Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Murshidabad

জল বাড়ছে, গঙ্গাগর্ভে পড়ছে বাড়ি

বিপদসীমার মাত্র ৫০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে বইছে জলস্রোত শমসেরগঞ্জে।আর তাতেই প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে শমসেরগঞ্জের মহেশটোলা গ্রাম। টিকে আছে গ্রামের ১১টি পরিবার।

ভাঙন: শমসেরগঞ্জের প্রতাপগঞ্জে গঙ্গায় ধসে পড়েছে বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

ভাঙন: শমসেরগঞ্জের প্রতাপগঞ্জে গঙ্গায় ধসে পড়েছে বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
শমসেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২২ ০৯:০৪
Share: Save:

জল বাড়ছে গঙ্গায়। বিপদসীমার মাত্র ৫০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে বইছে জলস্রোত শমসেরগঞ্জে।আর তাতেই প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে শমসেরগঞ্জের মহেশটোলা গ্রাম। টিকে আছে গ্রামের ১১টি পরিবার।

পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য প্রতিমা সরকারের কথায়, “যে ভাবে জল বাড়ছে এবং পাড় কেটে একের পর এক বাড়ি ধ্বসে পড়ছে গঙ্গায় তাতে আর হয়ত বড়জোর সপ্তাহ দুয়েক টিকে থাকবে গ্রাম। কেউ ভেবে পাচ্ছেন না, এরপর কোথায় যাবেন তারা?”

একের পর এক পাকা বাড়ি ধসে পড়তে থাকায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাসিন্দারা। শনিবার এক স্থানীয় ব্যবসায়ী সমীর রায়ের পাকা দোতলা বাড়ি যে ভাবে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে, তাতে আরও আতঙ্কে গঙ্গা পাড়ের পাকা বাড়ির বাসিন্দারা। আশ্রয় নিয়েছেন কেউ দূরে ভাড়া বাড়িতে, কেউ বা স্থানীয় স্কুলে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা সত্যম সরকার জানান, ১২৬ ঘরের বসতি মহেশটোলায়। এখন টিকে রয়েছে মাত্র ১১টি পরিবার। নদীতে সমীরবাবুর বাড়ির মতোই ঝুলে রয়েছে অন্তত ১৩টি বাড়ি। বিপদের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে গেছে সকলেই। শেষ সম্বল জানালা দরজাটাও খুলে নিয়ে গেছেন সকলেই। গ্রামে প্রথম বাড়ি ধসে পড়ে ধনপতি রবিদাসের। তারপর টানা এক মাস ৯ দিন ধরে ভাঙন চলছে মহেশটোলায়। বাবু সরকার, কার্তিক সরকার, সুনীল সরকারদের কারও বাড়ি ইতিমধ্যেই ধসে গিয়েছে, না হয় ঝুলে রয়েছে। তাদের বেশির ভাগই রয়েছেন প্রতাপগঞ্জ প্রাথমিক স্কুল, উচ্চ প্রাথমিক, শিশু শিক্ষা, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের আশ্রয় শিবিরে। ৭১টি পরিবার রয়েছে সেই ত্রাণ শিবিরে।

পুজোর সময় থেকে শিবিরে খাবার সামগ্রী দেওয়া বন্ধ হয়েছে। তাই শিবিরে বিড়ি বাঁধছেন অনেকেই। ত্রাণ শিবিরেই পুজো কেটেছে তাদের এভাবেই। বাড়ি ঝুলে রয়েছে বলে আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার জিনিসপত্র গুটিয়ে বাড়ি ছাড়তে শুরু করেন সমীরবাবু। বলছেন, “৫৫ বছর আগে ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে বাবা গোটা পরিবারকে নিয়ে উঠে এসেছিলেন শমসেরগঞ্জের এই এলাকায়। প্রায় ১২৬টি পরিবারের সকলকেই চলে আসতে হয়েছিল সেদিন গঙ্গার ভাঙনে সব কিছু হারিয়ে। গঙ্গা তখন এক কিলোমিটার দূরে। সেই গঙ্গা গিলে খেল আমার বাড়ি। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ভিটে ছাড়া হতে হল গোটা গ্রামকে। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দোতলা বাড়িটা তৈরি করেছিলাম অনেক যত্ন নিয়ে। ভাবতেও পারিনি এই দৃশ্যটাও দেখতে হবে।’’

জঙ্গিপুরের সেচ দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কল্পরূপ পাল বলেন, “মহেশটোলার ওই এলাকায় বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রোখার বহু চেষ্টা হয়েছে। জল কমেও গিয়েছিল গঙ্গায় অনেকটাই। ভেবেছিলাম জল কমলেই ভাল ভাবে কাজ শুরু করা যাবে। কিন্তু হঠাৎ জল বাড়তে শুরু করাতেই ভাঙন এতটা তীব্র হয়ে উঠেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad ganga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE