টাকাও আমাকে দেয়নি। কোনও দিনও না। আর ওর পরিবারের লোকজন কী বলছে, তা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE