Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘ভিন্‌রাজ্যে না গেলে খাব কী?’ প্রশ্ন ওঁদের

আপেল বাগানের ব্যস্ততা থেকে বাড়ি ফিরে এখন তাই কর্মহীন ওঁরা। আসোচনায় ঘুরে ফিরে আসছে কাশ্মীর। তাঁদের ভালবাসা, চলাফেরা, আদব কায়দার কথা। তবে কাশ্মীরের সন্ত্রাসের কথা নেই কারও মুখে। 

বাহালনগর। —ফাইল চিত্র

বাহালনগর। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাহালনগর শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:২৭
Share: Save:

মাঠেই পড়ে রয়েছে কাঁচা-পাকা ধান। ধান কাটাতে এখনও সপ্তাহ দু’য়েক দেরি আছে। প্রতি বছর কাশ্মীর থেকে ওঁরা তাই ঘরে ফেরেন নভেম্বরের শেষ দিকে। কিন্তু এ বারে যেন সেই চেনা নামচাটা বদলে গিয়েছে বাহালনগরের। কাশ্মীরে এখনও গাছে গাছে ঝুলছে লাল আপেল। তবুও মাঝপথে কাজ ফেলে রেখেই ফিরে আসছেন ওঁরা। পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক ও ভয় যেন তাঁদের তাড়া করে নিয়ে আসছে বাহালনগরে।

আপেল বাগানের ব্যস্ততা থেকে বাড়ি ফিরে এখন তাই কর্মহীন ওঁরা। আসোচনায় ঘুরে ফিরে আসছে কাশ্মীর। তাঁদের ভালবাসা, চলাফেরা, আদব কায়দার কথা। তবে কাশ্মীরের সন্ত্রাসের কথা নেই কারও মুখে।

রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী খুরসেদ আলি বলছেন, “কাশ্মীরে জঙ্গি হানার বলি হয়েছে আমার কাকার এক ছেলে। পরিস্থিতি দেখে ফিরে এসেছেন দুই আত্মীয়ও। বাড়িতে এখন বেকার বসে তারা। ধান উঠতে এখনও দু’সপ্তাহ দেরি আছে। কথা ছিল ২০ নভেম্বর নাগাদ সকলে ফিরবে। সব কিছু বদলে দিয়েছে একটি দুর্ঘটনা।”

নেজাম শেখ বলছেন, “এই ঘটনার পরে রাজ্য সরকার নড়েচড়ে বসেছে। তারা বলছে, আর যেন কেউ ভিন রাজ্যে কাজে না যায়। কিন্তু এখানে কাজ কই? আর কাজ যা-ও বা আছে মজুরি কই! কেউ কি সাধ করে বাইরে কাজ করতে যায়? বাহালনগরের ৬০ ভাগ লোকের কোনও জমি নেই। ৩০ ভাগ মানুষের জমি ৫ থেকে ৬ বিঘে। মাত্র ১০ শতাংশ লোকজন কিছুটা সচ্ছল। তাই বাইরে না গিয়ে উপায় কী?”

উমেনা বিবি বলছেন, “বহু পরিবারে মেয়েরা বিড়ি বাঁধে, মুড়ি ভাজে বা কোনও না কোনও কাজ করে। কিন্তু বাহালনগরের মেয়েদের তেমন কোনও কাজও নেই। স্বনির্ভর গোষ্ঠীও সে ভাবে মাথা তুলতে পারেনি গ্রামে। তাই আয়ের সবটাই প্রায় নির্ভর করে পুরুষদের উপর। সেই জন্যই বেশি আয়ের জন্য তাদের ছুটতে হচ্ছে কাশ্মীর, কেরল, ওড়িশায়। ভিন্্ দেশে পড়ে থাকে স্বামীরা, আর তাদের ফেরার অপেক্ষায় অনিশ্চিত আতঙ্কে দিন গোনে গ্রামের মেয়েরা। কখন যে দুঃসংবাদ আসবে কেউ জানি না। ”

কাশ্মীরেই সপরিবারে গিয়ে ব্যবসা করছেন মেহেবুব শেখ। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বাংলা থেকে এত মানুষ যায় অন্য রাজ্যে। অথচ অন্য রাজ্য থেকে বাংলায় আসে কত জন ? খোঁজ নিয়ে দেখুন হিসেবটা মিলবে না।’’ এ দিনই বাহালনগর ছেড়ে কাশ্মীরের পথে রওনা হয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “ঝড় এলে টিনের চালা উড়ে যায়। মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ে। এই বাহালনগরও বহু বার ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে। কিন্তু মাটির বাড়িতে টিনের চালা কি বন্ধ হয়েছে। বেশিরভাগ বাড়িই তো তাই। ঝড় থেমে গেলে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে এই গ্রামও। জমিতে দিনমজুরি করে পেট ভরবে না। তাই কাশ্মীর, কেরল, অসমই আমাদের ভবিতব্য।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bahal Nagar Kashmir Firing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE