E-Paper

কেউ চাইবেন নিরাপত্তা, কেউ পাকা বাড়ি

পাড়ার আমবাগানের পাশে ছোট্ট পাকা মন্দিরের সামনে সবুজ ঘাসের উপর বসেই বিড়ি বাঁধছিলেন মাঝবয়সি লক্ষ্মী পাল।

বিমান হাজরা , সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৫ ০৮:০০
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে তিন সপ্তাহ। কিন্তু এখনও থমথমে জাফরাবাদ। অপরিচিত মুখ দেখলেই স্থানীয় বাসিন্দারা আড়চোখে তাকাচ্ছেন। কেমন যেন সন্দেহের নজর তাঁদের। কিছু জানতে চাইলেও উত্তর দিচ্ছেন ভেবেচিন্তে। কেউ আবার মুখের উপরেই বলে দিচ্ছেন, ‘‘না কথা বলব না।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর আগমনের কারণে নীল বাতির গাড়ি ঘুরপাক খাচ্ছে জাফরাবাদের পাড়া এলাকার সরু ঢালাই রাস্তাতেও। টহল দিচ্ছেন বাহিনীর জওয়ানেরাও। নিহত বাবা-ছেলের বাড়ির সামনে বসে গিয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা, হ্যালোজেন বাতি। দেওয়ালে বড় বড় ফ্লেক্সে সেঁটে দেওয়া হয়েছে, পুলিশকর্তাদের ফোন নম্বর। যা দেখিয়ে বারবারই স্থানীয়রা বলছেন, ‘‘এখন কত কিছুই করছে পুলিশ, অথচ সেদিন ফোনের পরে ফোন করেও দেখা মেলেনি তাদের।’’

পাড়ার আমবাগানের পাশে ছোট্ট পাকা মন্দিরের সামনে সবুজ ঘাসের উপর বসেই বিড়ি বাঁধছিলেন মাঝবয়সি লক্ষ্মী পাল। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো এখানে আসবেন, শুনেছেন? তাঁকে কি কিছু বলবেন?’’ তাঁর উত্তর,‘‘ওঁকে সামনে পেলে অনেক কথাই বলব। বুকের মধ্যে অনেক কিছু জমিয়ে রাখা আছে। যদি সুযোগ হয়, তাহলে সবটাই খুলে বলব। তবে এখন কিছু বলব না।’’ সেখানেই একটু একটু করে এগিয়ে এলেন বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধা অপর্ণা পাল। মোটা কাচের চশমায় ঘোলাটে চোখ। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে সামনেসামনি পেলে আমার ভাঙা ঘরটার কথা বলব। বৃষ্টি হলেই জল পড়ে ঘরের ভিতরে। এখনও পর্যন্ত একটা ঘর পাইনি।’’ লক্ষ্মী-অপর্ণাদের কাছে গোলমালের দগদগে ক্ষতের পাশাপাশি পেটের টান ও মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের গুরুত্ব যে অনেক, তাঁদের কথাতেই তা পরিষ্কার হল। এনটিপিসির এক সময়ের অস্থায়ী কর্মী, ৭২ বছরের দীনবন্ধু প্রামাণিক এখনও ভুলতে পারছেন না সেই দিনের কথা। তিনি বললেন, ‘‘বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে আমরা একসঙ্গে মিলেমিশে থাকি। কখনও এমন চেহারা দেখিনি এই পাড়ার। হঠাৎ সব বদলে গেল।’’ ওই পাড়ায় মুড়ির মিল রয়েছে রাজকুমার দাসের। সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি বললেন, ‘‘আমরা তো রাজ্যপালের কাছেই সব খুলে বলেছি। মুখ্যমন্ত্রীকে আর কী-ই বা বলব! সবাই যদি সায় দেয় তাহলে বলব সে দিনের সেই ঘটনার কথা।’’

এ দিনই রাজ্যের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামান সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী শমসেরগঞ্জে এসে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলবেন। পরে সুতির ছাবঘাটি স্কুল মাঠে বেলা ২টো নাগাদ প্রশাসনিক সভা করবেন।” ধুলিয়ানের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেতবোনা পল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী যেতে পারেন। সেখানকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটাই দাবি, নিরাপত্তা। পুলিশে আমাদের ভরসা নেই। আমরা চাই বিএসএফের স্থায়ী ক্যাম্প। তাহলেই আমরা খুশি।”

শমসেরগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘স্বাধীনতার আগে এবং পরে আমাদের এলাকায় কখনও এমন ঘটনা দেখেনি। আমরা সতর্ক হচ্ছি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি। আশা করি, শীঘ্রই পরিস্থিতি
স্বাভাবিক হবে।’’

জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা প্রতিনিয়ত সকলকে বোঝাচ্ছি, আমরা মিলেমিশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy