E-Paper

নেটে লেনদেনের জন্য ছুটতে হচ্ছে পাশের জেলার কাছে

সাধারণ মানুষ যেমন পকেট থেকে স্মার্টফোনটা বের করে বারকোডের সামনে ধরতে পারছেন না, তেমন ভাবে ছোটখাট ব্যবসায়ীরাও নগদ অর্থের অভাবে বেচাকেনা করতে গিয়ে পড়ছেন বিপাকে।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৮
নেট হীন মুর্শিদাবাদ। নেটের জন্য নদিয়া সীমান্তে ডোমকলের কুশাবাড়িয়া ঘাটের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত নেটে।

নেট হীন মুর্শিদাবাদ। নেটের জন্য নদিয়া সীমান্তে ডোমকলের কুশাবাড়িয়া ঘাটের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত নেটে। ছবি : সাফিউল্লা ইসলাম।

নোট বন্দির মতোই 'নেট-বন্দিতে' মুশকিলে পড়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলার সাধারণ মানুষ। যে সময় ফুচকাওয়ালা থেকে চায়ের দোকানে অনলাইন পরিষেবার মাধ্যমে টাকার লেনদেন হয়, যে সময় দেশের সরকার চাইছে ক্যাশলেস ইন্ডিয়া, ঠিক সেই সময়ে, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হওয়ার ফলে অনলাইনের মাধ্যমে হওয়া যাবতীয় পরিষেবা থমকে গিয়েছে মুর্শিদাবাদ জুড়ে। সাধারণ মানুষ যেমন পকেট থেকে স্মার্টফোনটা বের করে বারকোডের সামনে ধরতে পারছেন না, তেমন ভাবে ছোটখাট ব্যবসায়ীরাও নগদ অর্থের অভাবে বেচাকেনা করতে গিয়ে পড়ছেন বিপাকে। তা ছাড়াও, বর্তমানে যাবতীয় কারবার চলে অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে। ফলে ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন চরম সঙ্কটে। অন্য দিকে সঙ্কটে পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবার। কারণ হঠাৎ করেই নেট-বন্দির ফলে ভিন্ রাজ্য থেকে মোবাইলের মাধ্যমে টাকা পাঠানো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ায় অর্থ সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হয়েছে অনেক পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারকে।

এই পরিস্থিতিতে ডোমকলের অচিনতলা এলাকার বাসিন্দা শামীম খান ভিন্ রাজ্যের সঙ্গে ব্যবসা করেন জুট হ্যান্ডিক্রাফট সহ আরও বেশ কিছু সামগ্রীর। তাঁর দাবি, ‘‘গোটা ব্যবসাটাই চলে অনলাইনের মাধ্যমে। আমাদের মাল পাঠানো থেকে অর্থ নেওয়া সবটাই ইন্টারনেট নির্ভর। রবিবার থেকে কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত বুধবার নদিয়ার সাহেবপাড়া সীমান্তে গিয়ে যাবতীয় কাজকর্ম সেরে এসেছি।’’

এই একই অবস্থা আরও অনেকের। তাঁরা চুটছেন কখনও বীরভূমের দিকে, কখনও নদিয়ার দিকে। উত্তর মুর্শিদাবাদে অনেকে যাচ্ছেন মালদহ বা ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে মোবাইলে টাওয়ার পাওয়ার জন্য। এক যুবক বলেন, ‘‘মোটরবাইকে করে অনেকটা পথ এসে ল্যাপটপে সব লেনদেনের কাজ করলাম।’’ আর এক জন বলেন, ‘‘আমাকে ঘর ছেড়ে পাশের জেলায় আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। নেট ফিরলে বাড়ি ফিরব। না হলে ব্যবসায় বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’’

বিষয়টি নিয়ে মহকুমা প্রশাসনের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে ডোমকল ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে। ডোমকল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘‘ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ফলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দ্রুত এই পরিষেবা চালু করে সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ীদের মুক্তি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি প্রশাসনের কাছে।’’ ডোমকলের মহকুমা শাসক শুভঙ্কর বালা বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি আমার কাছে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে এনেছি।’’

জিএসটি থেকে, আয়কর। জমি রেজিস্ট্রি, থেকে রেকর্ড। এমনকি খাজনা দিতে গিয়েও থমকে পড়ছে সাধারণ মানুষ। পঞ্চায়েত বা পুরসভায় ট্রেড লাইসেন্স করতে গিয়েও হোঁচট খেতে হচ্ছে আমজনতাকে। কারণ এই পরিষেবাগুলো এখন সমস্তই হয়ে থাকে অনলাইনের মাধ্যমে। কত বার আর ছুটে যাওয়া যায় পাশের জেলার কাছে। ছোটখাটো দোকান বা হকারেরাও বারকোড ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইনে লেনদেন করেন ক্রেতাদের সঙ্গে। সেই প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে পড়েছে। তাঁদের পক্ষে কিছুই করার সুযোগ থাকছে না।

তাই এখন রোজ দেখা যাচ্ছে মোটরবাইকের সারি ছুটছে পাশের জেলার দিকে। যেখানে নেট মিলছে, সেখানে থামছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Murshidabad

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy