তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। — ফাইল চিত্র।
কৃষ্ণনগর-করিমপুর রেলপথের আশা ফের উসকে দিলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। মঙ্গলবার একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি দাবি করেছেন, তাঁর তদবিরে এই রেলপথ তৈরির সমীক্ষার জন্য দু’কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
করিমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক মহুয়া ওই ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, ২০১৬ সালে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি এই রেল যোগাযোগ স্থাপনে সচেষ্ট হয়েছিলেন। করিমপুর এই লাইনের প্রান্তিক স্টেশন হবে, ফলে তেমন বাণিজ্যিক পরিবহণ সম্ভব না হওয়ায় রেলমন্ত্রক এতে এত দিন আগ্রহ দেখায়নি। গত বছর ১৮ অক্টোবর রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে দেখা করে তিনি দীর্ঘ বৈঠক করেন এবং চিঠিতে ফের এই প্রস্তাব দেন। ফেসবুকে মহুয়া লিখেছেন, “রেলমন্ত্রক আমার এই ডাকে সাড়া দিয়ে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে কৃষ্ণনগর-করিমপুর রেললাইনের সার্ভের কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
নদিয়ার প্রান্তিক জনপদ করিমপুরে রেল চালানোর দাবি বহু দিনের। তা না হওয়ায় কার্যত কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়কের উপর পরিবহণ সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ১৯০৫ সালে ইস্টার্ন ব???েঙ্গল স্টেট রেলওয়ে কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার ক্যাপ্টেন সি এল ম্যাগনিয়াক এবং মি রেডিস প্রথম কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুর ভায়া করিমপুর রেলপথের সমীক্ষা করেছিলেন। তার পর থেকে বেশ কয়েক বার নানা উদ্যোগ হলেও রেলপথ আজও করিমপুর ছোঁয়নি।
করিমপুরবাসীর আক্ষেপ, কংগ্রেস আমলে রেলমন্ত্রী গনি খান চৌধুরী পরে লালুপ্রসাদ যাদব, রামবিলাস পাসোয়ান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— সকলেই রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব পাওয়ার পরে বিভিন্ন সময়ে এই রেলপথ তৈরির কথা তুলেছেন। লোকসভার অধিবেশনে কাগজপত্র আদান-প্রদান হয়েছে। প্রত্যেক নির্বাচনের আগে মঞ্চের বক্তৃতায় ফিরে এসেছে এই প্রসঙ্গ। কিন্তু ধামাচাপা পড়েছে সমস্ত ফাইল। প্রত্যেক বছর রেলবাজেটের আগে করিমপুর চাতকের মতো চেয়ে থেকেছে, কিন্তু রেললাইন মেলেনি।
স্বাভাবিক ভাবে, মহুয়ার পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় খুশির হাওয়া বয়ে গিয়েছে করিমপুরে। সপ্তাহে প্রায় চার দিন কৃষ্ণনগর যাতায়াত করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী রবি বিশ্বাস। তিনি বলেন, “চেষ্টা যখন শুরু হয়েছে, রেল হয়তো আসতেও পারে। তা হলে এলাকার অর্থনৈতিক মানচিত্রই পাল্টে যাবে।” হরিপুর গ্রামের পান ব্যবসায়ী তপন শর্মা বলেন, “এই এলাকার ভাল পান লখনউ, কানপুর থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেত। গাড়িতে পানের ঝুড়ি নিয়ে গিয়ে বর্ধমান কিংবা শিয়ালদহ থেকে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর ব্যবস্থা ছিল। সরাসরি রেল যোগাযোগ না থাকায় স্থানীয় পান ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সঠিক দাম পাননি বলে চাষিরাও নিরাশ হয়েছেন। রেল এলে এঁরা সকলেই বুকে বল পাবেন।”
বিরোধীরা অবশ্য আসরে নেমে পড়েছেন। সিপিএমের করিমপুর ১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সন্দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সমীক্ষা হবে মানেই কি রেলপথ হয়ে গেল? তৃণমূল সরকার যে ভাবে জমিজট তৈরি করে রেখেছে তাতে নতুন রেলপথ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।” করিমপুর কেন্দ্রে বিজেপির আহ্বায়ক মৃগেন বিশ্বাসের দাবি, "মহুয়া মৈত্রের অনেক আগেই আমাদের সাংসদ জগন্নাথ সরকার সংসদে করিমপুরে রেলপথের দাবি করেছিলেন। এটা পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণণূলের দুর্নীতি ভোলানোর ভোলানোর চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।”
দলের অন্দরে মহুয়া-বিরোধী বলে পরিচিত, করিমপুরের বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায় বলেন, “এই প্রকল্প যদি বাস্তবে রূপ পায়, আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy