মুকুল রায় এবং সত্য়জিৎ বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র।
নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুনের ঘটনায় সোমবার আদালতে হাজিরা দিলেন বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার। যদিও মুকুল রায় ছিলেন গরহাজির। মুকুলের আইনজীবী সুমন রায় তাঁর মক্কেলের উপস্থিতির জন্য আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করেন। এর মধ্যেই এই মামলার নতুন সাপ্লিমেন্টরি চার্জশিট পেশ করেছে সিআইডি। ২০১৯ সালের এই খুনের মামলার ঘটনায় রানাঘাট আদালতে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পেশ করা সাপ্লিমেন্টরি চার্জশিটে বিজেপি সাংসদ জগন্নাথের নাম অভিযুক্ত তালিকায় রাখা হলেও মুকুল রায়কে রাখা হয়েছে ‘সন্দেহভাজন’ তালিকায়।
সরকারি আইনজীবী প্রদীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এর আগেই সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনের মামলার মূল চার্জশিট সিআইডি-র পক্ষ থেকে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছিল । এরপর সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে নাম রাখা হয়েছে জগন্নাথ সরকারের। মুকুল রায়ের নাম রয়েছে সন্দেহভাজন হিসাবে।’’
নিহত সত্যজিতের স্ত্রী রূপালি বিশ্বাস সোমবার বলেন, ‘‘স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে মুকুল রায়ের যোগাযোগ প্রমাণ হলে, শুধু আমি কেন দলও প্রশ্রয় দেবে না এ বিশ্বাস আমার আছে।’’ অন্যদিকে, ‘‘জগন্নাথ বলেন, তৃণমূলের দ্বারা সব কিছুই সম্ভব। তবে আইনের উপর পূর্ণ আস্থা আমার আছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে প্রমাণ হবে আমি নির্দোষ। তবে পুরো বিষয়টি এখন বিচারাধীন রয়েছে তাই বেশি কিছু মন্তব্য করব না।’’
নদিয়ার হাঁসখালি থানার ফুলবাড়ি এলাকায় বাড়ির কাছেই ২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে খুন হয়েছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস । সরস্বতী পুজোর আগের দিন তৎকালীন মন্ত্রী চাকদহের বিধায়ক রত্না ঘোষ করকে নিয়ে একটি পুজো উদ্বোধন করে ফেরার সময় দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে খুন হন সত্যজিৎ। ১০ ফেব্রুয়ারি সত্যজিতের সঙ্গী মিলন সাহা খুনের অভিযোগ দায়ের করেন হাঁসখালি থানায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি তদন্ত শুরু করে । তদন্তে নেমে গ্রেফতার করা হয় মূল অভিযুক্ত অভিজিৎ পুন্ডারি-সহ ৫ জনকে । রানাঘাট মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজের এজলাসে মামলা চলতে থাকে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এফআইআরে সন্দেহভাজন হিসাবে বিজেপি নেতা জগন্নাথ সরকার ও মুকুল রায়ের নাম ছিল । যদিও সিআইডি তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয় । অবশ্য প্রমাণের অভাবে দু’জনকে মামলা থেকে নিষ্কৃতি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল সিআইডি । সেই আবেদনের ভিত্তিতে ১৪ জুন দুজনকে ওই মামলা থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয় । তবে এফআইআরে নাম থাকলেও মূল চার্জশিটে মুকুল এবং জগন্নাথের নাম ছিল না। যদিও তদন্ত চলাকালীন তাঁদের নাম বাদ দেওয়া আইনসঙ্গত হয়নি বলে দাবি করে আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন সত্যজিৎ খুনের অভিযোগকারী মিলন। আদালত সেই আবেদন যুক্তিসঙ্গত বলে জানায় । তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত জারি থাকে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চার দফায় জগন্নাথকে ডেকে ভবানী ভবনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিআইডি। মূল অভিযুক্ত অভিজিতের সঙ্গে সত্যজিৎ খুনের পর টেলিফোনে যোগাযোগ রাখার কারণে জগন্নাথ সরকারের বিরুদ্ধে এই মামলা রুজু হয়েছে বলে জানা যায় আদালত সূত্রে।
কিছুদিন আগে রানাঘাট মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট প্রত্যয়ী চৌধুরীর এজলাসে সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার কৌশিক বসাক সত্যজিৎ খুনের সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেন। সেই চার্জশিটে সত্যজিৎ বিশ্বাসকে খুনের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ এবং ১২০-বি ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে জগন্নাথকে। ফলে এখনও পর্যন্ত সত্যজিৎ খুনের ঘটনায় মোট ৪ জনের নামে চার্জশিট দিল সিআইডি। তার মধ্যে মূল অভিযুক্ত অভিজিতের পাশাপাশি সুজিত মণ্ডল এবং নির্মল ঘোষ রয়েছে জেল হেফাজতে। জগন্নাথের আইনজীবী রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুকুল রায়ের আইনজীবী সুমন রায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy